আলু চাষ পদ্ধতি

আলু চাষ এর সঠিক পদ্ধতি জানুন!

আলু চাষ পদ্ধতি : আবহমান সময় ধরে আলু চাষ হয়ে আসছে বাংলায় ৷ অতীত সময়ের চেয়ে বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে এর চাহিদা ৷ পরিবর্তন এসেছে আলু চাষ পদ্ধতিতে ৷ বৈজ্ঞানিক নানা পরীক্ষার পর বর্তমান আলু চাষ পদ্ধতি পেয়েছি আমরা ৷ 

আবার ভবিষ্যতে এই আলু চাষ পদ্ধতিতেও হতে পারে পরিবর্তন ৷ চলুন, এক নজরে আলু চাষ পদ্ধতি ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক ৷ 

আলু কিভাবে চাষ করতে হয়?

আলু চাষ করে কাঙ্খিত সফলতা বা ফলাফল অর্জন করতে চাইলে আলু চাষের জন্য জমি তৈরি থেকে শুরু করে আলু সঠিকভাবে গুদামজাতকরণ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন ৷ 

চাষের জন্য নভেম্বর মাসে জমি নির্বাচন করতে হবে ৷ অতপর সেই জমিতে হাল দেওয়া,  আগাছা দমন, সেচ প্রদান করার পর বীজ বপন করে দিতে হবে ৷

অতপর প্রয়োজন অনুযায়ী কীটনাশক দেওয়া, সার দেওয়া এর মাধ্যমে সুন্দরভাবে আলু চাষ সম্পন্ন করা ৷ আমরা পরবর্তীতে আলু চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো ৷ 

বিভিন্ন জাতের আলুর নাম

বাংলাদেশে সাধারণত ২ ধরণের আলুর চাষ করা হয় ৷ যার একটি হচ্ছে দেশি জাতের আলু ও অপরটি হচ্ছে বিদেশি জাতের আলু ৷

দেশি জাতের আলুর মধ্যে রয়েছে সূর্যমুখী, চল্লিশা, দোহাজারী লাল, ফেইন্তাশীল, হাসরাই, লাল পাকরী, লালশীল, পাটনাই, সাদা গুটি শীল বিলাতী, আউসা ইত্যাদি জাতের উচ্চফলনশীল আলু ৷ 

দেশি জাতের আলুর আবার আরেকটি ক্যাটাগরি রয়েছে ৷ যা কিনা উন্নত জাতের আলু হিসেবে পরিচিত ৷ প্রচলিত যেসব উন্নত জাতের আলুর চাষ হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে ধীরা, আইলসা, হিরা, পেট্রোনিস, ডায়ামন্ট, মন্ডিয়াল, কুফরী সিন্দুরী, মুল্টা, চমক, গ্রানোলা, ক্লিওপেট্রা, চিনেলা ও কার্ডিনাল জাতটি সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে। 

এছাড়াও রয়েছে হাইব্রিড জাতের আলু ৷ হাইব্রিড জাতের আলুর মধ্যে বারি টিপিক্রস-১ এবং বারি টিপিক্রস-২ নামে ২টি হাইব্রিড জাতের আলু বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে উদ্ভাবিত ।

এছাড়াও বারি আলু-১ (হীরা), বারি আলু-৪ (আইলসা), বারি আলু-৭ (ডায়ামন্ট), বারি আলু-৮ (কার্ডিনাল), বারি আলু-১১ (চমক), বারি আলু-১২ (ধীরা), বারি আলু-১৩ (গ্রানোলা), বারি আলু-১৫ (বিনেলা), বারি আলু-১৬ (আরিন্দা), বারি আলু-১৭ (রাজা), বারি আলু-১৮ (বারাকা), বারি আলু-১৯ (বিন্টজে) এবং বারি আলু-২০ (জারলা) ইত্যাদি হাইব্রিড জাতের আলু  প্রচলিত ৷ 

