লেয়ার মুরগি পালন

লেয়ার মুরগি পালন এর সঠিক পদ্ধতি জানুন!

লেয়ার মুরগি পালন : লেয়ার মুরগি একটি উন্নত জাতের মুরগি। এ জাতের মুরগিগুলো অধিক পরিমাণে ডিম দিতে সক্ষম। মূলত ডিম উৎপাদনের জন্যই লেয়ার মুরগি পালন করা হয়।

অনেকে আধুনিক জাতের লেয়ার মুরগিকে ডিমের মেশিন হিসেবে আখ্যায়িত  করে থাকে। একটি লেয়ার মুরগি বছরে ৩০০ থেকে ৩৪০ টি পর্যন্ত ডিম দিতে সক্ষম।

লেয়ার মুরগি পালন

বর্তমানে লেয়ার মুরগি লালন পালন করে অনেক বেকার যুবক নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে। লেয়ার মুরগি পালন করে অনেক লাভবান হওয়া যায়। অন্যান্য জাতের মুরগির তুলনায় এদের মাংস ও ডিম বেশি হয়ে থাকে। তাহলে আসুন জেনে নেয়া যাক লেয়ার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে।

লেয়ার মুরগির বাসস্থান তৈরি 

পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পাওয়া যায় প্রথমত এরকম একটা জায়গা নির্বাচন করতে হবে। লেয়ার মুরগির ঘরের মেঝেতে তুষ, কুড়া, করাতের গুড়া, বালু ইত্যাদি ভিজিয়ে রাখতে হবে। ৪ ফুট ব্যাসের ১টি ব্রুডারে ৫০০ টি লেয়ার মুরগির বাচ্চা লালন পালন করা যাবে। 

লেয়ার মুরগির বাসস্থান এর ভিতর সার্বক্ষণিক ১০০ ওয়ার্ডের  ৩ – ৪ টা  বাল্ব রাখতে হবে। বাচ্চার ঘরের আর্দ্রতা ৫৫-৬৫% পর্যন্ত সবচেয়ে ভাল। বাসস্থানের  মেঝে যাতে কখনোই সেতসেতে না থাকে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। দেশি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন!

লেয়ার মুরগি নির্বাচন  

প্রথমত গুণগতমানের লেয়ার মুরগির  বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। লেয়ার মুরগির জন্য সঠিকভাবে ভালো উৎপাদনশীল স্ট্রেইন নির্বাচন করতে হবে। লেয়ার মুরগি দুই ধরনের হয়ে থাকে। ১. সাদা ডিম উৎপাদনকারী  ও ২. বাদামি ডিম উৎপাদনকারী

ক.  সাদা ডিম উৎপাদনকারী   

এ ধরনের মুরগি তুলনামূলকভাবে ছোট হয়ে থাকে। এরা খাবার কম খায় ও এদের ডিমের রং সাদা। এদের কয়েকটি জাতের নাম হলো ইসা হোয়াইট, লোহাম্যান হোয়াইট, হাই সেক্স হোয়াইট, শেভার হোয়াইট  ইত্যাদি। 

খ.  বাদামি ডিম উৎপাদনকারী  

এ ধরনের মুরগি তুলনামূলক আকারে বড় হয়। এরা খাদ্য বেশি খায়, ডিমের আকার বড় ও বাদামী রঙের হয়ে থাকে। এদের কয়েকটি জাতের নাম হল ইসা, ব্রাউন, হাইর সেক্স ড্রাইন, হাবার্ড ব্রাউন, ব্যবালোনা হাররো ইত্যাদি।

বাচ্চা সংগ্রহ লেয়ার মুরগি পালন 

উন্নত মানের লেয়ার মুরগির বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। বাচ্চাগুলো যাতে সম্পূর্ণ সুস্থ হয় সে বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। সংগ্রহ করা বাচ্চা লেয়ার মুরগির একটু বাড়তি যত্ন নিতে হবে, নিয়মিত খাবার দিতে হবে। 

খাদ্য ব্যবস্থাপনা 

আমাদের দেশে অনেকগুলো কোম্পানি লেয়ার মুরগির খাদ্য তৈরি করে থাকে। একেক ধরনের খাবার একেক ধরনের  গুণগত মান থাকে। আপনার মুরগীর ঠিক কোন ধরনের খাদ্য প্রয়োজন হবে সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।  তো চলুন জেনে নেওয়া যাক আদর্শ লেয়ার এর খাদ্য তালিকা। 

