আম গাছের পরিচর্যা

সঠিক পদ্ধতিতে আম গাছের পরিচর্যা করার উপায় সমূহ জেনে নিন!

আম গাছের পরিচর্যা : আম হলো বাংলাদেশের ফলের রাজা। আম খুবই সুস্বাদু একটি ফল। আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই বিপুল পরিমাণ আম উৎপাদিত হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদিত হয় থাকার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। 

Table of Contents

আম গাছের পরিচর্যা

জাতীয় আম গাছ

আমাদের দেশে আম গাছকে জাতীয় গাছ জাতীয় গাছ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আমগাছ উষ্ণ ও অবউষ্ণম-নীয় অঞ্চলে সাধারণত জন্মে থাকে। আমের উৎপত্তিস্থল হলো ইন্দো-বার্মা অঞ্চলে। ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয় ফল হচ্ছে আম।

আমগাছ অনেক বড় হয়ে থাকে। এটি সাধারণত কমিয়ে ৩৫ থেকে ৪০মিটার পর্যন্ত লম্বা ও ১০ মিটার পর্যন্ত চওড়া হয়ে থাকে। আম গাছ বহু বছর বাঁচে, কিছু কিছু আম গাছ রয়েছে যারা ৩০০ বছর বয়সেও কল দিতে সক্ষম। এদের শিকড় মাটির অনেক গভীরে পর্যন্ত চলে যায়। 

আম গাছ লাগানো 

মোটামুটি স্বাভাবিক একটি গর্ত খনন করে, সেখানে জৈব রাসায়নিক সারের মিশ্রণ করে ১ সপ্তাহ গর্ত রেখে দিতে হবে। এরপর ১ সপ্তাহ পরে চারা রোপন করা যাবে। চারা রোপন করার পর মাটিতে পানি দিতে হবে। 

কোন প্রকারের পশুপাখি যাতে গাছ খেতে বা নষ্ট করতে না পারে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। কচি আম গাছের মতো অবশ্যই ঘন ঘন পানি দিতে হবে। তাহলে গাছে খুব তাড়াতাড়ি শেকর গজাতে পারবে। 

ফলন্ত আম গাছের পরিচর্যা 

আম গাছের ফলন বাড়ানোর জন্য গাছের একটু বাড়তি যত্ন করতেই হবে। বর্ষা আসার আগেই জমি চাষ দিয়ে জমির মাটি উল্টেপাল্টে করে রাখতে হবে। এতে দেখা যায় ঝরে পড়া পাতা ও আগাছা গুলি মাটিতে চাপা পড়ে জৈব সার হয়ে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। 

আমবাগানে বিভিন্ন ধরনের আগাছা জন্মাতে দেখা যায়, কোন অবস্থাতেই আগাছাকে বৃদ্ধি পেতে দেওয়া যাবে না। আগাছা বৃদ্ধি পেলে আমগাছের স্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হবে। আম গাছের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পরগাছা দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো দমন করতে হবে। 

পরগাছার আক্রমণে অনেক সময় আম গাছ মারা যেতে পারে। তাই আম গাছের ফলন বৃদ্ধি করতে হলে অবশ্যই পরগাছা অপসারণ করতে হবে। গৃষ্ম কালে মাটিতে রকম থাকতে পারে এক্ষেত্রে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। 

সার প্রয়োগ 

ফল উৎপাদনের এবং গাছের বৃদ্ধির জন্য সুষম সারের ব্যবহার একান্তই গুরুত্বপূর্ণ। গাছে সুষম সার প্রয়োগের বিভিন্ন নিয়ম আছে। ফলন্ত গাছের আকার, বয়স ও মাটির উর্বরতার উপর নির্ভর করে, সুষম সার প্রয়োগের নির্দেশনা দেয়া হয়ে থাকে। 

বিশেষ করে আম গাছে সার দিতে হয় দুপুর বেলায়। আম গাছের নিচে যেটুকু অংশ ছায়া পড়ে, সেখানে মাটি কুপিয়ে সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। আম গাছে সবচেয়ে বেশি নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। 

অনেকসময় স্প্রে করার মাধ্যমেও আম গাছে সার প্রয়োগ করতে হয়, বোরন, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক এগুলো আম গাছে স্প্রে করা অপরিহার্য। আমের ভালো ফলন পেতে হলে বিভিন্ন মৌসুমে গাছে সুষম সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন।  সঠিক ভাবে পেঁপে গাছের পরিচর্যা জেনে নিন!

আম গাছের পরিচর্যায় সেচ ব্যবস্থাপনা 

জমির উপরের অংশে সার প্রয়োগ করার ফলে মাটির ওপরের ২.৫- ৩.২৫ মিটার অংশকে জমির পানি সংরক্ষণ স্তর ধরা হয়ে থাকে। কিন্তু আম গাছের শিকড় মাটির আরো অনেক গভীরে পর্যন্ত যেতে সক্ষম। 

তাই গ্রীষ্ম মৌসুমে আম বাগানে পানি সেচ দেওয়া অত্যাবশ্যক। আম গাছে গুটি ফলন আসার পর থেকে প্রতি ২০ থেকে ২৫ দিন পর পর ৩/৪ বার করে সেচ দিলে গুটি ঝরে পড়বে না। এতে আমের ফলনও বৃদ্ধি পাবে। 

এরপর থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত যদি মাঝে মাঝে বৃষ্টি না হয়, তাহলে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১ বার করে বাগানের সেচ দিতে হবে। রাবার বাগান জাতে স্যাঁতস্যাঁতে না হয় সেদিকেও বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। 

রোগ দমন ব্যবস্থাপনা 

আম গাছের পরিচর্যা সঠিকভাবে করতে হলে রোগ দমন করতে হবে। সঠিকভাবে রোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কাঙ্খিত ফলন পেতে কোনো বাধা থাকে না। 

অ্যানথ্রাকনোজ 

এই রোগটি আমের পাতা ও ফলে আক্রমণ করে থাকে। পরবর্তীতে আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে গাছের পাতা ঝরে যায় ও ফল পচে মাটিতে পড়ে যায়। এই রোগ থেকে নিরসনের জন্য বোর্দো মিক্সার ০.৩ % হারে ৩/৪ বার স্প্রে করতে হবে।

আমের পাউডারি মিলডিউ 

এই রোগটি ছত্রাক দ্বারা আক্রমণ করে থাকে। এ রোগটি ছোট অবস্থায় ফলের উপর আক্রমণ করে। এর প্রভাবে পল কুঁচকে যেতে থাকে এবং অপরিপক্ক অবস্থায় ঝরে পড়ে যায়। এক্ষেত্রে বাগান সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। থিয়োভিট ০.৩% হারে ফুল ফোটার পূর্বেই বাগানে স্প্রে করতে হবে। 

এছাড়াও আমের বিছা পোকা, ফলের মাছি, আমের হপার, আমের বোঁটা ইত্যাদি রোগ আক্রমণ করতে পারে। এক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। 

ফসল সংগ্রহ 

ফল ধরার ৩ থেকে ৫ মাসের মধ্যেই জাত ভেদে বিভিন্ন সময়ে ফলন আসতে শুরু করে। বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ফল পরিপক্ক হলেই গাছ থেকে পড়ে ফেলতে হবে। ফসল সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই কেমিক্যাল ব্যবহার করা যাবে না। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top