কীটনাশকের নাম ও ব্যবহার

কীটনাশকের নামের তালিকা ও সঠিক ব্যবহার জেনে নিন!

কীটনাশকের নাম ও ব্যবহার : কীটনাশক হচ্ছে এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ যা কীটপতঙ্গ মেরে ফেলতে বা অপসারণ করতে সাহায্য করে থাকে। রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে কীটনাশক প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। যা পোকামাকর নির্মূলের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

কীটনাশকের নাম ও ব্যবহার 

কীটনাশক এর প্রকারভেদ 

কীটনাশক মূলত দুই প্রকার। যথাঃ-

  1. জৈব কীটনাশকঃ ক্লোরিন, সালফার আর্সেনিক, লেড ইত্যাদি। 
  2. জৈব কীটনাশকঃ এটি আবার দুই প্রকার।
    • উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত কীটনাশকঃ নিকোটিন, রোটেনন, পাইথ্রিন ইত্যাদি 
    • কৃত্রিম রাসায়নিকঃ ডিডিটি, গ্যামাক্সিন, সেভেন, প্যারাফিন, ডায়াজিনন, ম্যালানিয়ম ইত্যাদি। 

বিষক্রিয়ার ধরন 

বিষক্রিয়ার ধরন অনুসারে কীটনাশক ৮ ধরনের হয়ে থাকে।

  • পাকস্থলী বিষ
  • স্পর্শ বিষ
  • আকর্ষক
  • খাদ্য অনীহা কারক  
  • বিকর্ষক 
  • প্রদাহ বিষ
  • ধূমায়িত বিষ
  • রাসায়নিক বন্ধ্যা কারক  

কার্যকারিতার স্থান 

কার্যকারিতার স্থান অনুসারে কীটনাশক ৫ ধরনের হয়ে থাকে। 

  • দেহ বিষ
  • শ্বাসতন্ত্র বিষ
  • পেট্রো প্লাজমিক বিষ
  • স্নায়ু বিষ
  • পাকস্থলী বিষ

প্রকারভেদে কীটনাশকের তালিকা 

কীটনাশকের প্রকারলক্ষ্য পোকা গোষ্ঠী
অ্যালজিসাইড বা শ্যাওলানাশকশৈবাল
অ্যাভিসাইডসপাখি
ব্যাকটেরিয়ানাশকব্যাকটেরিয়া
ছত্রাকনাশকছত্রাক এবং oomycetes
হার্বিসাইডউদ্ভিদ
কীটনাশকপোকামাকড়
ল্যাম্প্রিসাইডসল্যাম্প্রেস [3]
মাইটিসাইড বা অ্যাকারিসাইডসমাইটস
মোল্লাসাইডসশামুক
নেমাটিকসনেমাটোড
ইঁদুরনাশকইঁদুর
স্লিমিসাইডসশেওলা , ব্যাকটেরিয়া , ছত্রাক এবং স্লাইম মোল্ড
ভাইরাসঘটিতভাইরাস
কীটনাশকের নাম ও ব্যবহার

কীটনাশকের নাম 

কীটনাশকের নাম ও ব্যবহার বিধি সম্পর্কে কৃষকদের সঠিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এতে করে তারা ফসলের ক্ষতি রোধ করতে সক্ষম হবে। কীটনাশক শুধু শস্যের পোকা ছাটাই করে না, বরঞ্চ মাটিতে থাকা পোকামাকড় কে ধ্বংস করে। 

কীটনাশক কেনার সময় খুব ভালোভাবে খেয়াল করে নিতে হবে যে এটি কোন কোন ফসলের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে। এক ফসলের কীটনাশক যদি অন্য ফসলের খেতে ব্যবহার করে তাহলে কীটনাশক কাজ করবে না। 

এর জন্য কীটনাশকের নাম ও ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক একটা ধারণা লাভ করা প্রয়োজন। কীটনাশক সবসময় শিশুদের নাগালের বাইরে  রাখতে হয়। কীটনাশক ব্যবহারের পরে খালি বোতল বা প্যাকেট পুকুরে বা খালে না পেলে মাটিতে পুঁতে ফেলা সর্বোত্তম। 

