কচু চাষ পদ্ধতি

কচু চাষ পদ্ধতি। সঠিক নিয়মে যেভাবে কচু চাষ করবেন জেনে নিন!

কচু চাষ পদ্ধতি : কচু হচ্ছে আমাদের দেশের অতিব পরিচিত একটি সবজির নাম। কচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি গুনাগুন। কচু, কচু শাক, কচুর লতি সবকিছুই পুষ্টিকর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সবজি হিসেবে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে কচু বেশ পুরোনো। 

Table of Contents

কচু চাষ পদ্ধতি 

উৎস ও ইতিহাস 

কচু হচ্ছে Araceae গোত্রভুক্ত এক ধরনের কোন্দ জাতীয় উদ্ভিদ। বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মতে কচুর উৎপত্তি ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। এখন থেকে প্রায় ২ হাজার বছর পূর্বেও কচুর চাষ হয়েছিল। 

কচুর ইংরেজি নাম হলো Colocasia esculenta. কচুর একটি বিশেষত্ব হলো এটি জলভূমি ও স্থলভূমি উভয় জায়গাতে জন্মাতে পারে। কচুতে বহু ধরনের আয়ুর্বেদিক গুনাগুণ লক্ষ করা যায় । 

খাবার উপযোগী কচুর জাতগুলো হল পঞ্চমুখী কচু, পানি কচু, মুখী কচু, সাইদ নাইল, ওল কচু, দুধ কচু, মান কচু, শোলা কচু ইত্যাদি। বর্তমানে নাইজেরিয়া হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কচু উৎপাদনকারী দেশ। 

উপযুক্ত মাটি 

পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ পলি দোঁআশ থেকে এঁটেল দো-আঁশ মাটি কচু চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। বেলে মাটিতে রস ধরে রাখা যায়না বলে কচু চাষের জন্য এই মাটি অনুপোযোগী। 

উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে কচু চাষ করলে বন্যার ঝুঁকি থাকে না। তবে জমিতে যাতে সব সময় ছিপছিপে পানি থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। জমিতে পানির গভীরতা ৮/১০ সেন্টিমিটার হলে ভালো হয়। যে পদ্ধতিতে পুইশাক চাষ করলে অধিক লাভবান হবেন!

জাত সমূহ 

বাংলাদেশে কচুর বিভিন্ন  জাত থাকলেও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত জাতগুলো চাষ করলে অধিক ফলন পাওয়া যায়। সেগুলো হলোঃ- বারি কচু (লতিরাজ), বারি কচু -২,বারি কচু -৩, বারি কচু -৪, বারি কচু -৫, বারি কচু -৬ ইত্যাদি। 

রোপনের সময় 

আগাম ফসলের ক্ষেত্রে কার্তিক (মধ্য অক্টোবরে থেকে মধ্য নভেম্ব) পর্যন্ত। নাবি ফসলের ক্ষেত্রে মধ্য ফাগুন থেকে মধ্য বৈশাখ (মার্চ-এপ্রিল) মাসে লাগানো সবচেয়ে ভালো। 

দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যেকোনো সময় কচু লাগানো যেতে পারে। আর খরিপ মৌসুমে কচুর লতি পাওয়া যায়, জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাস রোপণের জন্য উপযুক্ত। 

কচু চাষ পদ্ধতি তে জমি তৈরি 

কচু চাষের জন্য জমি শুকনো অথবা ভেজা অবস্থাতেই প্রস্তুত করা যায়। শুকনো অবস্থায় জমি তৈরি করার ক্ষেত্রে ৪/৫ টি চাষ দিতে হবে। তারপর ভালোভাবে মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে । 

ভেজা জমি তৈরি করার জন্য একটি সহজ পদ্ধতি হচ্ছে ধান রোপনের  জন্য যেভাবে জমি কাঁদাময় করা হয় ঠিক সেভাবে তৈরি করা যায়। জমি অবশ্যই জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হতে হবে। 

চারা রোপণ  

সম্পূর্ণভাবে জমি প্রস্তুত করার পর প্রতি শতকে প্রায় ১৫০ টি লতা রোপণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। জমিকে ভালোভাবে তৈরি করার পর লাইন করে চারা রোপণ করতে হবে। 

লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব হবে ২ ফুট (৬০ সেন্টিমিটার) এবং চারা থেকে চারা দূরত্ব হবে ১.৫ ফুট (৪৫ সেন্টিমিটার)।  বর্ষার সময় জমির পানি ১০ সেন্টিমিটার এর উপরে থাকলে পানি অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে। 

জমিতে সার প্রয়োগ 

কচু চাষ পদ্ধতি তে সার ব্যবস্থাপনা একটি অতীব প্রয়োজনীয় বিষয়। প্রথমত গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট, বোরিক অ্যাসিড ও অর্ধেকই এমওপি  জমি তৈরি সময় শেষ চাষের সাথে জমিতে ভালোভাবে প্রয়োগ করে দিতে হবে। 

হেক্টর প্রতি জমিতে সারের পরিমাণ জৈবসার ১৫ টন, ইউরিয়া ১৫০ কেজি, টিএসপি ১২৫ কেজি, এমওপি ১৭৫ কেজি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে কচু চাষের ক্ষেত্রে ইউরিয়া সার ৫ কিস্তিতে জমিতে ব্যবহার করতে হবে। 

পরবর্তীতে চারা রোপণের দেড় অথবা দুমাস পরে অর্ধেকই এমওপি ইউরিয়া সার জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে। কচুর জমিতে ইউরিয়া সার ৫ ভাগে দিতে হয় ১৫ দিন পর পর। 

কচুর জমিতে সার প্রয়োগ তালিকা 

সারের নাম        সারের পরিমাণ ( প্রতি শতকে) ইউরিয়া       ৬০০ গ্রাম টিএসপি     ৫০০ গ্রাম এমওপি      ৭৫০ গ্রাম গোবর       ৫০ কেজি
কচু চাষ পদ্ধতি

আগাছা ও সেচ ব্যবস্থাপনা 

কচু গাছের গোড়ায় সবসময় ছিপছিপে পানি ধরে রাখতে হবে। এরপর কিছুদিন পরপর পানিগুলো নাড়িয়ে দিতে হবে। কচু জমিতে সবসময় পানির গভীরতা ৮/১০ সেন্টিমিটার হওয়া প্রয়োজন। 

গাছ তুলনামূলক একটু বড় হলে গোড়ায় থাকা হলুদ পাতাগুলো ছাটাই করে দিতে হবে। নিয়মিত ক্ষেত পরিচর্যা করতে হবে। সকল প্রকার আগাছা থেকে জমিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। 

চারা রোপণের পর থেকে ৩ মাসের মধ্যে খেতে যাতে কোন প্রকার আগাছা না থাকে সে বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। যখন খেতে ফলন আসবে তখন খেতে পানি রাখার প্রয়োজন নেই। 

পোকামাকড় দমন

প্রথমত কচুর জমিতে যেসকল রোগ দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো হলো জাবপোকা, লাল মাকড়, লেদা পোকা, পাতা ঝলসানো রোগ ইত্যাদি। এসব পোকার আক্রমণে কচু খেতের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। 

এসব রোগ রোগ থেকে কচুক্ষেতকে মুক্ত করতে অনুমোদিত বালাইনাশক হলোঃ- ট্রেসার ৪৫ এসসি, এডমারার ১০০ এসপি, রিডোমিড গোল্ড, টিন্ট ইত্যাদি সঠিক পরিমাণে অনুমোদিত মাত্রায় জমিতে স্প্রে করতে হবে। 

ফসল সংগ্রহ 

চারা রোপণের ২ মাস পর থেকে ৭ মাস পর্যন্ত কচুর লতি সংগ্রহ করা যায়। বাজারে প্রতিমন লতি বিক্রি করা হয়ে থাকে ১২০০-১৪০০ টাকা পর্যন্ত। আরে কান্ড বিক্রি হয় ৮০০ টাকা মণ দরে। 

পরিশেষে দেখা যায় এক বিঘা জমিতে লতি ও কান্ড মিলে বিক্রি করে ৭০-৯০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। কৃষকদের সব ধরনের খরচ বাদ দিয়ে লাভ ৫০/৬০ টাকা থাকে। আধুনিক বোর ধান চাষ পদ্ধতি জেনে নিন!

শেষকথা

উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারি যে সঠিক কচু চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে কচু চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। আর বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারেও কচুর বিপুল  চাহিদা রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top