গম চাষ পদ্ধতি

গম চাষ করার সঠিক পদ্ধতি । যে নিয়মে চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়!

গম চাষ পদ্ধতি : গম একটি ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। গরম আদিকাল থেকেই মানুষের খাদ্য বাসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। সারাবিশ্বে বর্তমানে প্রোটিনের নিরামিষ উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। 

গম চাষ পদ্ধতি

উৎস ও ইতিহাস 

গম এর ইংরেজি হলো Wheat. যার উৎপত্তিস্থল হলো মধ্যপ্রাচ্যের লেভান্ট অঞ্চলে। বর্তমানে গম সারাবিশ্বে বিপুল পরিমাণে উৎপাদিত হয়ে থাকে। সারাবিশ্বে শস্য উৎপাদনের  গমের স্থান তৃতীয় অবস্থানে। 

বাংলাদেশ উৎপাদন ও খাদ্যের দিক দিয়ে দানা ফসল হিসেবে গম দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। স্থানীয় জাত গুলোর তুলনায় বর্তমান উচ্চফলনশীল জাতে তিনগুণ বেশি উৎপাদন সম্ভব। দিন দিন উন্নত জাত গুলো আবিষ্কারের ফলে আমাদের দেশে গমের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

মাটি নির্বাচন 

উঁচু ও মাঝারি দোআঁশ মাটি গম চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। লোনা মাটিতে গমের ফলন কম হয় থাকে। সাধারণত উঁচু জমিতে গমের ফলন বেশি হয়। গম চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত মাটি হচ্ছে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি। তবে এঁটেল-এঁটেল দোআঁশ মাটিতেও গম চাষ করা হয়ে থাকে। 

জাত সমূহ 

গমের ভালো ফলন পেতে হলে উচ্চ ফলনশীল জাত গুলো নির্বাচন করা উচিত। যেমনঃ বারি গম ১৯ (সৌরভ), বারি ২০ গম (গৌরব),বারি ২১ গম (শতাব্দি), বারি ২২ গম (সুফি), বারি ২৩ গম (বিজয়) বারি ২৪ গম (প্রদীপ), আকবর, কাঞ্চন, অঘ্রানী, প্রতিভা ইত্যাদি। 

এছাড়াও  লবণাক্ত সহিষ্ণু গমের জাতগুলো হলো বারি গম ২৫, বারি গম ২৬, বারি গম ২৭, বারি গম ২৮, বারি গম ২৯, বারি গম ৩০, বারি গম ৩১, বারি গম ৩২, বারি গম ৩৩ তাপ সহিষ্ণুতার ফলনশীল গমের জাত। 

বপনের সময় 

গম চাষ পদ্ধতি তে বপনের সময় নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গম শাড়িতে অথবা ছিটিয়েও বীজ বপন করা যায়। গমের বীজ বপনের সবচেয়ে উত্তম সময় হচ্ছে কার্তিক মাসের শেষ থেকে অগ্রহনের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ( যা নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত নির্ধারিত)। 

বপন পদ্ধতি 

হেক্টর প্রতি ১২০ কেজি বীজ ব্যবহার করা যেতে পারে। বীজ গজানোর ক্ষমতা ৮০% এর চেয়ে বেশি হলে উত্তম। জমিতে বীজ বপনের পূর্বে বীজ শোধন করে নিতে হবে। জমিকে ভালভাবে ৪-৫ টি চাষ দিয়ে তৈরি করে রাখতে হবে। সারিতে রোপনের ক্ষেত্রে মাঝখানে নালা তৈরি করতে হবে। 

সারিতেব ৪-৫ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বুনতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে গমের বীজ সবসময় সারিতে রোপন করাই ভালো। এতে করে সঠিকভাবে পরিচর্যা করা যায়। সঠিকভাবে রোগবালাই দমনে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যায়। এই ভাবেই গাজর চাষ পদ্ধতি তে হয়ে উঠুন লাখোপতি!

সার ব্যবস্থাপনা 

গম চাষের ক্ষেত্রে ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জমিতে শেষ চাষের সময় একটু বেশি  পরিমাণে জৈব সার জমিতে প্রয়োগ করা গেলে গমের উৎপাদন ভাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

গমের জমিতে ইউরিয়া সার ২-৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়। কোন অবস্থাতেই শুকনো জমিতে সার প্রয়োগ করা যাবে না। সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে জমিতে অল্প পরিমাণ হলেও পানি থাকতে হবে। অনেক সময় জমিতে বোরন সারের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বরং সার প্রয়োগ করতে হবে। 

