ডালিম গাছের পরিচর্যা

কিভাবে ডালিম গাছের সঠিক পরিচর্যা করতে হয় জেনে নিন!

ডালিম গাছের পরিচর্যা : আমাদের দেশে যে ফলগুলো জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ডালিম। ডালিমের বৈজ্ঞানিক নাম হল Punica granatum. ইদানিং দেখা যাচ্ছে খাদ্য জগতে ডালিমের বিপ্লব ঘটেছে।

ডালিম গাছের পরিচর্যা

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রমাণিত হয়েছে যে ডালিমের রস হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তচাপ কমাতেও সহায়তা করে। যদিও আমাদের দেশে ডালিমের দাম একটু বেশি হয়ে থাকে। 

ডালিম গাছ 

ডালিম গাছ লাগানো এবং এর পরিচর্যা করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। যদি আপনি আপনার অঞ্চলভেদে উপযুক্ত জাত নির্বাচন করতে পারেন। ডালিম গাছ রোপণের জন্য অনুকূল পরিবেশ ও নিয়মিত যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। 

মূলত ডালিম গাছ শুষ্ক ও গরম জলবায়ু সহিষ্ণু এলাকায় বেশি জন্মে থাকে। এ ফলটি যে পুষ্টিকর তা কিন্তু নয়, এটি দর্শনীয়, উজ্জ্বল লাল ফুলের জন্যও বিখ্যাত। ডালিম চাষ করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপদেশ হল আপনি আপনার এলাকার মাটি পরীক্ষা করে সে অনুযায়ী ডালিমের জাত রোপন করবেন। 

ডালিম গাছের জন্মস্থান 

ডালিমের উৎপত্তি হচ্ছে ইরানে। তবে খুব অল্পসময়ের মধ্যেই এটি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, আফ্রিকার কিছু অংশ এবং এশিয়ার শুষ্ক অঞ্চল সমূহ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।  ডালিম গাছে গরম ও শুকনো আবহাওয়া বেশি পছন্দ করে। 

ডালিম গাছের পরিচর্যায় যেভাবে মাটি প্রস্তুত করবেন?

ডালিম গাছে বেলে-দোআঁশ মাটি পাব পলিমাটি যেখানে মাটির গভীরতা বেশি সেখানে খুব ভালোভাবে চাষ করা যায়। বর্তমানে শাখা কলম ও গুটি কলমের মাধ্যমে ডালিম গাছের বংশবিস্তার করা হয়। 

একটি ডালিম গাছ অম্লীয় ও ক্ষারীয় উভয় মাটিতেই ভালো জন্মে। তাই আপনাকে মাটি পরীক্ষা করে তারপরে ডালিম গাছ রোপণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ সব ধরনের মাটিতে ডালিম গাছের চাষ করা সম্ভব নয়। 

মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। কারণে এ গাছটি সেতসেতে পরিবেশে এমনিতেই বেঁচে থাকতে পারে না। পর্যাপ্ত সূর্যালোক থাকে এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। মাটিতে চারা রোপণের পূর্বে হিউমাস, ফার্মইয়ার্ড কম্পোস্ট এবং দানাদার সার প্রয়োগ করতে হবে। সফলভাবে শসা চাষ পদ্ধতি জেনে নিন!

ডালিম গাছের পরিচর্যাচারা রোপণ

ডালিম গাছের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হচ্ছে জীবন থেকে জুলাই মাসে। একটি চারা থেকে আরেকটি চারা দূরত্ব হবে ৪ থেকে ৫ মিটার। ডালিম গাছের চারা গর্তের মাঝ বরাবর বসিয়ে রোপণ করতে হবে। রোপণের পরে মাটি ভালোভাবে চেপে দিতে হবে। এরপর একটি খুঁটি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে। 

ডালিমের ভালো ফলনের জন্য শুরু থেকেই মাটিতে জৈব সারের পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে। জৈব সারের পাশাপাশি রাসায়নিক সারও প্রয়োগ করতে হবে।উভয় সারের সংমিশ্রণের ফলে ডালিমের ফলন অধিক বৃদ্ধি পাবে। 

আদর্শ তাপমাত্রা 

যদিও উৎপত্তিগতভাবে ডালিম গাছ গ্রীষ্মমণ্ডলীয়। ডালিম গাছ মাঝারি উচ্চতার মাত্রায়ও ভালো ভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। দীর্ঘ সময়ে শীতকাল হলে ডালিম গাছ মারা যেতে পারে। ডালিম গাছ চাষের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হচ্ছে ৪০ ডিগ্রি থেকে ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে থাকা। 

কিভাবে ডালিম গাছের যত্ন নিবেন? 

ডালিম গাছের পরিচর্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।  ডালিম গাছ গুলিকে সাধারণত যত্ন নেওয়া খুব সহজ। একবার লাগানোর পরে ন্যূনতম রক্ষণাবেক্ষণ করাই সর্বোত্তম পরিচর্যা। 

সঠিকভাবে ফলন পেতে হলে অবশ্যই ডালিম গাছের যত্ন নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। যেহেতু ডালিমের ফুল আসে বসন্ত কালে। তবে বর্তমানে এখন কিছু জাত রয়েছে যেগুলোর ফুল সারাবছরই আসি। তো বসন্তকালে ফুল আসলে গৃষ্ম কালে সে ফল পরিপাক্ক হয়। 

ডালিমের ফলন বৃদ্ধি করার জন্য মার্চ-এপ্রিল মাসে গাছের গোড়ার চারপাশের মাটি সরিয়ে ১৫ দিন পর্যন্ত উন্মুক্ত রাখা হয়। এরপর ওই জায়গায় সার প্রয়োগ করার মাধ্যমে মাটি পরবর্তীতে ঢেকে দেওয়া হয়। এভাবে ডালিম গাছের পরিচর্যা করলে পরবর্তীতে ডালিমের ফলন অধিক হারে বৃদ্ধি পায়। 

  • সুদ্য রোপন করা গাছকে নিয়মিত পানি সরবরাহ করতে হবে। গ্রীস্মের গরমে ডালিম গাছের পানির চাহিদা অনেক বেশি থাকে। 
  • ডালিম গাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করুন। ডালিম গাছে বছরের ২ থেকে ৩ বার জৈব সার দেওয়া প্রয়োজন।
  • প্রথম ৩ বছরে যাতে ডালিম গাছের গোড়া অনেক মোটা হয় সে জন্য উপরের মাথা ছাটাই করতে হবে। 
  • তবে অতিরিক্ত মাত্রায় গাছ ছাটাই করবেন না, এতে গাছের ফলন কমে যেতে পারে। 
  • ডালিম গাছের ছাটাই করার সর্বোত্তম সময় হল যখন পাতা ঝরে পড়ে যায়, বসন্তে পাতা বের হওয়ার ঠিক আগে। 
  • তবে ডালিম গাছ সারাবছরই হালকাভাবে ছাঁটাই করা যেতে পারে।
  • ডালিম গাছে ফল অতিরিক্ত ধরলে কিছু ফল কেটে পাতলা করে দিতে হয়। তাহলে বাকি ফলগুলো অনেক বড় আকারের হবে। 

কীটপতঙ্গ এবং রোগ 

বর্তমানে বেশিরভাগ ডালিমের জাতগুলি কীটপতঙ্গ ও রোগ প্রতিরোধী হয়ে থাকে। প্রতিকূল পরিস্থিতি দেখা দিলে, পাতার ক্ষয়ক্ষতি, সাদা মাছি, মিলিবাগ, স্কেল পোকা, থ্রিপস ইত্যাদির আক্রমণ বেড়ে যায়। এই কীটপতঙ্গ গুলি নিয়ন্ত্রণের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত কীটনাশক সমূহ ব্যবহার করতে পারেন। 

তবে ফল পাকার আগে অবশ্যই গাছে স্প্রে করতে হবে। ডালিম গাছের বাগান নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কৃষি কর্মকর্তাদের সঠিক পরামর্শ মোতাবেক পরিচর্যা করতে হবে। আর কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। এই ভাবেই গাজর চাষ পদ্ধতি তে হয়ে উঠুন লাখোপতি!

ডালিমের ফলন

কলম করা গাছে ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়। ফুল আসার সময় থেকে পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে ডালিমের ফলন পাওয়া যায়। ডালিম পাকার আগেই খোসা হলদে বাদামী রং ধারণ করে থাকে। তবে যেসব গাছের ফল পেটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে সেগুলো পুষ্ট হওয়ার সাথে সাথে পেড়ে ফেলা উচিত। 

মূলত ডালিমের খোসা বেশ মোটা হয়ে থাকে। যার ফলে এটি পরিবহন করলে ফল নষ্ট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকেনা। গড়ে হিসেব করতে গেলে প্রতিটি গাছে ২০০ থেকে ৫০০ টি ফল পাওয়া যায়। এছাড়া বেদনা ভানধারীর ফলন গড়ে ৫০ থেকে ২০০ পর্যন্ত। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top