দেশি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা

দেশি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানুন!

বাজারে সবসময় দেশি মুরগির চাহিদা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন না থাকার কারণে দামও অনেক বেশি। তাই দেশ মুরগির রোগ ও চিকিৎসা বিষয়ে সচেতন থেকে যদি বানিজ্যিকভাবে পালন করা যায় তাহলে এটি বেশ লাভজনক হতে পারে। 

ভিটামিন মিনারেল সহ পরিমিত খাবারের অভাবে দেশি মুরগিগুলো ঠিকমতো বড় হতে পারে না। পাশাপাশি বিভিন্ন অসুখের কারণে মাঝে মাঝেই এগুলো মারা যায় এবং আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হই। আজ আমরা দেশি মুরগির কিছু রোগ এবং এই সমস্যাগুলোর সমাধান বিষয়ে আলোচনা করবো। 

দেশি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা

বিভিন্ন ভাইরাস জনিত রোগ যেমন রাণীক্ষেত বা গামবোরো মুরগির হয়ে থাকে তা চিকিৎসা করে খুব একটা ভাল ফল পাওয়া যায় না। নিয়মিত টিকাদানই এই ক্ষেত্রে একমাত্র সমাধান। এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া, ফাংগাস, বা পরজীবীর কারণে কিছু রোগ হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে দেশি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা কি হতে পারে সেই বিষয়ে নীচে কিছু ধারণা দেওয়া হলো। 

মুরগির কৃমি রোগ

গ্রীষ্মকালে কৃমির ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকলেও সারা বছরই মুরগি কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। মুরগি কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে কি না তা কিছু লক্ষণ দেখে বুঝতে পারবেন। যেমন- মুরগি ওজন হারাতে থাকে, মাঝে মাঝে রক্তাক্ত পায়খানা করে বা পায়খানার সাথে কৃমি বেরিয়ে আসে, ডিম দেওয়া বন্ধ করে দেয় বা মুরগি কম একটিভ থাকে।

এই ধরণের সমস্যাগুলো দেখা দিলে একজন পশুচিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নির্ধারিত মাত্রায় কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ালে মুরগি ভালো হয়ে যাবে। তাছাড়া প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন, যেমন- মুরগির থাকার পরিবেশ শুষ্ক রাখুন, মাটিতে ছিটিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে নির্ধারিত পাত্রে খাবার দিন, খাবার ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিস্কার করুন ইত্যাদি। এছাড়াও নিয়মিত মুরগিকে কৃমিনাশক খাওয়ালে এগুলো কৃমিমুক্ত থাকবে। 

ককসিডিওসিস বা রক্ত আমাশায়

সাধারণত প্রটোজোয়ার আক্রমণে মুরগি সহ গৃহপালিত সব প্রজাতির পাখিরই এই রোগ হয়ে থাকে। জানলে অবাক হবে এই রোগে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপি প্রায় 3 হাজার 600 কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে থাকে। সাধারণত 2 থেকে 16 সপ্তাহের মুরগি এই রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা জেনে নিন!

এই রোগে আক্রান্ত হলে মুরগির ডায়রিয়া হয় বা রক্ত ও আম মিশ্রিত পায়খানা করতে থাকে। চেহারা উস্কো-খুস্কো ও ফ্যাকাসে দেখায়। আক্রান্ত মুরগি খাবার কম খায় এবং খেলেও ঠিকমতো হজম হয় না। মুরগিগুলো এক জায়গায় বসে থাকে এবং দেহ গোল হয়ে বলের আকার ধারণ করে। 

এই ধরণের সমস্যা চিকিৎসাযোগ্য, তাই দেরি না করে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়। যেমন- খাবার ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিস্কার করুন এবং কিছুটা উপরে রাখুন যেন এগুলো পায়খানার সংস্পর্শে আসতে না পারে। আক্রান্ত মুরগির পায়খানা দ্রুত সরিয়ে ফেলুন এবং লিটার সবসময় শুষ্ক রাখবেন। মুরগিকে পরিমিত ভিটামিন এ ও কে সরবরাহ করুন। 

মুরগির ঠান্ডা বা মাইকোপ্লাসমোসিস

এটি ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট মুরগির শ্বাসতন্ত্রের একটি রোগ। দেশি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা আলোচনায় এই রোগটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রায়শই মুরগি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাতাসের মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে, তবে এই রোগে মৃত্যুহার তুলনামূলক কম।

এই রোগে আক্রান্ত হলে মুরগির গলার ভেতর ঘড় ঘড় শব্দ করে ও নাক দিয়ে তরল পদার্থ বের হয়। খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখা দেয়, ওজন কমে যেতে থাকে ও ডিম পাড়া বন্ধ হয়ে যায়। যদিও মৃত্যুহার কম, তবে দীর্ঘস্থায়ী হলে তা বেশ ক্ষতিকর হতে পারে। 

চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ ভালো করা সম্ভব। অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। গ্রামীন অর্থনীতিতে বিপ্লব আনতে ৪টি কৃষি ব্যবসার আইডিয়া!

উপসংহার

ব্রয়লার, লেয়ার বা অন্যান্য মুরগি পালনে আমরা যেমন সচেতন থাকি, দেশি মুরগির ক্ষেত্রে বরং তার উল্টো হয়। দেশি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা বিষয়ে সচেতন থেকে এগুলো পালন করতে পারলে এটি দারিদ্রতা বা বেকারত্ব দূর করতেও একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এই ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্ট সেকশনের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top