                           গমের জমিতে সার প্রয়োগ তালিকা 

সারের নামসারের পরিমাণ/ হেক্টর
সেচ সহ (কেজি)সেচ ছাড়া (কেজি)
ইউরিয়া১৮০-২২০১৪০-১৮০
টিএসপি১৪০-১৮০১৪০-১৮০
এমপি৪০-৫০৩০-৪০
জিপসাম১১০-১২০৭০-৯০
গোবর/ কম্পোস্ট (টন)৭-১০৭-১০
গম চাষ পদ্ধতি

গম চাষ পদ্ধতি তে সেচ ব্যবস্থা 

মাটির প্রকারভেদে গমের জমিতে ২ থেকে ৩ টি সেচের প্রয়োজন হয়ে থাকে। রোপনের ১৭ থেকে১৭ দিন পর একবার।  দ্বিতীয় সেচ ৫০-৫৫ দিন পর এবং তৃতীয় শেষ বীজ বপনের ৭৫-৮০ দিন পর দিতে হবে।

আগাছা দমন 

বীজ বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে জমিতে আগাছা জন্মাতে পারে এজন্য নিড়ানীর ব্যবস্থা করতে হবে। জমিতে নিড়ানী দিলে মাটি আলগা হবে এবং জমির মাঠ আদ্রতা সঠিকভাবে বজায় থাকবে। বর্তমানে আগাছা দমনের জন্য বিভিন্ন কীটনাশক আছে সেগুলো প্রয়োগ করা যেতে পারে। 

রোগ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা 

গম গাছ অনেক কীটপতঙ্গ এফিড জাতীয় রোগের জন্য সংবেদনশীল। যদিও অন্যান্য ফসলের তুলনায় গম ফসলে রোগ বালাই একটু কম হয়ে থাকে। তবুও উত্তরাঞ্চলের জমিতে রোগের প্রাদুর্ভাব একটু বেশি দেখা যায়। 

গমের কোন প্রকার রোগ বালাই দেখা দিলে সে অনুযায়ী বাজারে বর্তমানে কীটনাশক পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই কৃষি বিশেষজ্ঞদের সঠিক পরামর্শ আপনাকে নিতে হবে 

গমের খেতে যে যে রোগ দেখা দিতে পারে তা হলোঃ- গমের ব্লাস্ট রোগ, গমের পাতার দাগ রোগ, গমের পাতার মরিচা রোগ, গমের আলগা ঝুল রোগ, গমের গোড়া পচা রোগ, গমের কালো দাগ রোগ এবং ইঁদুরের মাধ্যমেও গমের নানা রকমের ক্ষতি হয়ে থাকে। 

উপরে উল্লেখিত পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে সার্বক্ষণিক কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের থেকে সঠিক পরামর্শ গ্রহণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর ইঁদুর দমন জন্য বর্তমানে নানা ধরনের ফাঁদ আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। আধুনিক উপায়ে বেগুন চাষ পদ্ধতি জেনে নিন!

ফসল কাটা 

এতক্ষণ আমরা গম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনেছি। আসুন এবার  কিভাবে গম ফসল সংগ্রহ করতে হয় তা জেনে নেই। যখন গমের পাতা ও কান্ড হলুদ হয়ে যায় এবং মোটামুটি শুকিয়ে আসে তখন ফসল কাটা শুরু করতে হবে। ফসলের ক্ষতি এড়াতে সময়মতো ফসল ঘরে তোলা প্রয়োজন।

কারণ অতিরিক্ত ফসল পেকে গেলে তা সংগ্রহে নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। গমের আর্দ্রতার পরিমাণ প্রায় ২৫-৩০% পৌঁছায় তখন গম কাটার জন্য একদম  প্রস্তুত। বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির গম কাটার মেশিন বাজারে এসেছে সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। 

গমের  পুষ্টি উপাদান 

আমরা জানি গম থেকে আঠা তৈরি করা হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম আমিষ ১২.১ গ্রাম শর্করা, ৬৯.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৮ মিলিগ্রাম, লৌহ ১১.৫মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৯ মাইক্রোগ্রাম, জলীয় অংশ ১২.২ গ্রাম, খনিজ পদার্থ  ২.৭ গ্রাম, আশঁ ১.৯ গ্রাম ভিটামিন-বি২ ০.২৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.৪৯ মিলিগ্রাম ইত্যাদি। 

পরিশেষে 

পরিশেষে বলা যায় দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে হলে সঠিক ভাবে গম চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে মাধ্যমে চাষাবাদ করা প্রয়োজন। এতে অতীতের তুলনায় কৃষকরা  তিনগুণ বেশি লাভবান হতে পারবে। প্রযুক্তি দিয়ে করবো চাষ, সাফল্য আসবে বারো মাস। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top