পুইশাক চাষ : পুঁইশাক হচ্ছে এক প্রকার লতা জাতীয় উদ্ভিদ। আশঁ জাতীয় খাবারের মধ্যে অন্যতম একটি শাক পুইশাক। সব ধরনের শাক সবজিরই নিজস্ব কিছু গুণাগুণ আছে। গুণাগুণের দিক বিবেচনায় পুইশাকের কোন তুলনা হয় না। পুইশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান।
পুইশাক চাষ পদ্ধতি
ইতিহাস ও উৎস
পুইশাক একটি নরম বহুশাখা যুক্ত উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম হল Basella alba. এই শাকের ডাটা ও পাতা খাওয়া হয়ে থাকে। এর পাতাতে মৃদু সুগন্ধ আছে। এই সবজিটি বাঙালি রান্নায় বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ এসব জায়গায় পুইশাকের প্রচলন বেশি।
এই শাকটি সহজলভ্য আর বিভিন্ন গুণে সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এটি অনেকের কাছেই বেশ পছন্দের। পুইশাক সাধারণত দুই রকমের হয়ে থাকে সবুজ ও লাল। নানা রকমের পুষ্টিগুণ রয়েছে পুইশাকে। তাই আমাদের খাদ্য তালিকার মধ্যে এই পুষ্টিসমৃদ্ধ শাকটি যোগ করা প্রয়োজন। সফল হওয়ার জন্য জেনে নিন সঠিক মাশরুম চাষ পদ্ধতি!
মাটি নির্বাচন
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে পুইশাক ভালো জন্মায়। আর্দ্র ও গরম আবহাওয়া এবং রোদযুক্ত পরিবেশ পুইশাক গাছ জন্য সবচেয়ে উপযোগী। তাপমাত্রা কমে গেলে গাছের ফলন ও বৃদ্ধি কমে যেতে থাকে। মোটামুটি সব ধরনের মাটিতেই পুইশাক জন্মে।
পুইশাক গাছের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত মাটি হলো বেলে দোঁআশ থেকে এঁটেল দো-আঁশ মাটি। বাণিজ্যিকভাবে পুঁশাক চাষের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, দোআশঁ, বেলে-দোআঁশ ও এঁটেল মাটিযুক্ত জমি বেছে নিতে হবে।
জাত সমূহ
পুইশাকের মূলত দুইটি জাত লক্ষ্য করা যায়। একটির পাতা ও কান্ড লালচে এবং আরেকটির পাতা ও কান্ড সবুজ। এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত দুটি জাত হলো বারি-১, বারি-২। আরো জাতগুলো হলো বাসেলা রুব্রা, বাসেলা আলবা ইত্যাদি।
জমি তৈরি
জমির আগাছা সম্পূর্ণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে, ৫-৬ চাষ দিয়ে ভালোমতো মই দেওয়ার পর জমিকে প্রস্তুত করে রাখতে হবে। আগে চারা উৎপাদন করে ওই চারার বয়স ১০-১২ দিনের হলে মূল জমিতে রোপণ করা যায়।
পুইশাকের চারা রোপণের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ১ মিটার এবং চারা দেখে চারার দূরত্ব ৫০ সেন্টিমিটার হবে। অবশ্যই জমির মাটি ভালো ভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
বপন পদ্ধতি – পুঁইশাক চাষ
পুইশাক চাষ এ বীজ শোধন করে নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খেয়াল রাখতে হবে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক পানির সাথে মিশিয়ে বীজ শোধন করে নেওয়া যাবে। প্রতি শতকে ৮ থেকে ১০ গ্রাম বীজ ব্যবহার করা যেতে পারে।
আর ছিটিয়ে বুনলে বীজের পরিমাণ কিছুটা বেশি লাগতে পারে । বীজ বপনের জন্য তাপমাত্রা ১৮-২০ সেন্টিগ্রেড প্রয়োজন। তাই শীতের সময় যখন তাপমাত্রা কম থাকবে শেষ সময় বীজ বপন করা সবচেয়ে ভালো। বীজ বপনের একদিন আগে বীজ ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
সার প্রয়োগ
প্রথমে মনে রাখতে হবে ইউরিয়া সার ছাড়া বাকি সর সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করে দিতে হবে। পুইশাক চাষের ক্ষেত্রে শতকপ্রতি সারের পরিমাণ হলো গোবর ৬০ কেজি, সরিষার খৈল ৫০০ গ্রাম, ইউরিয়া ৮০০ গ্রাম, টিএসপি ৪০০ গ্রাম, এমওপি ৪০০ গ্রাম।
