ছাগল মোটাজাতকরণ পদ্ধতি

ছাগল মোটাজাতকরণ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন!

পশু মোটাজাতকরণ কৃষিবিজ্ঞান এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি দেশের অর্থনৈতিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। ছাগল মোটাজাতকরণ পদ্ধতি কৃষক দের আয়ের খাতের মধ্যে আশার আলো দেখাতে সক্ষম হয়েছে। তাই বর্তমান বিশ্বে এই বিশেষ পদ্ধতি জানার গুরুত্ব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং, কৃষি খাতে কর্মরত সকলেরই এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানা দরকার। 

Table of Contents

ছাগল মোটাজাতকরণের উপকারিতা

১) অর্থনৈতিক উন্নয়ন – ছাগল মোটাজাতকরণ ক্রেতাদের মাঝে প্রলোভন সৃষ্টি করে যার ফলে এটি কৃষক দের মাঝে স্বছলতার আবির্ভাব দেখা দেয়,এতে করে বেকারত্ব কমিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাস্তবায়ন হয়।

২) আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় – এই পদ্ধতি এর মাধ্যমে কৃষক শ্রেণীর মানুষের স্বল্প আয়ের উন্নতি করে কৃষি কাজের প্রতি মনোবল এবং আত্মবিশ্বাস জোগাড় করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে।

৩) পুষ্টির উৎস – মানবদেহে দৈনিক ২৪০ গ্রাম মাংস আহারের দরকার হয়ে পড়ে।এছাড়া দেহে প্রাণীজ প্রোটিন জোগাড়ে এই মোটাজাতকরণ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

৪) দৃশ্যমান পরিবর্তন – অন্যান্য পশু মোটাজাতকরণ এর থেকে ছাগলের মোটাজাতকরণ বেশি দৃশ্যমান। এতে করে কৃষকরা তাদের আয়ের ভাগে যথা দ্রুত সম্ভব লাভবান হতে পারে।

৫) পরোক্ষভাবে ব্যবসার গতি বৃদ্ধি – এই পদ্ধতির সঠিক বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন বাজারজাত খাবার  এবং ব্যবহৃত পেটেন্ট ঔষধসমূহ  এর প্রয়োজন হয় এবং এতে করে সংশ্লিষ্ট  ব্যবসায়ীদের আয়ের উন্নতি হয়।

ছাগল নির্বাচনে কৌশল প্রয়োগ

  • শারীরিক প্রতিবন্ধকতাবিহীন ছাগল বাছাই করতে হবে।
  • দুর্বল, অসুস্থ, পুষ্টিহীন ছাগল এড়িয়ে চলতে হবে।
  • 2-2.5 স্কোর এর ছাগলগুলো ই এই প্রক্রিয়া এর মাধ্যমে মোটাজাতকরণের উপযুক্ত।
  • ছাগল নির্ধারণে তাদের শক্ত হাঁড় কাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • ছাগল নির্বাচনে কৃষক দের ছাগল খোজাকরণ থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ এটি মোটাজাতকরণ পদ্ধতির জন্য ক্ষতিকর।
    • খোজাকৃত ছাগলের শরীরে তুলনামূলকভাবে সাধারণ ছাগলের চেয়ে বেশি চর্বি জমাকৃত থাকে।
    • সাধারণ ছাগলের শরীরে বেশি দৈহিক বৃদ্ধি থাকে।
  •    ২০-২৫ কেজি ওজনের ছাগল মোটাজাতকরণ এর জন্য বাঞ্ছনীয়।
  • বয়স্ক ছাগল বাছাই না করাই শ্রেয়,যেহেতু এদের মোটাতাজা করার সম্ভাবনা কম,এবং ক্রেতাদের মাঝে চাহিদা ও সীমিত। তাই বয়স ২-৪ বছরের মধ্যে ছাগল নির্বাচন ই মোটাজাতকরণ পদ্ধতি এর জন্য উপযুক্ত। 
  • ক্রসব্রীড ছাগল মোটাজাতকরণ এর জন্য সর্বোত্তম। 

