গরুর রোগ ও চিকিৎসা

গরুর রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিজ্ঞান সম্মত তথ্য জানুন!

গরুর রোগ ও চিকিৎসা : গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ- একজন কৃষকের আর কি চাই? তবে এখনকার দিনে খাদ্যে ভেজাল সহ অন্যান্য সমস্যার জন্য গবাদিপশুর অসুখ অনেক বেশি হয়।

তাই গরু পালনের ক্ষেত্রে আপনার গরুর রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে অবশ্যই প্রাথমিক ধারণা থাকা দরকার। তা না হলে বার বার পশু চিকিৎসকদের স্বরণাপন্ন হতে আপনার নিশ্চয় ভালো লাগবে না। 

গরু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এমন উদাহরণ আশেপাশে অনেকই দেখা যায়। গ্রমীন অর্থনীতিতে গরু পালন অনেক বড় একটা অবদান রেখেছে। আপনিও যদি এমন চিন্তা করে থাকেন তাহলে মন দিয়ে পড়তে থাকুন। আমরা এখানে গরু পালনের ক্ষেত্রে খুব কমন কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো প্রয়শই আপনাকে মোকাবেলা করতে হতে পারে।

Table of Contents

গরুর রোগ ও চিকিৎসা

বিশেষকরে যারা বনিজ্যিভাকে গরু পালন করেন, তারা একটি গরুকে খুব বেশি দিন লালন পালন করেন না। দ্রুত মোটাতাজা করার এই প্রক্রিয়ায় গরুর রোগ একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। কারণ একটি গরু অসুস্থ অবস্থায় কয়েকদিন থাকলে তার চিকিৎসা খরচের পাশাপাশি স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায় এবং সেটি থেকে লাভ আশা করা বেশ কঠিন। তাই গরুর রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা আপনার জন্য আবশ্যক। 

নীচে আমরা কিছু গরুর সাধারণ রোগ এবং এগুলোর প্রথমিক চিকিৎসা বিষয়ে বর্ণনা করবো, আশা করি এটি আপনাকে সহায়তা করবে। 

ক্ষুরা রোগ

ভাইরাসজনিত এই রোগ বছরের যে কোন সময় হতে পারে এবং এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে। বাতাসের মাধ্যমে এর জীবাণু ছড়াতে পারে, যে কারণে আপনার বাড়িতে একটি গরুর ক্ষুরা রোগ হলে ধরে নেওয়া যায় সবগুলো গুরই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এতে আক্রান্ত হলে গুরুর মুখে ও ক্ষুরে ঘা হয়। গরু খেতে এবং হাটতে পারে না। শরীরের তাপমাত্রা অত্যাধিক বেড়ে যায়। মুখ দিয়ে লালা ঝরে এবং ক্ষুরের ঘা মাঝে মাঝে বেশ গভীর হতে দেখা যায়। তবে এই রোগে মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে কম হলেও বাছুরের ক্ষেত্রে এটি অনেক মারাত্বক হতে পারে।

ভ্যাকসিন দেওয়ার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়, তাছাড়া এর সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। তবে গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হলে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। গরুর কোন রোগের কি ঔষধ জেনে নিন!

কৃমি রোগ

আমাদের দেশের গুরগুলো গোলকৃমি, পাতা কৃমি বা কলিজা কৃমি এবং ফিতা কৃমিতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এগুলো নিরব ঘাতকের মতো কাজ করে এবং গরুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে চরমভাবে ব্যহত করে। ধীরে ধীরে গুরু দুর্বল ও রক্তশূন্য হয়ে পড়ে। 

গরু কৃমিতে আক্রান্ত হয়েছে বুঝতে পারবেন যখন দেখবেন প্রচুর খাবার খাওয়ার পরেও তার স্বাস্থ্যে্র উন্নতি আশানুরূপ হচ্ছে না বা দিনে দিনে দুর্বল হয়ে পড়ছে। তাছাড়া কৃমিতে আক্রান্ত হলে গরুর লোম উস্কখুস্ক দেখায়, পেট আকারে মোট দেখায় এবং পায়খানা মাঝে মাঝেই পাতলা এবং দুর্গন্ধযুক্ত হয় ও প্রায়শই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। 

যদি বুঝতে পারেন গরু কৃমিতে আক্রান্ত, দেরি না করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। এক্ষেত্রে কৃমিনাশক ট্যাবলেট/বোলাস, ইনজেকশন, পাওডার বা ওরাল সলুশন আকারে পাওয়া যায়। ডাক্তারের সাথে কথা বলে নির্ধারিত মাত্রায় ঔষধ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। বাছুরের রোগ ও চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত জানুন!

বোভাইন ইফিমেরাল ফিভার

ভাইরাসজনিত এই রোগটিও খুব কমন একটি সমস্যা। যে কোন বয়সের গরু বছরের যে কোন সময়ে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। রক্ত শোষক কীট পতঙ্গ এই রোগের বাহক হিসাবে কাজ করে।

এই রোগে আক্রান্ত হলে কাঁপুনি সহ প্রচন্ড জ্বর হয়, যেখানে তাপমাত্রা 105 থেকে 107 ডিগ্রি পর্যন্ত থাকতে পারে। গরু হাপাতে থাকে, খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং বিভিন্ন অস্থিসন্ধির স্থানে ব্যথা হওয়ার কারণে গরু খুড়িয়ে হাটে। 

এই জ্বর সাধারণত তিন দিন থাকে, তারপরে গরু এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। যে কারণে একে থ্রি-ডেজ ফিভারও বলা হয়। যেহেতু এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ, তাই নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। তবে জ্বর ও ব্যথানাশক ঔষধের পাশাপাশি বেনজাইল পেনিসিলিন ধরণের অ্যান্টিবায়োটিকও ব্যবহার করা যেতে পারে। 

এগুলো ছাড়াও আপনাকে আরো বেশ কিছু গরুর রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে প্রথমিক ধারণা থাকতে হবে যেমন-চেয়াল ফোলা রোগ, বাছুরের সাদা উদারাময় রোগ, ডায়রিয়া, রক্ত আমাশায়, তড়কা, বাদলা, ম্যাসটাইটিস ইত্যাদি।

উপসংহার

গরুর রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে ভালো ধারণা আপনাকে একজন লাভজনক খামারি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে। আপনি যদি এই সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে কমেন্ট সেকশনের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top