আলুর এসব জাত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট থেকে উদ্ভাবিত। আর এগুলো সবই উচ্চফলনশীল জাত।

আলু চাষ পদ্ধতি

আলু চাষ পদ্ধতি
আলুর জমিতে হাল দেওয়া : 

নভেম্বর মাসে আলু চাষের জন্য নির্বাচিত দোঁ-আশ বা বেলে দোঁ-আশ মাটির জমিতে আলু চাষ করার জন্য হাল দিতে হবে ৷ 

আলুর বীজ বপন : 

অতপর আলুর বীজ সারিতে বপন করে দিতে হবে ৷ আলুর বীজের এক সারি থেরে অপর সারির দূরত্ব হবে ৬০ সেন্টিমিটার করে এবং সারিতে এক বীজ হতে অন্য বীজের দূরত্ব হবে ২৩-৩৮ সেন্টিমিটার ৷

আলুর যে সকল বীজের ব্যাস ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার ; সেই বীজই বপনের জন্য সবচেয়ে ভালো এবং সেসকল বীজকে বপন করার সময় আলাদাভাবে কাটার প্রয়োজন হয় না ৷

জমিতে সার প্রয়োগ পদ্ধতি : 

আলু চাষের জমিতে সার হিসেবে গোবর, অর্ধেক ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও জিঙ্ক সালফেট (প্রয়োজন বোধে) রোপণের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে ৷ এরপর বাকি ইউরিয়া বীজ রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর অর্থাৎ দ্বিতীয় বার মাটি তোলার সময় প্রয়োগ করতে হবে ৷ 

>> এলাচ চাষ পদ্ধতি ও এর উপকারিতা সহ বিস্তারিত জেনে নিন।

মাটি অম্লীয় হলে মাটির জন্য ৮০-১০০ কেজি/হেক্টর অনুপাতে  ম্যাগনেসিয়াম সালফেট এবং বেলে মাটির জন্য বোরন ৮-১০ কেজি/হেক্টর অনুপাতে দিতে হবে ৷

সেচ দেওয়া : 

আলু চাষ পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে জমি সঠিকভাবে সেচ দেওয়া ৷ অনেক চাষী আলুর জমিতে সেচ দেননা ৷ এটা ভুল ৷ আলুর জমিতে অবশ্যই সেচ দিতে হবে ৷ 

আলু চাষের জমি তৈরি

চাষ করতে সর্বপ্রথম জমি প্রস্তুত করতে হয় ৷ আলু চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করতে চাইলে প্রতি বিঘা জমি আবাদ করতে ৬০০ থেকে ৮০০ কেজি বীজ আলুর দরকার হয় । এক বিঘা জমিতে আলু আবাদ করার জন্য প্রয়োজন পরে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও দস্তা সার ৷ যার অনুপাত হচ্ছে যথাক্রমে : ১৩০ কেজি, ৯০ কেজি, ১০০ কেজি, ৬০ কেজি এবং ৬ কেজি ।

তবে জমি তৈরিতে ব্যবহৃত এসব সারের পরিমান জমির অবস্থাভেদে কম-বেশি হতে পারে । এছাড়াও বিঘাপ্রতি অতিরিক্ত ৪-৫ টন জৈব সার ব্যবহার করলে ফলন কিন্তু অনেক বেশি পাওয়া যাবে ।

আলুর জন্য জমি তৈরি করতে আগাছা পরিস্কার করা, প্রয়োজনীয় সেচ দেওয়া, সারের উপরি প্রয়োগ করা, মাটি অলগাকরণ বা কেলিতে মাটি তুলে দেয়া, বালাই দমন করা, মালচিং করা অতি আবশ্যকীয় কাজ । বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই বিনা চাষে মালচিং দিয়ে আলু আবাদ করা যায় ।

আলুর বীজ কোথায় পাওয়া যায় 

আলু চাষ করতে গেলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন পরে বীজের ৷ আলুর ভালো বীজ তাই কোথায় পাওয়া যাবে; এ নিয়ে কৃষকের মনে প্রশ্ন থাকে ৷