জুবাস ডি ৫

এই কীটনাশক টি পাঠ, আম, ধান ইত্যাদি খেতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি বিছা পোকা, হপার পোকা, লেদা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, বিটল ও কাটুই পোকা ইত্যাদির দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

ব্যবহারঃ এ কীটনাশকটি পোকার স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে। পোকার উপদ্রব এর ওপর ভিত্তি করে প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ০.৫-১ মিলি জুবাস ৫ ইসি মিশিয়ে সমস্ত গাছগুলোতে স্প্রে করতে হবে। 

তাহা ৩ ইসি

তাহা ৩ ইসি অফিস, কারখানা, বাসাবাড়ি, মুরগি বা গবাদিপশুর খামারে মশা, খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণাগার, ছারপোকা, তেলাপোকার, মাছি ইত্যাদি কীটপতঙ্গ দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবাদিপশুর উকুন দূর করতেও এটি বেশ কার্যকর। 

ব্যবহারঃ মশা ও তেলাপোকা ৯.২ মিলি 8 লিটার পানিতে ব্যবহার করা যায়। ঘরে বা অফিসে  ব্যবহার করার সময় ঘরের দরজা-জানালা বৈদ্যুতিক ফ্যান বন্ধ রাখুন। শুষ্ক ও ঠান্ডা জায়গা সূর্যালোক থেকে দূরে রাখতে হবে। 

সাবা ৮০ ডব্লিউডিজি

এই কীটনাশকটি ধানের বাদামী গাছ ফড়িং ও বিভিন্ন ধরনের শোষক পোকা যেমন জাবপোকা,  থ্রিপস, পামরী পোকা, সাদা মাছি ও সবুজ পাতা ফড়িং ইত্যাদি দমনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি ধান ক্ষেতের জন্য খুবই আলোচিত একটি কীটনাশক। 

ব্যবহারঃ খেতে আক্রমণের পূর্বে পোকার আক্রমণ দেখা মাত্র এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। পোকার উপদ্রব অনুযায়ী একরে ১০০ গ্রাম ও প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ গ্রাম সাবা ৮০ ডব্লিউডিজি মিশিয়ে সমস্ত খেতে স্প্রে করে দিতে হবে। 

দামদানা গোল্ড  ৪৪ ইসি

এই কীটনাশকিট খুবই কার্যকরী একটি কীটনাশক। আম, পেয়ারা, বরই লিচু, কুমড়া জাতীয় ফসল, তুলা, কলা ইত্যাদির নানা রকম পোকা দমনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সাদা মাছি, বিটল, এফিড, মাছি, জাবপোকা ফল ছিদ্রকারী পোকা এগুলো তো আমনে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 

ব্যবহারঃ এই কীটনাশকটি স্পর্শক ও পাকস্থলী বিষক্রিয়া সম্পূর্ণ কার্যকারিতায় অভ্যস্ত। এটি প্রতি লিটার পানির সাথে ২  মিলি মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তুলা গাছের ক্ষেত্রে প্রতি লিটারে ৪.৮ মিলি মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে। 

তাকাত ২৪.৭ এসসি

প্রতি লিটার তাকাত ২৪.৭ এসসিতে রয়েছে থায়ামেথোক্সাম ১৪.১% এবং ল্যামডা সাইহ্যালেথ্রিন ১০.৬%। এটি ব্যবহার করা হয় সবজি, আম, লিচু ও ধানক্ষেতে। যে যে প্রকার বিরুদ্ধে এটি কাজ করে তা হলোঃ- হপার, পাতা মোড়ানো পোকা, পামরি পোকা, শীষকাটা লেদা পোকা, মথ, বিটল, কাটুই পোকা ইত্যাদি। 

ব্যবহারঃ এই কীটনাশকটি পোকার গায়ে লাগলো পোকা মারা যায় এবং পাকস্থলী বিষক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় খেলেও পোকামাকড় মারা যায়। পোকার উপদ্রব অনুযায়ী সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। প্রতি লিটার পানির জন্য ০৫.-১.০ মিলি তাকাত ২৪.৭ এসসি ব্যবহার করা যেতে পারে। 

