বেগুন চাষ পদ্ধতি : বেগুন বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় একটি সবজি। নিরাপদ ভাবে বেগুন চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জাত নির্বাচন করা। ভালো ফলন পেতে হলে বেগুনের জাতের বৈশিষ্ট্য বালাই দমন ও সার ব্যবস্থাপনা সবগুলি সঠিক ভাবে থাকতে হবে।
বেগুন চাষ পদ্ধতি
বাংলাদেশে প্রায় শতাধিক জাতের মত বেগুন দেখতে পাওয়া যায়। বেগুন ভারতীয় উপমহাদেশের একটি জনপ্রিয় সবজি হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশ ভারত, পাকিস্তান, চীন এবং ফিলিপাইনসহ এসব দেশগুলোতে বেগুন এর গুরুত্ব একটু বেশি।
বেগুনের জাত
বাংলাদেশে প্রাপ্ত জাতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো ইসলামপুরী নয়নতারা, খটখটিয়া, শিংনাথ, কাজলা, তারাপুরী, ঋুটি, পটলা, কাজলা ইত্যাদি হল স্থানীয় জাত। উন্নত জাত গুলো হল বারি ও হাইব্রিড জাত যেগুলো সারা বছর ফলন দিয়ে থাকে।
চারা উৎপাদন
হালকা বেলে থেকে ভারী কাদামাটি বেগুন চাষের জন্য উপযুক্ত। তবে সব ধরনের মাটিতেই প্রায় বেগুন চাষ করা যায়। অবশ্যই নিষ্কাশিত মাটি বেছে নিতে হবে। মাটিতে প্রচুর জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ থাকতে হবে। বেগুনের উচ্চ পলনের জন্য এটেল দোআঁশ এবং বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে কার্যকরী।
বেগুন চাষ পদ্ধতির প্রথম ধাপ হচ্ছে সঠিক ভাবে মাটি নির্বাচন করা। মাটি তৈরি করতে হলে প্রথমে মাটিতে আগাছা দমন করতে হবে। শীতকালীন বেগুন চাষের ক্ষেত্রে আগস্ট ও অক্টোবরে বীজ বপন করা যেতে পারে।
বর্ষাকালীন বেগুন চাষের ক্ষেত্রে জানুয়ারি-এপ্রিলে বীজতলায় বীজ বপন করা ভালো। বীজতলায় বীজ উৎপাদন সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য মাটিতে প্রয়োজন অনুযায়ী কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
যদিও বাংলাদেশে বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে বেগুন উৎপাদনে শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। বাংলা চারা উৎপাদনের পর মূল জমিতে চারা সারি থেকে সারি বেঁধে লাগাতে হবে।
সার প্রয়োগ
ফসলের প্রয়োজন অনুযায়ী মাটিতে পানি সরবরাহ করতে হবে। বেগুনের ভালো ফলনের জন্য পানি সেচ নিয়মিত দিতে হবে। সর্বোত্তম আদ্রতা স্তর এবং মাটির উর্বরতা অবস্থায় উচ্চ ফলন পাওয়া যায়।শীতকালে পানি সেচ খুব একটা বেশি প্রয়োজন হয় না।
বেগুনের জাতের ক্ষমতা অনুযায়ী সার প্রয়োগ করা উচিত। গাছের পরিস্থিতি বিবেচনা করে চুন প্রয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো। গ্রহণের সময় মূল জমিতে কেজি অ্যাজেস্পিরিয়াম এবং ফসফোব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। বেগুনের হাইব্রিড জাতের ক্ষেত্রে একটি বেশি সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্রয়োগ তালিকা
1. সারের নাম | 2. পরিমাণ/টব | 3. পরিমাণ/হেক্টর |
গোবর/ কম্পোস্ট | ১.৫ কেজি, | ১০,০০০ কেজি |
ইউরিয়া | ৪০ গ্রাম | ৩০০ কেজি |
টিএসপি | ৪০ গ্রাম | ২৫০ কেজি |
এমওপি | ৩০ গ্রাম | ২০০ কেজি |
জিপসাম | ৬ গ্রাম | ১০০ কেজি |
বোরিক এসিড (বোরন) | – | ১০ কেজি |
বেগুনের কীটপতঙ্গ ও রোগ
কীটপতঙ্গ রোগের বিরুদ্ধে প্রথম সর্তকতা অন্নপ্রাশনের আবর্তন ও চাষ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা। তারপর দ্বিতীয় শর্তটি হলো প্রত্যায়িত রোগমুক্ত বীজ ও চারা সংগ্রহ করা।
বেগুনের কীটনাশক
কলোরাডো পটেটো বিটল ই
কলোরাডো পোকা বেগুনে আক্রমণ করে। আর বিটল শীতকালে মাটিতে থাকে ও বসন্তকালে প্রজননের জন্য বেগুনে ঢুকে। বিটলের লাফরা বেগুনের পাতাগুলো প্রাথমিক চিবিয়ে খেয়ে ফেলে তারপর ফসলের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে।
এই পোকা দমন করতে হলে জৈবিক সমাধান ও রাসায়নিক সমাধান আছে। তবে অবশ্যই সর্বদায় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী লাইসেন্সপ্রাপ্ত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। রোগ অনুযায়ী এসিআই কীটনাশক তালিকা জেনে নিন!
