গাছ লাগানোর পদ্ধতি

গাছ লাগানোর সঠিক পদ্ধতি জেনে নিন!

গাছ লাগানোর পদ্ধতি : গাছ রোপণের জন্য সবচেয়ে আদর্শ সময় হচ্ছে সুপ্ত ঋতু। এই সময় গাছ রোপন করলে শিকর তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে যেতে পারে। বছরের এই সময়টিতে গাছের বৃদ্ধি একটু দ্রুত হয়ে থাকে। সপ্ত মৌসুমে গাছ রোপন করলে অন্যান্য সময়ের চাইতে পরিচর্যা একটু কম করলেও হয়। 

গাছ লাগানোর পদ্ধতি

বৃক্ষরোপন করা

বৃক্ষ আমাদের অনেক বড় উপকারী বন্ধু। আমাদের জীবনধারণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অক্সিজেন এই গাছই সরবরাহ করে থাকে। গাছপালা না থাকলে মানুষের অস্তিত্বও বিলীন হয়ে যাবে। গাছপালা পরিবেশের ভারসাম্যকে সবসময় শিথিল রাখে । যত বেশি গাছ লাগানো যাবে ততো বেশি পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে। 

একটি বিখ্যাত প্রবাদ আছে ‘গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান’। আর পরিবেশ যদি সুরক্ষিত না থাকে তাহলে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। নানা ধরনের ভাইরাস জনিত রোগ সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের একটি সতেজ ও সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে হলে গাছ লাগানোর কোন বিকল্প নেই। কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতা সমূহ জেনে নিন!

কর্তৃপক্ষের একটি বিশেষ নির্দেশ থাকে যে, কেউ যদি একটি গাছ কাটে তাহলে তাকে অবশ্যই দুইটি গাছ রোপণ করতে হবে। আর আমাদের সকলের উচিত অন্তত প্রতি বছরে তিনটি গেছে রোপন করা। ১টি ফলজ, ১টি বনজ ও ১টি ঔষধি। 

জমি নির্বাচন 

প্লাবনমুক্ত উঁচু জমি যেখানে বর্ষার পানি জমে থাকবে না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যেখানে দিনের বেশিরভাগ সময় সূর্যের আলো পড়ে। গবাদি পশুর যাতে জমিতে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। মাটিতে যাতে প্রচুর পরিমাণে জৈব পদার্থ থাকে সে বিষয়টি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। 

বৃক্ষরোপণ

সঠিক গাছ লাগানোর পদ্ধতি অনুসরন করে গাছের চারা লাগালে একদিকে প্রতিটি চারা সুস্থ-সবল ভাবে বেঁচে থাকবে এবং গাছের বৃদ্ধি ও খুব ভালো হবে। এছাড়াও গাছের শিকড় ভালোভাবে মাটি আঁকড়ে ধরে রাখবে। এতে দেখা যাবে পরবর্তীতে ঝড় আসলে গাছ উপড়ে পড়ে যাবে না। 

যদিও আমাদের দেশে অনেকেই সঠিক পদ্ধতিতে গাছের চারা রোপন করে না। এতে দেখা যায় রোপণের পর ২০-২৫% চারা মারা যায়। কিছু কাজ আছে যেগুলোর বীজ সরাসরি মাটিতে বনেও বনায়ন করা যায়। আবার কাটিং পদ্ধতির মাধ্যমে কলম তৈরি করেও রোপণ করা যায়। 

  • উচ্চমানের গাছ কেনা
  • সঠিকভাবে মালচিং কৌশল 
  • গাছ নির্বাচন করা 
  • গাছ এবং উপযোগিতা 
  • গাছের মূল্য নির্ধারণ

চারা গাছের গর্তের পরিমাপ 

চারা গাছ লাগানোর জন্য প্রথমে স্থান নির্বাচন করা প্রয়োজন। নির্বাচিত স্থানের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। গর্তের পরিমাপ ৫০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, ৫০ সেন্টিমিটার প্রস্থ এবং ৫০ সেন্টিমিটার গভীর।  গর্তের মাটি গুড়ো গুড়ো করে নিতে হবে। এরপর গর্তের মধ্যে মাটির সাথে কম্পোস্ট সার মিশিয়ে দিতে হবে। 