আলুর উন্নত ও ভালো বীজ সংগ্রহ করতে গেলে সর্বপ্রথম খোঁজ করুন সরকারি বীজ উৎপাদণ খামারে ৷ নিচে সরকারি বীজ উৎপাদণ খামারের ঠিকানা দেওয়া হলো ৷

সরকারি বীজ উৎপাদ খামার (বিএডিসি) শাখা রয়েছে নীলফামারী, নূরনগর, ইটাখোলা, পাংশা, তাম্বুলখানা, মেহেরপুর, কাশিমপুর, মধুপুর, টেবুলিয়া, দশমিনা, পাথিলা, মধুয়াতে ৷ 

সরকারি এসকল বীজ আবার হাটে,পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে ৷ 

আলুর পাতা কোকড়ানো রোগ

জানা থাকা প্রয়োজন আলুর বিভিন্ন ধরণের রোগ হয় ৷ এরমধ্যে আলুর পাতা কোকড়ানো রোগ অন্যতম ৷ আলুর পাতা কোকড়ানো রোগের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নেই চলুন –

আলুর পাতা কোকড়ানো রোগের লক্ষণ :   

  • আক্রান্ত গাছের পাতা খসখসে, খাড়া ও উপরের দিকে মুড়ে যায় ৷
  • আগার পাতার রং হালকা সবুজ হয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় ৷
  • কখনো আক্রান্ত পাতার কিনারা লালচে বেগুনি রংয়ের হয় ৷
  • গাছ খাটো হয় এবং সোজা হয়ে উপরের দিকে দাঁড়িয়ে থাকে৷ আলুর সংখ্যা কমে যায় ৷

আলুর পাতা কোকড়ানো রোগের প্রতিকার : 

১৷ আলুর রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে ৷

২৷ কীটনাশক হিসেবে (এজেড্রিন, নোভাক্রন, মেনোড্রিন ইত্যাদি) দুই মিলিমিটার অথবা এক মিলিমিটার ডাইমেক্রন, লিটার প্রতি পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর জমিতে স্প্রে করতে হবে ৷

৩৷ আক্রান্ত আলু গাছ টিউবারসহ তুলে ফেলতে হবে ৷

আলুর ফলন বৃদ্ধির উপায়

ফলন বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হচ্ছে আলুর জন্য সবচেয়ে ভালো বীজ বুনা ৷ আলুর জমি সঠিকভাবে প্রস্তুত করা, কীটনাশক ও সার সঠিকমাত্রায় প্রয়োগ করা ৷

আলুর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নিশ্চিত করা ৷ মূলত, সঠিকভাবে আলু চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে আলুর সর্বোচ্চ ফলন নিশ্চিত করা যায় ৷

>> মরিচ চাষ কিভাবে করবেন? মরিচ চাষ পদ্ধতি একনজরে দেখে নিন!

শেষ কথা 

বর্তমানে বাংলাদেশ সমগ্র পৃথিবীতে আলু উৎপাদনে সপ্তম অবস্থায় রয়েছে ৷ যা আমাদের মতো জনবহুল অঞ্চলের জন্য রীতিমত বিস্ময়কর ৷ তথাপি কৃষি বিজ্ঞানে আমাদের সফলতা ও মাঠ পর্যায়ে পৌছে দিতে পারা এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ৷ আলুর ফলন বৃদ্ধির সঠিক উপায় জানুন!

আমাদের জন্য সুযোগ রয়েছে বিদেশে আলু রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার ৷ যার জন্য আমাদের সঠিকভাবে আলু চাষ পদ্ধতির অনুসরণ ও গুদামজাতকরণের উপর জোর দিতে হবে ৷ তাহলেই আলু রপ্তানিতে আমরা কাঙ্খিত ফলাফল লাভ করতে পারবো ৷

>> জিরা কি আসলেই মেদ কমায়? মেদ কমাতে জিরা খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top