ছাগল মোটাজাতকরণ পদ্ধতি

এই পদ্ধতি দুই ভাগে বিভক্ত :- 

সনাতন পদ্ধতিতে মোটাজাতকরণ

  • এই পদ্ধতি তে প্রাকৃতিক খাবার যেমন – তৃণ,খড় ইত্যাদি পরিবর্তনশীল নিয়ম অনুযায়ী সরবরাহ করতে হয় ।
  • এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে  বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দৈহিক বৃদ্ধি পেতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। 
  • সনাতন পদ্ধতিতে মোটাজাতকরণ পদ্ধতিতে নিয়মমাফিক খাদ্য সরবরাহ করতে কৃষকদের অনেক সময় ব্যার্থতাকে মেনে নিতে হয়। এতে করে অনিয়ন্ত্রিত খাবার সরবরাহের জন্যে ছাগলের শরীরে ক্ষতি দেখা দেয়।
  • এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে ছাগলের শরীরে ওজন এবং  বৃদ্ধিতে বিশেষ ওঠানামা দেখা যায়। 
  • সনাতন পদ্ধতি অনুসরণ কালীন কৃষকরা তাদের ছাগল মোটাজাতকরণ এর জন্য অন্যান্য গবাদী পশুর মতো খাবার মজুদ করে থাকে।কিন্তু ঋতু বিশেষে এসব মজুদকৃত খাবারের সংকট দেখা দেয়, এতে করে অর্থের সাংঘাতিক ক্ষতি হয়।
  •  খাবার সরবরাহ সহ আরো প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অভাবে ছাগলের জীনগত সম্ভাব্য দৈহিক বৃদ্ধি থেকে আরো অনেক কম বৃদ্ধি পায়।এবং আশানুরূপ সাফল্য না পেয়ে নিরাশ কৃষক দের আশার সঞ্চারে ইতি টানতে হয়।

আধুনিক পদ্ধতিতে মোটাজাতকরণ পদ্ধতি 

আধুনিকভাবে  ছাগল মোটাজাতকরণ এর পদ্ধতি তে উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় এবং বিজ্ঞানসম্পন্ন উপায় অনুসরণ করা হয়। 

  • এই প্রক্রিয়া গ্রহণ করলে ব্যাপক অর্থের প্রয়োজন হয়। কিন্তু যথাযথ ভাবে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারলে বিপুল পরিমাণে লাভ হয়
  • আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এর ফলে খুঁটিনাটি বিষয় ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করা যায়।
  • বর্তমান প্রতিযোগীতামূলক বিশ্বে কৃষিখাত কে  লাভজনক করতে হলে এই পদ্ধতি অবলম্বন ছাড়া বিকল্প নেই।

চর্বি জমা করার প্রক্রিয়া এবং ব্যাবস্থাপনা 

১) প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহের পরই মোটাজাতকরণ পদ্ধতি আরম্ভ করতে হবে।

২) নিয়মমাফিক খাবার প্রদানে বিচ্যুত হলে মোটাজাতকরণ প্রক্রিয়ায় সমস্যা হবে। তাই নিয়ম মেনে যথাসময়ে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

৩) ছাগলের প্রয়োজনের বাইরে চলাচল রোধ করতে হবে। এতে করে শরীরের ভিতরে খাদ্য দানা কে বডি টিস্যু তে রুপান্তর করা সম্ভব।

৪) মোটাজাতকরণ পদ্ধতি এর সাফল্য নির্ভর করে প্রথম দুই সপ্তাহে ছাগলের যত্নের উপর। তাই প্রথম দুই সপ্তাহে ছাগলের যথেষ্ট পরিচর্যা করতে হবে।

৫) ছাগলের খাদ্য সংগ্রহে সমস্যার সম্মুখীন হলে কিংবা কখনো পরিমাণমতো খাবার প্রদানে ব্যর্থ হলে তার পরের দিন নির্দিষ্ট পরিমাণ থেকে বেশি খাবার দিতে হবে যেনো পূর্বের দিনের খাবারের ঘাটতি ক্ষতিপূরণে সহায়তা করে।

৬) পান করার জন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিস্কার পানি সর্বদা মজুদ রাখতে হবে। ছাগলের খাদ্য আহারের পরিমাণ দু’দিন পরপর বাড়ালে মোটাজাতকরণে উপকারী হয়। 

৭) ছাগল মোটাজাতকরণ পদ্ধতি এর জন্য ছাগলের পুর্নাঙ্গ ভ্যাক্সিনেশন জরুরী।

৮) দৈহিক বৃদ্ধি সাহায্যে এবং ছাগল রোগমুক্ত রাখতে যথাক্রমে  জিনক্স সিরাপ এবং লিভারটনিক সিরাপ সেবন গুরুত্বপূর্ণ। 

৯) শরীরের ওজন এর উপর বিবেচনা করে 2 cc –

5 cc পরিমাণে ক্যাটাফোস ইঞ্জেকশন ছাগলের গভীর মাংশ পেশী এর উপর প্রয়োগ করা হবে। 

এভাবেই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ছাগলের শরীরে ওজন এবং মাংসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

শেষ কথা

ছাগল মোটাজাতকরণ পদ্ধতি বর্তমান কৃষি সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয় একটি ব্যবস্থা। উপরুক্ত বক্তব্যে ছাগল মোটাজাতকরণে কার্যকরী পদক্ষেপ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করলে ছাগলের মোটাজাতকরণে কার্যকরী  এবং যথেষ্ট নিরাপদ হবে বলে আশা করি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top