চিচিঙ্গা বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে একটি উন্নতমানের ফসল। এটি চাষে কৃষকরা নিজেদের মাটি থেকে উৎকৃষ্ট টাকা আয় করতে পারেন। কিন্তু গ্রামেগঞ্জের অনেক কৃষক চিচিঙ্গা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নন।
চিচিঙ্গার বৈশিষ্ট্য
- চিচিঙ্গা দেখতে সাদা এবং হালকা সবুজ রঙের হয়।
- চিচিঙ্গা এর দৈর্ঘ্য ১০০-১৫০ সে.মি হয় এবং ব্যাসার্ধ ৬৫-৭০ সে.মি হয়।
- চিচিঙ্গার সমতল এবং নরম বীজ থাকে।
- চিচিঙ্গা সবজিটি ” চীনা শসা” নামেও পরিচিত।
- সবজিটি পাকতে শুরু করলে বীজ শক্ত এবং লম্বা হওয়া শুরু করে।
- চিচিঙ্গা সবজিটি পেকে গেলে এর স্বাদ তেতো হয়।
চিচিঙ্গা সম্পর্কে যা জেনে রাখা উত্তম
১) চিচিঙ্গা সবজির মধ্যে কোনো প্রকারের চর্বি নেই।
২) এটির মধ্যে শরকরা, আমিষ এবং সামান্য পরিমাণে আঁশ থাকে।
৩) চিচিঙ্গার মধ্যে যে ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন – সি থাকে।
৪) প্রায় ৯৫ শতাংশ পানি চিচিঙ্গার মধ্যে উপস্থিত।
৫) চিচিঙ্গা সবজির মধ্যে ক্যালসিয়াম, আইরন এবং ফোসফোরাস রয়েছে।
চিচিঙ্গার বিভিন্ন জাত সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো -ঃ
চিচিঙ্গার জাত | বৈশিষ্ট্য |
১) মানসুষরি কুমদি | ১)উন্নতমানের ফসল২) এসিডযুক্ত মাটিতে ভালো ফলন হয়।৩) এই চিচিঙ্গা জাতের গড় দৈর্ঘ্য ১ মিটার |
২) আপাউ সোয়েঠা | ১) এই জাতটি বেশ উচ্চ পরিমাণের ফসল দেয়না।২) রঙ সাধারণত সাদা হয়।৩) এই জাতটি সাধারণত ২৮-৩০ দিনের মধ্যে প্রতি হেক্টরে ১২.৫-১৫ টন ফসল দিতে সক্ষম। |
৩) বেবি | ১)আকৃতিতে ছোট ২) দৈর্ঘ্য ৩০-৪০ সে.মি হয়।৩) প্রতি হেক্টরে ২৫-৩০ টন ফসল দিতে পারে। |
৪) কনকাম সোয়েটা | ১) দৈর্ঘ্য ৯০-১০০ সে.মি।২) সাদা রঙের হয় সাধারণত। ৩) এই জাতটি ১২০-১৩০ দিনের মধ্যে প্রতি হেক্টর জমিতে শুধুমাত্র ১৫-২০ টন ফসল ফলাতে সক্ষম। |
চিচিঙ্গা চাষে উপযুক্ত মাটি এবং আবহাওয়া
pH এর মান ৬-৭.৫ সম্পন্ন এসিড যুক্ত দোঁআশ মাটি চিচিঙ্গা চাষ পদ্ধতি অবলম্বনের জন্য সর্বোত্তম। মাটির মধ্যে অতিরিক্ত ক্ষার চিচিঙ্গা চাষের জন্য ক্ষতিকারক। রৌদ্রজ্বল দিন চিচিঙ্গা চাষের জন্য উৎকৃষ্ট। জমির মধ্যে অতিরিক্ত জৈবপদার্থ থাকা যাবেনা এবং পরিমাণ মতো সেচ প্রয়োজন। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া এবং ক্রান্তীয় এলাকা এই সবজিটি চাষের জন্য ভালোই খ্যাতি পেয়েছে।
>> মাল্টা চাষ পদ্ধতি জেনে শুরু করুন মাল্টা চাষ!
জমি তৈরী এবং চারা রোপণ
চিচিঙ্গা চাষের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করে জমি চাষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত ভালো ভাবে জমি চাষ করতে হবে। জমি চাষাবাদের পর মাটির স্তর গুলো সমান করতে হবে। সেচের জন্য এমনভাবে ব্যবস্থা করতে হবে যেনো অতিরিক্ত পানিগুলো বের হয়ে যায়। প্রতিটি চারা ২x২.৫ মিটার দূরত্ব রেখে রোপণ করতে হবে। প্রতি হেক্টর জমিতে বীজের পরিমাণ থাকবে প্রায় ৩-৪ কেজি।
>> গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা জেনে নিন!
চিচিঙ্গা বিস্তারে করণীয়
বীজগুলো প্রত্যক্ষভাবে জমিতে রোপণ করা যাবে। মাটি এবং সার এর মিশ্রণে বীজ রোপণ করা হয়। রোপণ করার পর জমিতে হালকা সেচের প্রয়োজন। সাধারণত জুলাই এবং জানুয়ারি মাসে চিচিঙ্গা চাষের জন্য বীজ রোপণ করা হয়।
সার এবং অন্যান্য দ্রব্যাদি
নাইট্রোজেন, ফোসফোরাস,এবং পটাসিয়াম এর মিশ্রণ ৬:১২:১২ অনুপাতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি হেক্টরে ২ কেজি হারে এযোস্পিরলিয়াম এবং ফোসফোব্যাটেরিয়া ব্যবহার করা অপরিহার্য।
>> তরমুজ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন!
ফলন
ফল জন্মানোর ১২-২০ দিন পর চিচিঙ্গা সবজিগুলো জমি থেকে তুলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে জমির দৈর্ঘ্য যেনো।
ফলনের পরে করণীয়
ফলনের পর ১২-১৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হবে। ১০-১৪ দিনের জন্য চিচিঙ্গাগুলো রেফ্রিজারেটরে রাখা যেতে পারে। ৮৫-৯০% এর মতো আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে।
শেষ কথা
চিচিঙ্গা আমাদের দেশের সম্পদ। তাই চিচিঙ্গা চাষ পদ্ধতি সকল কৃষকদেরই জানা উচিত। এতে করে তারা অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছল হবেন এবং দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।