গরুর খাবার তালিকা

গরুর খাবার তালিকা সঠিক পদ্ধতি সহ জানুন!

গরুর খাবার তালিকা : গরুর খাবারের ক্ষেত্রে দানাদার মিশ্রণ খুবই জরুরি একটি খাবার। গরুর ওজনের শতকরা ০.৮০-১ ভাগ পরিমাণ দানাদার মিশ্রণ সরবরাহ করতে হয়। চলুন শুরুতে জেনে নিই গরুর খাবার তালিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, দানাদার মিশ্রণ কিভাবে করবেন। 

গরুর খাবার তালিকা

দানাদার মিশ্রণ করার সঠিক নিয়ম কি?

  • তিলের খৈল ২০% বা ২০০ গ্রাম।
  • চালের কুড়া ২৫% বা ২৫০ গ্রাম।
  • কালাই বা ছোলা ২০% বা ২০০ গ্রাম।
  • হাড়ের গুড়া, ঝিনুক গুড়া, চুন ৫% বা ৫০ গ্রাম।
  • লবণ ৫% বা ৫০ গ্রাম।
  • গমের ভূৃষি ২৫% বা ২৫০ গ্রাম।

উপরুক্ত খাবার গুলো মিশ্রিত করে গরুকে খাবার খেতে দিন। গর্ভবতী গাভীর খাদ্য তালিকা সমূহ জেনে নিন!

গরুকে খাবার দেয়ার সঠিক নিয়ম

  • খাদ্য দেয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালোমতো পাত্র ধুয়ে নিতে হবে।
  • উপরে যে দানাদার খাদ্যের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো একসাথে দিবেন না বরং সকালে আর বিকলে ভাগ করে দিবেন।
  • তাছাড়া সব খাবার একসাথে না দিয়ে ওজন অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় ৫-৬ বার করে দিবেন।
  • গরুকে যদি খড়জাতীয় শুকনো খাবার দেয়া হয় তাহলে সাথে সাথে পরিষ্কার পানি দিতে হবে।
  • সরিষার খৈল গরু মোটাতাজাকরণের জন্য বেশী উপকারী। আপনি চাইলে সরিষার খৈল ব্যবহার করতে পারেন।
  • যদি গরুর বদহজম, পেট ফাঁপা অথবা পাতলা পায়খানার মতো হয় তাহলে দানাদার খাদ্য সীমিত সময়ের জন্য বন্ধ রাখবেন। সে সময় কাঁচা সবুজ ঘাস খাওয়াতে পারেন। গরুর কোন রোগের কি ঔষধ জেনে নিন!

গরুর খাবার তালিকায় ঘাসের উপকারীতা

  • স্বল্প খরচে আপনি প্রচুর ঘাস চাষ করতে পারবেন।
  • ঘাস প্রচুর পুষ্টিসমৃদ্ধ হওয়ার কারণে আপনার গরুও স্বাস্থ্যবান হবে।
  • ঘাস খাওয়ালে গরু পর্যাপ্ত পুষ্টির উৎস পাবে, যার কারণে দানাদার খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা কম হবে।
  • যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়ার কারণে রোগ কম হবে এবং খরচ অনেকাংশেই কমে যাবে।

ঘাস না খাওয়ানোর অপকারীতা

  • কাঁচা ঘাস না খাওয়ালে গরু রুগ্ন হয়ে যাবে, রোগব্যাধি বেশী হবে এবং অপুষ্টিতে ভুগবে।
  • রোগ হলে দুধ এবং মাংস কমে যাবে যার কারণে কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হবে।
  • যদি পর্যাপ্ত ঘাস না খাওয়ানো হয় তাহলে মোটাজাতকরন প্রক্রিয়ায় দানাদার খাদ্য বেশী প্রয়োজন হবে যাতে কৃষকের খরচ হবে বেশী।

সর্বোপরি বলা যায়, কাঁচা ঘাস চাষ এবং গরুকে কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর মাধ্যমে কৃষক আর্থিক দিক থেকে অনেকাংশে লাভবান হতে পারে।

গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া

গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় সঠিক তত্ত্বাবধান এবং প্রাণীর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য সুষম মোটাজাতকরন খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খড় খাওয়ানো হয় যাতে পর্যাপ্ত শর্করা, আমিষ, স্নেহ এবং ভিটামিন-মিনারেলের ঘাটতি রয়েছে।

তাই যেটা করতে হবে সেটা হলো, খড়কে ইউরিয়া আর মোলাসাস অর্থাৎ চিটগুড় দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়াতে হবে। এক্ষেত্রে কয়েকটি পয়েন্ট মনে রাখতে হবে 

  1. মোট খাদ্যে দানাদার এবং আঁশজাতীয় খাদ্যের শতকরা পরিমাণ হলো ৪০-৫০% এবং ৫০-৬০%। বোঝা-ই যাচ্ছে যে, ঘাসজাতীয় খাবার বেশী খাওয়াতে হবে।
  2. প্রতিদিন একই সময়, একই ধরণের খাদ্য খাওয়াতে হবে। রুটিনের ব্যতিক্রম করা যাবেনা।
  1. ফর্মান্টেড ভূট্টা খাওয়াতে হবে। সাইলেজ কিংবা ইউএমএস ও খাওয়ানো যেতে পারে।
  1. গরুর খাদ্য হতে হবে সতেজ, টাটকা এবং পরিষ্কার। খাল বা বিলের পানি খাওয়ানো যাবে না।
  1. এমন খাদ্য খাওয়াতে হবে যেগুলো সহজেই হজমযোগ্য অর্থাৎ সহজপাচ্য হতে হবে।

গরুর খাবারের তালিকায় থাকুক পানি!

অনেকেই করেন কি, গরুকে পানি খাওয়াতে হলে কুড়া, গুড়, ভাত ও লবণ যুক্ত করে খাওয়ান। এটা না করে আপনি যে কাজটা করবেন সেটা হলো – গরুকে খালি পরিষ্কার পানি দিবেন।। 

গরুর সামনে সবসময় একটি পরিষ্কার পানির পাত্র রাখবেন যাতে সে ইচ্ছেমতো পানি খেতে পারে। শুকনো খাবার বা খড় খাওয়ার পর এটা অত্যন্ত দরকারী।

গরু যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না খায়, তাহলে তার শরীরে পানিশূণ্যতা দেখা দিবে যার কারণে ওজন কমে যাবে। আরেকটি ইন্টারেস্টিং বিষয় মাথায় রাখতে হবে – সেটা হলো, সন্ধ্যা ৭ টার পর আপনি গরুকে কোনো খাবার দিবেন না!

শেষকথা 

গরুর খাবার তালিকা এবং সঠিকভাবে খাদ্য দেয়ার নিয়ম না জানার কারণে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হন। আশা করছি উপরুক্ত বিষয়গুলো সঠিকভাবে মেনে চলে আপনি ও গরু পালন করে লাভবান হবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top