  • লেয়ার স্টার্টার (০-৬) সপ্তাহ 
  • লেয়ার গ্রোয়ার (৭-১৬) সপ্তাহ 
  • প্রি-লেয়ার (১৭-২২) সপ্তাহ 
  • লেয়ার লেয়ার ১ (২৩-৬০) সপ্তাহ 
  • লেয়ার লেয়ার ২ (৬০-৯৫) সপ্তাহ 

নিচে উক্ত খাদ্য তালিকা অনুযায়ী করা যাক। 

খাদ্য উপাদানস্টার্টারগ্রোয়ারপ্রিলেয়ারলেয়ার ১লেয়ার ২
ভূট্টা৫২ কেজি৫৩.৫ কেজি৫৪.৫ কেজি৫৫ কেজি৫৬ কেজি
সয়াবিন মিল২৬ কেজি২৫ কেজি২২.৫ কেজি২৩ কেজি২২ কেজি
রাইচ পালিশ১০ কেজি১০ কেজি১২ কেজি৮ কেজি৭.৫ কেজি
প্রোটিন ৬০%৭ কেজি৬ কেজি৫ কেজি৪ কেজি৩ কেজি
ঝিনুক চূর্ণ২ কেজি২.৫            কেজি৩ কেজি৮ কেজি১০ কেজি
লবণ৩০০ গ্রাম২৮০ গ্রাম২৫০ গ্রাম২৮০ গ্রাম২৮০ গ্রাম
ডিসিপি৩০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম২৫০ গ্রাম৫০০ গ্রাম৫০০ গ্রাম
*সালমোনেলা কিলার৩০০ গ্রাম২৫০ গ্রাম২৫০ গ্রাম৩০০ গ্রাম৩২০ গ্রাম
*প্রিমিক্স২০০ গ্রাম২৫০ গ্রাম২০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম
ডিএল- মিথিওনিন১৫০ গ্রাম১৩৫ গ্রাম১২০ গ্রাম১৩০ গ্রাম১২৫ গ্রাম
এল-লাইসিন১০০ গ্রাম৯০ গ্রাম৭০ গ্রাম৮০ গ্রাম৬০ গ্রাম
কোলিন ক্লোরাইড৬০ গ্রাম৫০ গ্রাম৪০ গ্রাম৫০ গ্রাম৫০ গ্রাম
*টক্সিন বাইন্ডার১২৫ গ্রাম১৩৫ গ্রাম১৫০ গ্রাম১৫০ গ্রাম১৫০ গ্রাম
সোডা৫০ গ্রাম৭৫ গ্রাম
*সয়াবিন তেল২০০ গ্রাম১৫০ গ্রাম১০০ গ্রাম
মোটঃ১০০ কেজি১০০ কেজি১০০ কেজি১০০ কেজি১০০ কেজি

লেয়ার মুরগির রোগ 

যদিও লেয়ার মুরগি পালনে খুব একটা রোগ বলাই দেখতে পাওয়া যায় না। লেয়ার মুরগি পরিবেশগত কারণে অনেক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ভাইরাসের কারণে অনেক সময় দেখা যায় খামারে রোগবালাই অধিক মাত্রায়  ছড়িয়ে পড়ে। 

নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে টিকা প্রদান করতে ব্যর্থ হলে খামারে রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ে। 

লেয়ার মুরগির বিশেষ কয়েকটি রোগ হচ্ছে এভিয়ান ফক্স,  কলেরা,  কক্সিডিওসিস, গামবোরা, রানীক্ষেত ইতাদি। লেয়ার মুরগি কে সবসময় সুস্থ সবল রাখতে হলে প্রয়োজনের দিক বিবেচনায় টিকা প্রদান করতে হবে। ব্রয়লার মুরগির রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন!

চিকিৎসা পদ্ধতি 

উপরে উল্লিখিত রোগ গুলোর মধ্যে কয়েকটি রয়েছে ভাইরাসজনিত যাদের চিকিৎসা নেই বললেই চলে। এ সব  ভাইরাস জনিত রোগ থেকে খামারকে রক্ষা করতে হলে সময় মতো টিকা প্রদান করাই একমাত্র উপায়। 

আর যদি খামারে অতিরিক্ত মাত্রায় রোগ ছড়িয়ে পড়ে তাহলে আক্রান্ত মুরগিগুলোকে সুস্থ মুরগি গুলো থেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।  যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুস্থ মুরগিগুলোকে যে রোগে আক্রান্ত হয়েছে সে রোগ প্রতিরোধক টিকা প্রদান করতে হবে। 

কোন প্রকার ভাইরাসজনিত রোগ যাতে খামারে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে খামারে স্প্রে করতে হবে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস যাতে খামারে প্রবেশ করে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।  

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top