লিলিওমাইজা
এটি হচ্ছে বেগুনের অন্যতম প্রধান শত্রু। এটি একটি ছোট মাছির মতো। তবে এটি পোকার লার্ভা বেগুনের পাতা আক্রমণ করে যা বৈশিষ্ট্যগত সাদা স্টোস ও গর্ত সৃষ্টি করে। এর ফলে দেখা যায় সালোক সংশ্লেষণে অক্ষমতার কারণে পাতা ঝরে পড়ে।
বেগুন চাষ পদ্ধতি তে রোগ নিরাময়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সঠিক পরামর্শ অনুযায়ী লাইসেন্সপ্রাপ্ত কীটনাশক বেগুন গাছে স্প্রে করতে হবে।
বেগুনের রোগ দমন ব্যবস্থাপনা
বেগুনের গাছে যে সমস্ত রোগ দেখা দেয় তা হলো গোড়া পচা, ক্ষুদে পাতা রোগ, ঢলেপড়া ইত্যাদি। ভার্টিসিলিয়াম ডাহলিয়া একটি মারাত্মক ছত্রাক জীবাণু যা বেগুনকে আক্রমণ করে গাছকে মেরে ফেলে। এ রোগের আক্রমণের ফলে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়। সঠিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ফাইটোফথেরা হলো আরো একটি বেগুনের মারাত্মক ছত্রাক জাতীয় রোগ । এটি ছত্রাকজাতীয় জীবাণুর মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকে। এই লক্ষণগুলি সাধারণত পাতায় দেখা যায়। এ রোগ দেখা দিলে গাছের পাতা সাদা, হলুদ রঙের হয়ে যায়। এর জন্য সঠিকভাবে সঠিক প্রতিষেধক ব্যবস্থা করাই উত্তম।
রোগের তালিকা
জাত | ঢলেপড়া রোগ রোধ | ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকারোধ |
উত্তরা | সহনশীল | মাঝারিরোধক |
তারাপুরী | প্রতিরোধক | প্রতিরোধক নয় |
কাজলা | সহনশীল | মাঝারিরোধক |
নয়নতারা | মাঝারিরোধক | মাঝারিরোধক |
ইসলামপুরী | মাঝারিরোধক | প্রতিরোধক নয় |
শিংনাথ | মাঝারিরোধক | মাঝারিরোধক |
খটখটিয়া | মাঝারিরোধক | মাঝারিরোধক |
ভাংগুরা | মাঝারিরোধক | প্রতিরোধক নয় |
বেগুনের ফসল কাটা
বেগুন গাছে রোপনের ৬০-৮০ দিনের মধ্যে পলন কটার উপযুক্ত হয়। যারা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বেগুনের চাষ করে তাদেরকে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পরামর্শের মাধ্যমে ফসল সংগ্রহ করতে কৃষি অফিসাররা সহায়তা করে থাকে। আর বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা কৃষকদের অভিজ্ঞতা একটু বেশি থাকে।
বেগুন পূর্ণ আকার এবং পরিপক্ক হলেই বেগুন সংগ্রহ করতে হয়। কোমল উজ্জ্বল রং এবং ফলের চকচকে চেহারা ফল সংগ্রহের জন্য সবচেয়ে সর্বোত্তম পর্যায়। অনেক সময় ফলন ঋতুতে থেকে ঋতুতে বিভিন্ন প্রকার হয়। এছাড়াও স্থান ভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। এ বিষয়টি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
অতএব উপরের উল্লেখিত সঠিক নিয়ম গুলো মেনে বেগুন চাষ পদ্ধতি এর মাধ্যমে বেগুন চাষ করা গেলে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব।