পালং শাক চাষ পদ্ধতি

পালং শাক চাষ পদ্ধতি যেভাবে সঠিক ভাবে করবেন জেনে নিন!

পালং শাক চাষ পদ্ধতি : পালং শাক আমাদের কাছে খুবই পরিচিত একটি শাক। এই শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। যা আমাদের দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই শাকটি আমাদের খাদ্য তালিকা অবশ্যই রাখা উচিত। 

পালং শাক চাষ পদ্ধতি

উৎস ও ইতিহাস 

আঁশযুক্ত খাবার গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি পালং শাক। এটি একটি অতি জনপ্রিয় সবজিও বটে। এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Spinacea olerocea. পালংশাক হচ্ছে এক প্রকার সপুষ্পক জাতীয় উদ্ভিদ।  এই শাকটির আদি নিবাস হচ্ছে মধ্য ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়।

এই গাছটি আকারে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর পাতা একান্তর, সরল, ডিম্বাকার বা ত্রিভুজাকার হয়ে থাকে। পালং শাকের পাতার আকার ২-৩০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ১-১৫ সেন্টিমিটার চওড়া হয়। গাছের গোড়ার দিকের কথা গুলো বড় হয়ে থাকে এবং উপরের দিকের পাতাগুলো ছোট হয়।

পালংশাকে বিদ্যমান প্রচুর পরিমাণ খাদ্য উপাদান। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে পালংশাকে রয়েছে পুষ্টির আধার, পালংশাকে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা মানবদেহের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের দেশে পালংশাক মূলত শীত মৌসুমে চাষ করা হয়ে থাকে । 

মাটি নির্বাচন  

যে কোনো প্রকার সুনিষ্কাশিত মাটিতে পালংশাক জন্মে। পালং শাক চাষের জন্য দোআঁশ উর্বর  মাটি বেশি উপযোগী। এছাড়াও এঁটেল, বেলে দো-আঁশ মাটিতেও পালং শাক চাষ করা যায়। তবে জৈবসার সমৃদ্ধ প্রায় সকল মাটিতেই এই শাকটি চাষ করা যেতে পারে।  

জুবিন মাটি যাতে অবশ্য আলগা ও ঝরঝরে থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এতে করে পালংশাকের চারা সহজে এবং দ্রুত শিকড় স্থাপন করতে পারে। মাটিতে অবশ্যই কম্পোস্ট বা জৈব সার ব্যবহার করা আবশ্যক। এটি গাছের বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । 

জাত সমূহ 

আমাদের দেশে পালং শাকের বেশকিছু জাত দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো হলোঃ- পুষা জয়ন্তী, গ্রীন, সবুজবাংলা, কপি পালং, টকপালং , ব্যানার্জি জায়েন্ট, পুষ্প, নবেল জায়েন্ট। 

এছাড়াও আরো কিছু জাত দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো হলঃ- মালাবার পালং শাক, সেভয় পালংশাক, নিউজিল্যান্ড পালং শাক ইত্যাদি। 

জমি তৈরি 

জমিকে অবশ্যই ভালোভাবে চাষ ও মই ভালোভাবে মাটি মিহি করে তৈরি করতে হবে। জমির মাটি অবশ্যই ঝুরঝুরে করে তৈরি করা প্রয়োজন। জমিতে আল তৈরি করেও পালংশাক চাষ করা যেতে পারে। গ্রীস্মের শেষের দিকে বা শরতের শুরুতে মাটি প্রস্তুত করা যেতে পারে। 

উঁচু আল পালং শাকের জন্য নির্বাচন করা যায়। আল তৈরি করার সময় আলের মাটি কুপিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে। দিনের বেশিরভাগ সময় যাতে সূর্যালোক থাকে সেরকম জমি নির্বাচন করতে হবে। 

পালং শাক চাষ পদ্ধতি তে বীজ বপন 

আমাদের দেশে পালং শাকের বীজ বপনের জন্য উপযুক্ত সময় হচ্ছে সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। আবার ভাদ্র-আশ্বিন (আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি) মাসের মধ্যে পালং শাকের বীজ বপন করা যাবে।

পালং শাকের বীজ ছিটিয়ে অথবা সারিতেও বপন করা যায়। তবে সারিতে বপন করলে ভালো হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব হওয়া উচিত ২০ সেন্টিমিটার। বীজ বপনের পর থেকে অঙ্কুরোদগম হতে ৭/৮ দিন সময় লাগতে পারে। 

হেক্টরপ্রতি ২৫/৩০ কেজি পালং শাকের বীজ এর প্রয়োজন হয় বীজ ছিটানোর পূর্বে অবশ্যই জমিতে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। আর প্রতি শতকে বীজের পরিমাণ ১১৭ গ্রাম হলেই চলে। প্রতি একরে ৯/১১ কেজি বীজ প্রয়োজন। 

সার ব্যবস্থাপনা 

পালং শাক চাষ পদ্ধতি তে সার ব্যবস্থাপনা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ সঠিক সময়ে সুষম সার জমিতে প্রয়োগ করতে না পারলে ফলনেরর ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আসুন জেনে নেই পালংশাকের জমিতে কি কি সার প্রয়োজন। 

গোবর প্রতি শতকে ৪০ কেজি

ইউরিয়া ১ কেজি 

টিএসপি ৫০০ গ্রাম

এমপি ৫০০ গ্রাম  

ইউরিয়া সার ছাড়া আর বাকি সব সার জমি তৈরীর শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে গোবর সার জমিন চাষ দেওয়ার পূর্বেই জমিতে প্রয়োগ করা উত্তম। 

ইউরিয়া সার ২/৩ কিস্তিতে জমিতে প্রয়োগ করতে হয়। প্রথম কিস্তি চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর, পরবর্তী কিস্তিগুলো জমিতে উপরি প্রয়োগ করার মাধ্যমে ব্যবহার করা যেতে পারে। আধুনিক উপায়ে বেগুন চাষ পদ্ধতি জেনে নিন!

আগাছা ও সেচ ব্যবস্থাপনা 

জমিতে কোন অবস্থাতেই আগাছা জন্মাতে দেওয়া যাবে না। এতে করে জমির ফসলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। পালংশাকের পর্যাপ্ত ফলন পেতে হলে অবশ্যই আগাছা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। 

পালং শাকের জমিতে প্রচুর পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয়। ইউরিয়া সারের ওপরি প্রয়োগ করার পূর্বেই জমিতে পানি দিতে হবে। চারা গজানোর পর থেকেই জমির আদ্রতা অনুযায়ী নিয়মিত পানি দিতে হবে। 

গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য, মাটিতে রস ধরে রাখার জন্য মাটি কিছুদিন পরপর আলগা করে দিতে হবে। মাটিতে যাতপ সহজে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। 

পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা 

পালংশাকে মাঝে মাঝে কিছু ক্ষতিকারক পোকা লক্ষ্য করা যায় সেগুলো হলোঃ- উইপোকা, উড়চুঙ্গা, পাতা ছিদ্রকারী পোকা, পিঁপড়া ইত্যাদি। এসব পোকা আক্রমণ করলে প্রথমত গাছটি তুলে ফেলতে হবে। 

এছাড়াও পালং শাকে আরো কিছু রোগ দেখতে পাওয়া যায়। যেমন গোড়া পচা রোগ, পাতা ধ্বসা রোগ, পাতায় দাগ, ডাউনি মিলডিউ ইত্যাদি। এসব রোগের আক্রমণ দেখলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করলেই দমন হয়ে যাবে। 

ফলন

মূলত বীজ বপনের একমাস পর থেকেই পালংশাক সংগ্রহ করা যেতে পারে। পরবর্তীতে গাছে ফুল না আসা পর্যন্ত যেকোনো সময়েই। পালংশাক সংগ্রহ করা যায়। 

প্রতি শতকে ২৮-৩৭ কেজি, প্রতি একরে ২৮০০-৩৮০০ কেজি, প্রতি হেক্টরে ৭-৯ টন পর্যন্ত পালংশাকের ফলন পাওয়া সম্ভব। যে পদ্ধতিতে পুইশাক চাষ করলে অধিক লাভবান হবেন!

পালং শাকের পুষ্টিমান ও গুনাগুন 

আমাদের দেশে কয়েকটি পরিচিত শাকের মধ্যে পালং শাক একটি। পালং শাক রান্না করে কিংবা ভাজি করেও খাওয়া যায়।  আমাদের শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে পালংশাকের কোনো জুড়ি নেই। 

বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই থেকে দূরে রাখতেই শাক খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। পালং শাকে আছে প্রচুর পরিমাণে ঔষধি গুনাগুন।

প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে প্রোটিনের ২.০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ২.৮ গ্রাম, আশঁ ০.৭ গ্রাম, আয়রন আছে ১১.২ মিলিগ্রাম, ফসফরাস আছে ২০.৩ মিলি গ্রাম, এসিড (নিকোটিনিক) ০.৫ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লোবিন থাকে ৬৫২ মিলিগ্রাম।

অক্সালিক এসিড থাকে ৬৫২ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ২০৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ আছে ৯৩০০ আই. ইউ, ভিটামিন সি ২৭ মিলিগ্রাম, থায়ামিন. ০৩  মিলিগ্রাম ইত্যাদি পুষ্টিমান রয়েছে

পরিশেষে 

বর্তমান সময়ে শক্তিশালী এই শাকটি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে। অতএব উপরের পালং শাক চাষ পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হোন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top