মরিচ গাছের পাতা কোকড়ানো রোগ খুবই জটিল একটি সমস্যা। মরিচ একটি জনপ্রিয় সবজি ও মসলাও বটে। মরিচ বাংলাদেশের সব জেলাতেই কম বেশি চাষ করা হয়ে থাকে। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে মরিচ চাষ করে কৃষকরা অনেক লাভবান হচ্ছেন।
মরিচ গাছের পাতা কোকড়ানো রোগ
প্রথমত মরিচ গাছের কিছু সাধারণ সমস্যা দেখতে পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটি হচ্ছে মরিচ গাছের পাতা কোকড়ানো রোগ। এটি একটি মারাত্মক রোগ। এই রোগটি দুইভাবে ছড়িয়ে থাকে। একটা হচ্ছে ভাইরাসের মাধ্যমে আরেকটা হচ্ছে মাকড়ের মাধ্যমে।
মরিচ গাছের পাতা কোকড়ানো রোগ টি নিত্যনৈমিত্তিক যন্ত্রণার ব্যাপার। এই রোগটি কৃষকদেরকে অনেক ভুগিয়ে থাকে। লাল মাকড় এফিট বা জাব পকা এবং সাদা মাছি ইত্যাদির পোকার মাধ্যমে এই রোগটি ছড়িয়ে থাকে। লাল শাকের সঠিক চাষ পদ্ধতি জেনে নিন!
এ রোগের লক্ষণসমূহ
- গাছের পাতাগুলো কুৃঁচকানো থাকে
- পাতাগুলো বিকৃত আকার ধারণ করে
- শারীরিক বিকাশ ও বৃদ্ধি ব্যাহত হয়
- মরিচের পাতাগুলো ছোট হয়ে যাওয়া
- গাছ পুরোপুরি দুর্বল হয়ে যায়
- পাতার রং বাদামী রঙের হয়ে যায়
- গাছের ফলন একেবারেই কমে যায়
- বয়স্ক পাতাগুলো শক্ত এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়
- গাছকে দেখতে ঝোপের মত দেখা যায়
রোগের বিস্তার প্রকৃতি
এ রোগটি মূলত বিজ থেকে ছড়ায় না। এটি ছড়িয়ে থাকে সংক্রমিত চারা ও আগাছা থেকে। এ রোগটির বাহক সাদা মাছি, থ্রিপস ইত্যাদি। নার্সারিতে অন্যান্য কোন গাছের মধ্যে এ রোগটি ছড়িয়ে থাকে তাহলে সেখান থেকে সুস্থ গাছেও ছড়িয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা
- কোঁকড়ানো পাতার পরিমাণ যদি কম হয়ে থাকে তাহলে সেগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে।
- মরিচ ক্ষেতকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে সবসময়।
- গাছে পরিষ্কার পানি স্প্রে করা যেতে পারে।
- এ রোগটি এড়াতে প্রাকৃতিক ওষুধ সুরক্ষার জন্য হলদ স্টিক ট্যাপের ব্যবহার করা যেতে পারে।
- প্রাকৃতিক বালাই নাশক হিসেবে নিমের স্প্রে করা যেতে পারে
- মরিচের সাথে আন্তঃফসল হিসেবে অন্যান্য ফসল চাষ করলে রোগের মাত্রা কিছুটা কমবে।
- আক্রমণের মাত্রা যদি অতিরিক্ত হয়ে থাকে তাহলে থাইমেটয়েড ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে মিশিয়ে সম্পূর্ণ বাগানের স্প্রে করতে হবে।
- পোকার মাত্রা বেশি হলে এডমেরার ২০ এসএল ০.৫ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
- সবচেয়ে উত্তম হয় চারা রোপণের ১০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে নিয়মিত এডমেরার জমিতে স্প্রে করা।
- সাদা মাছির বংশ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতেন নিম তেল বা পেট্রোলিয়াম সম্মৃদ্ধ তেল ব্যবহার করুন।
- বিশেষ একটি রাসায়নিক ডিনোটেপুরান সর্বশেষ প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আর কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
বায়ুপ্রবাহ বৃদ্ধি করুন। পরিবেশগত অবস্থা বিশেষ করে দুর্বল বায়ু সঞ্চালনের কারণে উদ্ভিদের ক্ষতি হয়ে থাকে। গাছে পর্যন্ত বায়ু সঞ্চালনের জন্য স্ফটিক পাম্প ব্যবহার করা যেতে পারে।
মাটিতে ক্যালসিয়াম আছে তা খেয়াল রাখুন। মরিচ গাছের জমির মাটিতে সঠিকভাবে ক্যালসিয়াম থাকতে হবে। তাহলে গাছ অনেক শক্তিশালী ভাবে বেড়ে উঠবে। জমিতে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে বাতা ও ফল বিকৃত আকার ধারণ করে।
টডে মরিচ রোপনের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়ামের অভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়। এজন্যই টবের মাটির উপাদানগুলো বিশেষভাবে পরীক্ষা করে নিন। মাটিতে ক্যালসিয়ামের অভাব থাকলে সার দিয়ে ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করুন।
অতিরিক্ত পানি দেওয়া যাবে না। মরিচ ক্ষেতে অতিরিক্ত বানিয়ে দেওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত পানি দেওয়ার কারণে গাছের পাতা কুঁচকানো রোগ দেখা দিতে পারে।
শেষ কথা।
উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারি যে, মরিচ গাছের পাতা কোকড়ানো রোগ খুবই মারাত্মক। এই রোগটি আক্রমণ করার আগে যদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তাহলে মরিচ চাষে সফল হওয়া যাবে।
তাই আমাদের উচিত মরিচ চাষের পূর্বে মাটিকে ভালোভাবে শোধন করে নেওয়া। যাতে মাটিতে এ রোগের জীবাণু বংশবিস্তার করতে না পারে।