প্রতিটি গর্তের মাটির সাথে ২০ গ্রাম টিএসপি, ১০ গ্রাম পটাশ সার দিলে গাছের বৃদ্ধি খুব ভালোভাবে হবে। গর্তটি ভরাট করার পূর্বে লক্ষ্য রাখতে হবে পার্শ্ববর্তী মাটি থেকে যাতে গাছের গোড়া উঁচু থাকে।  চারা লাগানোর দু সপ্তাহ পর ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। 

গাছ লাগানোর কৌশল 

  • চারা লাগানোর একদিন পূর্বে কোদাল দিয়ে গর্তের মাটি উল্টে পাল্টে দিতে হবে।
  • বিকেলবেলা হচ্ছে গাছ লাগানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। 
  • চারা রোপণের সময় খুব সতর্কতার সাথে গর্তে নামাতে হবে, যাতে কোন অবস্থাতেই চারার গোড়ার মাটি সরে ভেঙ্গে না যায়।
  • রপনের পরে গোড়ার মাটি ভালোভাবে চেপে দিতে হবে। 
  • চারা লাগানোর পর পরই মাঠে হালকা করে সেচ দিতে হবে। 
  • অতিবৃষ্টিতে বা কাদাযুক্ত মাটিতে কোনভাবেই চারা লাগানো ঠিক নয়। 
  • চারা লাগানোর সময় সুস্থ, সবল, পরিপূর্ণ সবুজ পাতা নার্সারি থেকে নির্বাচিত করার মাধ্যমে নিয়ে আসতে হবে। 

চারা যদি পলিব্যাগে থাকে তাহলে পলিব্যাগের বাইরে থাকা শিখর গুলো ছেঁটে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে যে চারার শিকড় খুবই স্পর্শকাতর এবং সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে তাই খুব সতর্কতার সহিত রোপণ করতে হবে। 

গাছের যত্ন

মাটিকে সবসময় আদ্র রাখুন। কিন্তুু অতিরিক্ত ভিজিয়ে রাখবেন না বা পানি বেশি দেওয়ার  ফলে পাতা হলুদ হয়ে যেতে পারে। যদি প্রতি সপ্তাহে একবার বৃষ্টি হয় তাহলে আপনার গাছে পানি দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আর খরা মৌসুমে ঘন ঘন পানি দিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী গাছের অতিরিক্ত শাখাগুলো ছাটাই করে দিতে হবে। 

গাছের চারা যদি খুব ছোট হয়ে থাকে, তাহলে তা খুব সহজে গরু-ছাগল এবং অন্যান্য জীব যন্ত্র আক্রমণ করতে পারে। এতে করে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর তারা যদি একটু বড় হয়ে থাকে তাহলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। যদিও গাছের শিকর মাটিকে প্রতিষ্ঠিত হতে একটু সময় লাগে। 

অভিজ্ঞদের পরামর্শ যে বসতবাড়ি ও রাস্তার পাশে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে বড় চারাগুলো বাছাই করা উচিত। এতে চারা একটু তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাবে এবং জীবজন্তুর হাত থেকে রক্ষা পাবে। আর যদি ছোট চারা লাগাতে হয় তাহলে অবশ্যই গাছের চারপাশ দিয়ে একটা প্রতিরোধক বেড়া দিয়ে দিতে হবে। 

পরিশেষে বলা যায় যে উপরে উল্লিখিত গাছ লাগানোর পদ্ধতি সঠিক ভাবে অনুসরণ করলে গাছ দ্রুত বড় হবে। আমাদের পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখতে হলে গাছ লাগানোর কোন বিকল্প নেই। তাই আসুন বেশি বেশি গাছ লাগাই পরিবেশকে সুন্দর রাখি।

আপনার নামের অর্থ জানতে ভিজিট করুন-

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top