ধনিয়া চাষ পদ্ধতি

ধনিয়া চাষ পদ্ধতি সঠিক নিয়মে যেভাবে করবেন জেনে নিন!

ধনিয়া চাষ পদ্ধতি : ধনিয়া একটি মসলা জাতীয় ফসল। ধনিয়া খাবারের স্বাদ ও রান্নার টেস্ট বাড়াতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সব ধরনের তরকারিতেই এটি ব্যবহার করা যায়। ধনিয়া রবি ফসল হলেও বর্তমানে এটি সারা বছরই চাষ করা হয়ে থাকে।

Table of Contents

ধনিয়া চাষ পদ্ধতি

উৎস ও ইতিহাস 

ধনিয়া হচ্ছে বিরুৎ জাতীয় তৃণ। এটির পাতা ছোট, সবুজ, মসৃণ হয়ে থাকে। এ গাছের ডালপালা অনেক হয় এবং ছোট ছোট থোকায় থোকায় সাদা ফুল ফোটে। ফোল থেকে আবার দানা আকৃতির ফল হয়ে থাকে। ফলগুলো কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে। 

ধনিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম (Coriandrum sativum). এটি একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন ফসল। এটি একটি একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর জন্মস্থান হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকায়। ধনিয়ার বীজ দিয়ে বানানো তেল সুগন্ধী ও ওষুধ বানাতে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

মাটি নির্বাচন 

সব ধরনের মাটিতে মূলত ধনিয়া চাষ করা যায়। তাবে বেলে-দোআঁশ থেকে তেল দোআঁশ মাটিতে ধনিয়া চাষ করা সবচেয়ে উত্তম। কারণ এই ধরনের মাটিতে ধনিয়া উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে। ধনিয়া চাষের ক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে। 

জাত সমূহ 

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত  জাত হলোঃ- বারি ধনিয়া ১। এছাড়াও আরও উন্নত জাত গুলো হলো এলবি ৬০, এলবি ৬৫,  লালতীরের সুগন্ধা ইত্যাদি। এখন বর্তমানে বিদেশ থেকে উন্নত জাত গুলো এসে থাকে সেগুলোও ব্যবহার করা যেতে পারে। 

বপনের সময় 

ধনিয়া বীজ বপনের আগে জমিকে ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। কমপক্ষে ৩-৪ টি চাষ ও  ভালোভাবে  মই দিয়ে দিতে হবে। জমিতে কোন আগাছা থাকা যাবেনা। শেষ চাষ দেওয়ার সময় অবশ্যই সকল প্রকার আগাছা বেচে ফেলে দিতে হবে।  

জাতভেদে ধনিয়া এপ্রিল-জুন মাসের তীব্র গরম বাদ দিয়ে বাকি সারা বছরই চাষ করা যায়। স্থানীয় দেশি জাতের ধনিয়া রবি মৌসুমে রোপন করা হয়। রবি মৌসুমের জন্য আশ্বিন-কার্তিক (সেপ্টেম্বর অক্টোবর) মাসে ধনিয়া বীজ বপন করা যেতে পারে। লাল শাকের সঠিক চাষ পদ্ধতি জেনে নিন!

বপন পদ্ধতি 

ধনিয়া চাষ পদ্ধতি তে বীজ শোধন করে নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনুমোদিত ছত্রাকনাশক পানির সাথে মিশিয়ে শোধন করা যেতে পারে। জমিতে ১ মিটার প্রশস্ত বেড তৈরি করতে হবে। বিডে ২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি থেকে সারিতে ধানের বীজ বপন করা যায়। এছাড়া ছিটিয়েও ধনিয়ার বীজ বপন করা যায়। 

সার ব্যবস্থাপনা 

ধনিয়া চাষের জন্য শতক প্রতি পচা গোবর বা কম্পোস্ট ২০ কেজি, ইউরিয়া ০.৬১-০.৭৩ কেজি, টিএসপি ০.৪৪-০.৫৩ কেজি, এমওপি বা পটাশ ০.৩৬-০.৪৪ কেজি।  প্রথমত মনে রাখতে হবে কম্পোস্ট,  টিএসপি ও এমওপি অর্ধেক জমি তৈরির সময়  প্রয়োগ করে দিতে হবে। 

পরবর্তীতে বাকি অর্ধেক পটাশ সার ইউরিয়া সার প্রয়োগের সময় দিতে হবে। ইউরিয়া সার জমিতে ২-৩ মেয়াদে প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব সার প্রয়োগ করলে ফসলের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পায়। 

সেচ ও আগাছা

ধনিয়া গজানোর পরে ৩-৪ দিন পর হালকা পানি সেচ দিতে হবে। জমিতে হবে সে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। বেডের মধ্যে খড় বিছানো থাকলে পানি সেচ ব্যবস্থায় একটু সুবিধা হয়। গৃষ্ম মৌসুমে  জমিতে একটু বেশি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। 

আগাছা দমনের ব্যবস্থায় শেষ চাষের ক্ষেত্রেই ভালোভাবে করতে হবে। আগাছা দমনের ক্ষেত্রে পরিষ্কার কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যেতে পারে। ফসল বোনার ২৫-৩০ দিনের মধ্যে আগাছা বাছাই করে পুরো খেত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এতে করে ফসলের বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকবে। 

ধনিয়ার রোগ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা 

ধনিয়াা গাছে খুব একটা রোগ দেখতে পাওয়া যায় না। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ধনিয়ার রোগ খুব কমই হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু রোগ ধনিয়া খেতে দেখতে পাওয়া যায় তা হলো পাউডারি মিলডিউ, শুকিয়ে যাওয়া, শস্যের ছাঁচ ইত্যাদি। 

এই রোগগুলো মোকাবেলায় অনুমোদিত কীটনাশক সমূহ ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অনুমোদিত কীটনাশক গুলো হলো সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেরন্স, কার্বেন্ডাজিম ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। 

ফসল সংগ্রহ 

বীজ রোপণের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে পাতা সংগ্রহ করা যায়। পরবর্তীতে একটানা তিনদিন পর্যন্ত পাতা সংগ্রহ করা যায়। সাধারণত ১ শতকে জমিতে ১৫ থেকে ২০কেজি পাতা হয়ে থাকে। আবার বীজ সংগ্রহ করার জন্য অনেক সময় গাছে রেখে দিতে হয়। আধুনিক উপায়ে বেগুন চাষ পদ্ধতি জেনে নিন!

ধনিয়ার পুষ্টিগুণ 

ধনিয়ার মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদানের সম্ভার। প্রতি ১০০ গ্রাম ধনিয়া পাতার রয়েছে আমিষ ৪.১ গ্রাম, ভিটামিন এ ৬০৭২ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি২ ১৩৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ বা রিবোফ্লাভিন ০.১৮ মিলিগ্রাম, আয়রন ২০.১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৯০ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়। 

ধনিয়া পাতার রয়েছে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান। শরীরের নানা ধরনের জটিল ও কঠিন রোগের সমস্যার সমাধানে ধনে পাতার ভূমিকা অসামান্য। কাঁচা ধনিয়া খেলে অনেক পুষ্টি পাওয়া যায়। এটি সালাদের সাথে ব্যবহার করে আমরা নিয়মিত খেতে পারি। 

উপসংহার 

উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ধনিয়া চাষ পদ্ধতির যে সকল তথ্য প্রদান করা হয়েছে তা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক বিশেষায়িত। তাই আসুন উক্ত চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে ধনিয়া চাষ করি এবং সফলতা লাভ করি। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top