ধুন্দল চাষ পদ্ধতি

সঠিক ধুন্দল চাষ করার সঠিক পদ্ধতি জেনে নিন!

বাংলাদেশে একটি পরিচিত সবজি ধুন্দল (Sponse gourd)। একে অনেকে পল্লাও বলে। আমাদের দেশে সাধারণত দুই ধরনের ধুন্দল পাওয়া যায়। একটি হলো সাধারণত আমরা যেটা খাই। এর শাঁস তিতা নয় সুস্বাদু এবং নরম। অন্যটি হলো বন্য ধুন্দল, যাকে তিতপল্লা বলা হয়। এর পাকা ফল শুকিয়ে স্পঞ্জের মতো গায়ে সাবান মাখার খোসা তৈরি করা হয়।

Table of Contents

ধুন্দল চাষ পদ্ধতি

ধুন্দুলের বপন/রোপণ প্রযুক্তি

জমি নির্বাচনঃ

ধুন্দল চাষে জমির প্রথম শর্ত হচ্ছে উঁচু, পানি জমে থাকে না, গাছের কোনো ছায়া থাকে না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ ধুন্দুল চাষের জন্য উত্তম । মাটি উর্বর এবং সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়।

বীজের পরিমাণঃ

বিঘা প্রতি ৩৩০-৪০০ গ্রাম (শতক প্রতি ১০-১২ গ্রাম) বীজের প্রয়োজন।

জমি প্রস্তুতকরণধুন্দল চাষ পদ্ধতি

জমি ৩- ৪ বার ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে ধুন্দুল চাষের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। জমির মাটি ভালো করে আগাছামুক্ত ও ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এরপর ১ ফুট গভীর, ২.৫ ফুট লম্বা এবং ২.০ ফুট চওড়া করে মাদা তৈরি করতে হবে। মাদা তৈরির সময়  এক মাদা থেকে অপর মাদার দূরত্ব হবে ৮-১০ ফুট। জমির চেয়ে মাদা কমপক্ষে ৫-৬ ইঞ্চি উঁচু করে তৈরি করতে হবে।

বীজ বপনঃ

বীজ বোনার আগে দেড় থেকে দুদিন ভিজিয়ে রেখে মাদা প্রতি ৪-৫ টি বীজ প্রয়োজন।

ধুন্দলের জাত পরিচিতি

গ্রীন পিচ এফ-১ঃ

এ জাতের ধুন্দলের জীবন কাল ৩৫-৪০ দিন। মাঘ-আশ্বিন     মাসে চাষযোগ্য এ জাতের ধুন্দলের গাছ প্রতি ফলন হয় ৩০-৩৫ কেজি। ফলের ওজন প্রায় ১ কেজি এবং প্রচুর শাখা-প্রশাখা হয়।

কর্ণফুলী এফ-১ঃ

এ জাতের ধুন্দলের জীবনকাল ৩৫-৪০ দিন। মাঘ-আশ্বিন মাসে চাষযোগ্য এ জাতের গাছ প্রতি ফলন ৩০-৩৫ কেজি ও প্রত্যেকটি ফলের ওজন ৫০০ গ্রাম প্রায়।

মিয়ান এফ-১ঃ

পূর্ববর্তী জাত দুটির মতোই এ জাতের ধুন্দলের জীবনকাল ৩৫-৪০ দিন। গাছ প্রতি ফলন ৩০-৩৫ কেজি    । ফলের ওজন ৩০০-৩৫০ গ্রাম প্রায়।

সুপার গ্রীন এফ-১ঃ

এ জাতীয় ধুন্দলের জীবনকাল ৩৫-৪০ দিন। গাছ প্রতি ফলন ৩০-৩৫ কেজি এবং ফলের ওজন ৩০০-৩৫০ গ্রাম মতো প্রায়

হোয়াইটডিলাইট এফ-১ঃ

হোয়াইটডিলাইট এফ-১ ধুন্দলের জীবনকাল ৩৫-৪০ দিন। গাছ প্রতি ফলন প্রায় ৩০-৩৫ কেজি     এবং ফলের ওজন ২০০-৩০০ গ্রাম।

লালন শাহ এফ-১ঃ

লালন শাহ এফ -১ জাতের ধুন্দলের জীবনকাল প্রায়    ৪০ দিন। গাছ প্রতি ফলন ৩০-৩৫ কেজি এবং প্রতিটি ফলের ওজন  প্রায় ৪০০ গ্রাম।

মজনু শাহ এফ-১ঃ

এ জাতীয় ধুন্দলের জীবনকাল ৪০ দিন। মাঘ-আশ্বিন মাসে চাষযযোগ্য এ জাতের গাছ প্রতি ফলন ৩০-৩৫ কেজি। এ জাতীয় ধুন্দলের প্রতিটি ফলের ওজন গড়ে প্রায় ৩০০ গ্রাম মতো। বাড়ির ছাদে সবজি চাষ পদ্ধতি জেনে নিন!

সৈকত এফ-১ঃ

মাঘ-আশ্বিন মাসে চাষযোগ্য সৈকত এফ-১ জাতের ধুন্দলের জীবনকাল ৪০-৪৫ দিন। গাছ প্রতি ফলন হয় প্রায় ৩০-৩৫ কেজি এবং প্রতিটি ফলের  ওজন ১-১.৫ কেজি প্রায়।

ফুজিয়ানঃ

মধ্য মাঘ-মধ্য ভাদ্র মাসে চাষযোগ্য ফুজিয়ান জাতের ধুন্দলের আয়ুষ্কাল ৪০-৬০ দিন। ৪০-৪৫ দিনের মাঝে ফসল সংগ্রহ করা যায়। ফুজিয়ান জাতের ধুন্দলের প্রতিটি ফল লম্বায় ২৫-৩০ সেমি এবং গড় ওজন ১২৫ গ্রামের মতো। প্রতি গাছে ৩০- ৪০টি ফল হয়। এ জাতীয় ধুন্দলের বিঘা প্রতি ফলন ১০৫-১২০ মণ প্রায়।

এসএস গ্রীন এফ-১ঃ

মাঘ-আশ্বিন মাসে চাষযোগ্য এ জাতীয় ধুন্দলের আয়ুষ্কাল ৪০ দিন। এসএস গ্রীন এফ-১ জাতের ধুন্দলের বিঘা প্রতি ফলন ১০৫-১২০ মণ এবং প্রতিটি ফলের ওজন প্রায় ৪০০ গ্রাম মতো। শিং মাছ চাষ সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিন!