সাওতা ৫৭%

এ কীটনাশকটির উপাদান হচ্ছে অ্যালুমনিয়াম ফসফাইড ৫৭%। গুদামজাতকৃত দানাদার ফসলের বিভিন্ন ধরনের পোকা নিরাময়ের কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি একটি ট্যাবলেট জাতীয় ঔষধ। যার মেয়াদ ২ বছর পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। 

ব্যবহারঃ এই কীটনাশকটি দুই প্রকারে ব্যবহার করা যেতে পারে। স্তুপ আকৃতির পণ্যের জন্য প্রতি টন ধান বা চালের ক্ষেত্রে ৪ টি সাওতা ট্যাবলেট ব্যবহার করা উচিত। আর গুদামঘরে প্রতি টন শস্যের জন্য ৪ টি ট্যাবলেট আলাদা আলাদা করে পলিথিন দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে যাতে বিষক্রিয়া বাতাসের না ছড়ায়। বায়ার কীটনাশক তালিকা সম্পের্কে জেনে নিন!

  রোগ অনুযায়ী কীটনাশক তালিকা 

বায়ো ও বটানিক্যল কীটনাশককার্যকারিতামাত্রা
ফেরোমোন ট্র্যাপকুমড়ো ও ফলের মাছি নিয়ন্ত্রণ৩-৪ টি / বিঘা
এন.পি.ভি.ল্যাদা কীট নাশক১ মিলি / লি
ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিসল্যাদা কীট নাশক১.৫ মিলি / লি
ভার্টিসোলিয়াম লেকানিশোষক পোকা নাশক২.৫ মিলি / লি
প্যাসিলোমাইসিস লিলাসিনাসনিমাটোডনাশক১.৫ কেজি / বিঘা
অ্যাজাডিরেক্টিননিমজাত কীটনাশক১ মিলি / লি
সামুদ্রিক শৈবালশোষক পোকা নিয়ন্ত্রণ২ মিলি / লি
কীটনাশকের নাম ও ব্যবহার
জলে গোলা রাসায়নিক কীটনাশককার্যকারিতামাত্রা
অ্যাসিফেটশোষক পোকা১ মিলি / লি
থায়োমিথক্সামশোষক পোকা১ গ্রাম/ ৫ লি
ইন্ডক্সার্বল্যাদা পোকা, হীরক মথ, ফল ছিদ্রকারী পোকা১ মিলি/ লি
অ্যাসিটেমাপ্রিডশোষক পোকা১ গ্রাম/ ১০ লি
স্পিনোস্যাডল্যাদা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা১ মিলি / লি
ইমামেক্টিন বেঞ্জোয়েডল্যাদা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা ও মাকড়নাশক০.৫ গ্রাম / লি
ফ্লুবেন্ডিয়ামাইডল্যাদা পোকা১ মিলি / ৫ লি.
ক্লোরফেনাপ্রিরঅন্তর্বাহী ল্যাদা পোকা ও শোষক পোকা২ মিলি / লি
বুপ্রোফেজিনঅন্তর্বাহী- সকল শোষক পোকা১.৫ মিলি/লি.
ক্লোরানট্রানিলিপ্রোলঅন্তর্বাহী ল্যাদা পোকা১ মিলি / ৫ লি.
এবামেক্টিনস্পর্শজনিত সকলরকম মাকড়নাশক২ মিলি/ লি.
কীটনাশকের নাম ও ব্যবহার

শেষ কথ। 

উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কীটনাশকের নাম ও ব্যবহার সম্পর্কে আমরা সঠিক কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আপনি যদি আপনার ফসলের মধ্যে কীটনাশক ব্যবহার করতে চান, তাহলে উপরে উল্লেখিত তালিকা অনুযায়ী  ব্যবহার করলে আপনি এর সুফল পাবেন ইনশাআল্লাহ। 

আমাদের দেশে বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক দেখতে পাওয়া যায়। তবে সবগুলো কোম্পানির কীটনাশক বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে অনুমোদন দেয় না। তাই কৃষক ভাইদের উচিত হবে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী লাইসেন্সপ্রাপ্ত কীটনাশক জমিতে ব্যবহার করা।

আপনার নামের অর্থ জানতে ভিজিট করুন-

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top