কীটনাশক পরিচিতি

কীটনাশক পরিচিতি, রোগ অনুযায়ী কীটনাশকের ব্যবহার জানুন!

কীটনাশক পরিচিতি : কীটনাশক হচ্ছে এমন একটি পদার্থ যা কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে কীটনাশক কৃষিক্ষেত্রে সহ সর্বত্র ব্যাপি খুবই জনপ্রিয়।

কৃষি জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায। এতে করে কাঙ্খিত ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।

কীটনাশক পরিচিতি

মূলত কীটনাশক কীটপতঙ্গ ধ্বংস করতে রাসায়নিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে ভেষজনাশক, কীটনাশক, নেমাটসাইড, ব্যাকটেরিয়া নাশক,  পোকামাকর নাশক, নেমাটিসাইড, পিসিসাইট, ল্যাম্পপ্রিসাইড, ছত্রাকনাশক, পশু নাশক, রোডেন্টিডিসাইড ইত্যাদি। 

সাধারণত একটি কীটনাশক হলো একটি জৈবিক এজেন্ট, যা কীটপতঙ্গ প্রতিরোধ করেন সক্ষম, হত্যা করে অথবা ফসলে আসতে নিরুৎসাহিত করে। এছাড়াও কীটনাশকের মধ্যে পোকামাকর, আগাছা, মলাস্কার এবং জীবাণু ধ্বংস করার উপযুক্ত সক্ষমত। 

কীটনাশক একটি বিষাক্ত পদার্থ। এটি রাসায়নিক ক্রিয়ার মাধ্যমে জীবন প্রক্রিয়া বিপর্যয় ঘটানোর মাধ্যমে ক্ষতিকর কীট পতঙ্গ ধ্বংস করতে বদ্ধ পরিকর। এটি প্রয়োগের ফলে পোকা মাকড়ের ডিম লার্ভা ও বিনাশ  হয়ে থাকে। পেঁপে চাষ পদ্ধতি, রোগবালাই ও কীটনাশক সহ বিস্তারিত!

ইতিহাস 

ধারণা করা হয় কীটনাশকের জন্ম হয়েছিল জার্মানিতে। ২০০০ সালের আগেও মানুষ কীটনাশক পরিচিতি সম্পর্কে অবগত ছিল। ২০০০ সালের আগে থেকেই মানুষ তাদের ফশলের রক্ষার জন্য তুলনামূলক কীটনাশক ব্যবহার করেছিল। ১৭ শতকের দিকে মানুষ তামাকের পাতা থেকে নিকোটিন সালফেট বের করে কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করতো।

১৯১০ সালে কীটনাশক নিয়ন্ত্রণের জন্য ফেডারেল কর্তৃপক্ষ প্রথম একটি আইন জারি করে। ১৯৪০ এর দশকে কীটনাশক নির্মাতারা প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক উৎপাদন করেছে, যার ব্যবহার ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালের দিকে অতীতের তুলনায় কীটনাশকের ব্যবহার ৫০ গুন বেড়ে গিয়েছিল। যা বর্তমানেও প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কীটনাশকের প্রকারভেদ 

উৎপত্তিগত দিক বিবেচনায় কীটনাশক মূলত ২ প্রকার। যথাঃ

  1. জৈব কীটনাশক 
  2. অজৈব কীটনাশক 
  • অজৈব কীটনাশক সমূহ 

ক্লোরিন, সালফার, লেড, আর্সেনিক ইত্যাদি ঘটিত বিভিন্ন ধরনের যৌগ পদার্থ। 

  • জৈব কীটনাশক সমূহ 

নিকোটি,  পাইথ্রিন, রোটেনন, ডিডিট,  ম্যালানিয়ম, গ্যামাক্সিন, প্যারাথিন, সেভিন ডায়াজিনন ইত্যাদি। 

কীটনাশক যে যে কাজে ব্যবহৃত হয়  

  • আগাছা দমনের জন্য 
  • ব্যাকটেরিয়া দমনের জন্য 
  • ছত্রাক দমনের জন্য 
  • পোকামাকড় দমনের জন্য 
  • শেওলা, অ্যালজি দমনের জন্য 
  • শামুক জাতীয় দমনে
  • ইঁদুর অথবা দাঁত বিশিষ্ট প্রাণী দমনের জন্য 
  • কৃমি দমনের জন্য 
  • পাখি দমনের জন্য 
  • মাকর, মাইট দমনের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

কীটনাশক যেভাবে কাজ করে  

  1. ফেনোক্সি আগাছানাশকঃ হরমোনে ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে।
  2. কপারঃ প্রোটিন বা এনজাইমের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়। 
  3. তেলঃ  কীটপতঙ্গের কোষীয় কার্যকলাপ বন্ধ করে দেয়।
  4. সায়ানাইড, রোটেননঃ জৈবিক কার্যক্রম নষ্ট করে থাকে। 
  5. সালোকসংশ্লেষণ কার্যক্রম,  খাদ্য উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায়।