চারার বয়স যখন ১০-১২ দিন হবে তখন ইউরিয়া সার প্রথম কিস্তি দিতে হবে। তারপরের কিস্তি ৩০-৪০ দিন পর এবং শেষ কিস্তি হচ্ছে প্রথমবার ফসল তোলার পর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। আর গোবর ও টিএসপি অর্ধেক জমি তৈরির সময় এবং পরবর্তী অর্ধেক চারা রোপণের সময় গর্তে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সেচ ব্যবস্থাপনা
পুইশাক চাষ করার ক্ষেত্রে সেচ ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্ষাকালে শেষ দেওয়ার কোন প্রয়োজন পড়ে না। তবে মাটিতে রস না থাকলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে। কিছুদিন পর পর অবশ্যই মাটি আলগা করে দিতে হবে।
আগাছা পরিষ্কার করতে হবে নিয়মিত। ফলন বেশি পেতে হলে বাউনির ব্যবস্থা করতে হবে। গাছের গোড়ায় কোন অবস্থাতেই পানি জমতে দেওয়া যাবে না। গাছের গোড়ায় যদি পানি জমে যায় তাহলে গাছ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন
পুইশাক গাছে তেমন কোনো রোগ বালাই দেখতে পাওয়া যায় না। পুইশাকের পাতায় বিটল বা ফ্লি ছাড়া আর কোন পোকা তেমন কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারে না। এই পোকাটি পাতাকে ছোট ছোট করে ছিদ্র করে ফেলে।
সারকোস্পোরা পাতার দাগ হচ্ছে পুইশাকের একটি মারাত্মক রোগ। এগুলো সঠিক ভাবে কীটনাশক স্প্রে করলে দূর হয়ে যায়। অনুমোদিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করে সব রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ফলন
পুইশাকের ডগা মাঝে মাঝে কেটে সংগ্রহ করতে হয়। এতে করে শাক খাওয়াও হয় আবার নতুন নতুন ডগাও বের হতে থাকে। পুইশাকের ফলন মূলত প্রতি শতকে ২০০ থেকে ২৮০ কেজি হয়ে থাকে। আরে হেক্টর প্রতি ফলন ৫০-৭০ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। লাল শাকের সঠিক চাষ পদ্ধতি জেনে নিন!
পুইশাকের পুষ্টি গুনাগুন
মূলত পুইশাকের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন বি’, সি’ ও এ। তাছাড়া এ শাকে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং আয়রন। বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন সমৃদ্ধ পুইশাক মানব দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং এটি ত্বকের সৌন্দর্য অধিক হারে বৃদ্ধি করে।
পুইশাকে আছে অধিক পরিমাণে ঔষধিগুণ। আমরা সবাই জানি পুইশাকের পুষ্টিগুণ অত্যাধিক। এই শাকটি নানা ধরনের রোগ নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতামত অনুযায়ী খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম পুইশাকে রয়েছে ২.২ গ্রাম প্রোটিন, ৪.২ গ্রাম শর্করা, ০.২ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি, ০.০২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১(থায়ামিন), ০.৩৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২(রাইবোফ্লাভিন), ৬৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১৬৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১০ মিলিগ্রাম লৌহ, ১২৭৫০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন এবং ২৭ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি থাকে।
শেষ কথা
বর্তমানে শক্তিশালী এ ফসল দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। তাই পুইশাক চাষ করে স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী হতে পারেন। আসুন বেশি করে সবজি উৎপাদন করি দেশকে সমৃদ্ধ করি।
আপনার নামের অর্থ জানতে ভিজিট করুন-