ধুন্দল চাষে সার ব্যবস্থাপনা – ধুন্দল চাষ পদ্ধতি

ধুন্দলের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য প্রতি শতাংশ (ডেসিমাল) জমির জন্য নিম্নোক্ত হারে সার প্রয়োগ করতে হবেঃ

পচা গোবর/কম্পোস্টঃ ধুন্দল চাষে প্রতি শতাংশে এই সারের প্রয়োজন হয় ২০ গ্রাম প্রায়।

টিএসপিঃ ধুন্দল চাষে শতাংশ প্রতি টিএসপি সারের প্রয়োজন হয় ৫০০ গ্রাম।

ইউরিয়াঃ ধুন্দল চাষের জন্য প্রতি শতকে ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয় ৩২০ গ্রাম।

এমওপি/পটাশঃ ধুন্দল চাষে এমওপি/পটাশ সারের দরকার পড়ে শতক প্রতি ২৫০ গ্রাম 

জিপসামঃ ধুন্দল চাষে শতক প্রতি জিপসাম সারের প্রয়োজন প্রায় ৩২০ গ্রাম।

প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

ধুন্দলের চাষে ভালো ফলনের জন্য সঠিক পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ জরুরি। এক্ষেত্রে ধুন্দল চাষের জন্য জমি তৈরির শেষ চাষের সময় সমুদয় গোবর, অর্ধেক টিএসপি ও পটাশ প্রয়োগ করতে হবে। বাকি টিএসপি ও পটাশ, সম্পূর্ণ জিপসাম ও অর্ধেক ইউরিয়া মাদার গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। চারার বয়স ৪০-৪৫ দিন হলে বাকি অর্ধেক ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

ধুন্দল চাষে অন্যান্য প্রযুক্তি

সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাঃ

মাটির অবস্থার উপর ভিত্তি করে জমিতে সেচ দিতে হবে। তবে সেচ প্রদানের পর খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যেন অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে। যদি থাকে তাহলে তা বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

পরিচর্যাঃ

ধুন্দল চাষে ধুন্দলের ভালো ফলন পেতে হলে মাদায় গাছের ঘনত্বের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। প্রতি মাদায় ৩-৪টি সুস্থ-সবল গাছ রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে। গাছ বৃদ্ধির সাথে সাথে জমিতে গাছের গোড়ার পাশে বাঁশের কুঞ্চি বা কাঠি পুঁতে দিতে হবে যাতে গাছের ডালপালা গুলো মাটিতে না ছড়িয়ে মাচায় বা জাংলায় সহজে উঠতে পারে । জমিতে মাচা ৩-৪ ফুট উচু করে দিলে ভালো হয়। জমিতে আগাছা জন্মালে পরিষ্কার করে দিতে হবে। ১৫-২০ দিন পরপর প্রতি মাদায় ৫০ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

ধুন্দল চাষে পোকামাকড় ও রোগবালাই

 ধুন্দলের গাছে অনেক ধরনের রোগ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে রোগাক্রান্ত ও মরা পাতা সংগ্রহ করে পুঁতে ফেলতে হবে। ফল ছিদ্রকারী পোকা ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে বিধায়  এ পোকার আক্রমন হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। চারা অবস্থায় “রেড পাম্পকিন বিটল” চারার পাতা ঝাঁঝরা করে খেয়ে ক্ষতি করে।

চারার কচি পাতা ও মাথা খেয়ে এরা ক্ষতি করে। ছাই ছিটিয়ে বা মশারির জাল দিয়ে বীজতলায় চারা ঢেকে রেখে এ “রেড পাম্পকিন বিটল” পোকার আক্রমণ হতে রক্ষা করা যায়। এছাড়া কাঁটালে পোকাও গাছে আক্রমন করে থাকে।

ফল সংগ্রহ

ধুন্দলের চাষে খুব দ্রুতই ফসল তোলা যায়। বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ শুরু করা যায়। শরৎকাল পর্যন্ত ধুন্দল তোলা যায়। ফল সংগ্রহের সময় বোঁটা কেটে সংগ্রহ করতে হবে। খাওয়ার জন্য কচি থাকতেই সবুজ রঙের ধুন্দল তুলতে হবে। খোসা শক্ত হয়ে এলে তা আর খাওয়ার উপযুক্ত থাকে না।

ফলন

রোগমুক্ত, উন্নত জাতের বীজ, আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ও সঠিক নিয়ম অনুযায়ী চাষ করলে শতক প্রতি ১২০-১৪০ কেজি এবং একরপ্রতি ১২-১৪ টন ফলন পাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও হেক্টর প্রতি ৫০,০০০টি ধুন্দুল উৎপাদন করা যেতে পারে ইনশআল্লাহ।

উপোরক্ত পদ্ধতিতে ধুন্দল চাষ করে ভালো ফলন পেলে কৃষক যেমন লাভবান হবেন তেমনি সাধারন মানুষের জন্যও পুষ্টিকর এ খাবার সহজলভ্য হতে পারে। জেনে নিন মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top