সাধারণভাবে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ট্রেডমার্কের কীটনাশক সমূহ হলোঃ

  • দানাদার 

ফিপ্রোণিল, ডায়াজিনন, কার্বোফিউরান, কার্বসালফার ও ক্লোরোপাইরিফস 

  • ইদুরনাশক 

 জিংক ফসফাইড, ব্রোডিওফ্যাকাম, ব্রোমাডিওলোন

  • তরল

ডিডিভিপি, ডায়াজিনন, সাইপারমেথ্রিণ, ডাইমিথোয়েট, ফসফামিডন, ম্যালাথিওন, বাইড্রিন, মনোক্রোটোফস, ফেনিট্রোথিওন, ফেনথোয়েট ইত্যাদি 

  • গুঁড়া 

এমআইপিসি, কার্বারিন, কার্টাপ

ডিডিটি হলো একটি গৃহস্থালি পরিস্কার কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ। যার পুরো নাম ডাইক্লোরো ডাইফেনাইল ট্রাইক্লোরো ইথেন। মূলত এটি একটি কীটনাশক। অর্থাৎ স্নেহপদার্থ এই কীটনাশকটি সোডিয়াম চ্যানেলে খুলে গিয়ে পক্ষাঘাত ঘটায় এবং কীটপতঙ্গ মারা যায়।  যদিও এই কীটনাশকটি মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

উন্নয়ন 

যত দিন যাচ্ছে ততই বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্নভাবে কীটনাশক সমূহের উন্নয়ন সাধন করা হচ্ছে। যদিও বর্তমানে কৃষি বিজ্ঞানীরা পরিবেশের কথা চিন্তা করে রাসায়নিক কীটনাশক সমূহ খুব বেশি ব্যবহারের জন্য নিরুৎসাহিত করে থাকে। কীটনাশক উন্নয়নে বর্তমানে এখন নানা ধরনের জৈব কীটনাশক আবিষ্কার করা হচ্ছে। 

জৈব কীটনাশক গুলো যেরকম কার্যকারিতা ভালো ঠিক পরিবেশেরও কোন প্রকার ক্ষতি সাধন করে না। কৃষি ক্ষেত্রে যেখানে বিভিন্ন প্রকার ফসলের এর মধ্যে নিত্যনতুন কীটপতঙ্গের আবির্ভাব ঘটছে, সেই বিষয় মাথায় রেখে কীটপতঙ্গের মৌলিক ক্রমাগত গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন কীটনাশক আবিষ্কৃত হচ্ছে। 

নতুন নতুন কীটপতঙ্গের ধরন কে মাঠ পর্যায়ে গবেষণার মাধ্যমে সে অনুযায়ী প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্যে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। মূলত কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক আবিষ্কারের ফলে অতীতের তুলনায় এখন বর্তমানে ফসলের উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।  

সিনজেনটা কীটনাশক তালিকা জেনে নিন!

কীটনাশকের প্রভাব 

কীটনাশকের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় তীব্র ও বিলম্বিত স্বাস্থ্যগত প্রভাব। অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশকের  সংস্পর্শে গেলে প্রজনন ক্ষমতা কমে যায় এবং ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে।  অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা ব্যক্তিদের মধ্যে ত্বক ও চোখের জ্বালা অনুভব হয়।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে কীটনাশকের সম্পর্কিত মৃত্যুর সংখ্যা অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে উন্নয়নশীল দেশসমূহে। এজন্য কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতায় নিশ্চিত  করতে হবে। কীটনাশক এর ফলে স্বাস্থ্যগত নানা ধরনের রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন।

সতর্কতা

আপনি অবশ্যই জেনে থাকবেন কীটনাশকের বোতলে নীল, সবুজ, হলুদ ও  লাল রঙ্গের দাগ থাকে। কৃষি বিজ্ঞানীরা অবশ্যই সবুজ রঙের বোতল ব্যবহারে বেশি পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যদিও সবুজ রঙের বোতল ব্যবহার করলে পোকা একটুও দেরিতে মারা যায়। এতে ক্ষতিকর মাত্রা কম হয়। 

আর  লাল রঙের চিহ্ন যুক্ত কীটনাশক ব্যবহার করলে সাথে সাথে পোকা মারা যায়। কিন্তু এতে ক্ষতিকর মাত্রা অধিক হয়ে থাকে। তাই কৃষি বিজ্ঞানীদের সঠিক পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক ব্যবহার করাই উত্তম। 

শেষ কথা   

উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারে যে আমরা কীটনাশক পরিচিতি সম্পর্কে একটা সঠিক ধারণা লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। মনে রাখতে হবে সব কিত্নাশক সব প্রকারের জন্য সমানভাবে কার্যকরী হয় না।  উপযুক্ত ঔষধ সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করলেই আশানুরূপ ফলন পাওয়া সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top