বারোমাসি সবজি তালিকা

মৌসুম ভিত্তিক বারোমাসি সবজি তালিকা!

ঋতু বৈচিত্রের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। ঋতু বৈচিত্র্যের কারণে এ দেশের মাটিতে  বিভিন্ন ধরনের সবজি জন্মে থাকে। সবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল হিসেবে সকলের কাছেই গ্রহণযোগ্য। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় সবজি হচ্ছে একটি উদ্যানতাত্বিক ফসল। পুষ্টিমানের দিক বিবেচনায় সবজি ফসল খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্ব অপরিসীম। 

Table of Contents

বারোমাসি সবজি তালিকা

আজকে বারোমাসি সবজি তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদের মাধ্যমেই অধিক পরিমাণে সবজি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। যেহেতু বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে ঋতুভেদে একেক ঋতুতে একেক সবজি উৎপাদিত হয়ে থাকে। আবার একেক অঞ্চলে একেক ধরনের সবজি উৎপাদন করা হয়। তবে কিছু সবজি সারা বছরই উৎপাদিত হয়। 

বারোমাসি সবজি তালিকা সম্পর্কে অবগত থাকলে সঠিক সময়ে সঠিক ফসলটি চাষ করা যায়। আমাদের দেশে যে সকল সবজি সারাবছরই সহজে উৎপাদিত হয় সেগুলো হলো ডাটা শাক,  পুঁইশাক, লাল শাক, কলমি শাক,  মিষ্টি আলু শাক, গাজর, বরবটির,  ঢেড়স, লাউ, টমেটো, লাউ শাক, শশা, পাট শাক, বেগুন, কাঁচকলা, করোলা, পেপে, কচুশাক, কচুর লতি, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা ইত্যাদি ইত্যাদি। 

উপরের উল্লেখিত সবজিগুলো অঞ্চলভেদে বিশেষ বিশেষ জায়গায় উৎপাদিত হয়ে থাকে। উপরোক্ত ফসলগুলোর মধ্যে কিছু শাক বাকিগুলো শাক সবজি উভয় অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে। 

কৃষি বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময় বারোমাসি সবজি তালিকা কৃষকদের মাঝে বিতরণ করে থাকে। কৃষি বিজ্ঞানীরা রবি ও খরিপ  এ দুধরনের মৌসুমি সবজি চাষ কে ভাগ করেছেন।  অর্থাৎ রবি মৌসুম হলো শীতকাল আর খরিপ মৌসুম হল গৃষ্মকাল। 

রবি মৌসুমে উৎপাদিত কিছু উল্লেখযোগ্য সবজি হচ্ছে টমেট,  শীতলাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর,মুলা, ব্রকলি, বাটি শাক, ওলকপি, শালগম, বেগুন, গোল আলু ইত্যাদি। আর খরিপ মৌসুমে উৎপাদিত সবজি গুলো হল ওল কচু, চিচিঙ্গা,ঝিঙ্গা, কাকরোল, পটল, করলা, চাল কুমড়া,মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি। 

সবজি ফসল উৎপাদন করা অন্যান্য ফসলের মতো জটিল নয়।  স্বাভাবিকভাবে একটু যত্ন নিলে খুব ভালোভাবে সবজি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। আর বর্তমানের সবজির চাহিদা ব্যাপক। বাণিজ্যিকভাবে সবজি উৎপাদন করে অনেকেই প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে সবজি উৎপাদন করা গেলে অধিক পরিমাণে লাভবান হওয়া যায়। 

অতীতে একটি জমিতে শুধু একটি ফসলই উৎপাদিত হতো, কিন্তু বর্তমানে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এক জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। এতে করে দেখা যাচ্ছে  কৃষকরা অধিক লাভবান হতে পারছে। 

বৈশাখ মাসে কি কি সবজি চাষ করা যায়?

বৈশাখ (মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য মে মাস পর্যন্ত)

  1.  গিমা কলমি, ডাটা শাক,লাল শাক, পাতা পেঁয়াজ, পাট শাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ ঢেরস বীজ বপনের উত্তম সময়। 
  2. এসময় গৃষ্মকালীন টমেটোর চারা রোপণ করা যেতে পারে। 
  3. ধুন্দুল, ঝিঙ্গা, করোলা, মিষ্টি কুমড়া, চিচিঙ্গা, চাল কুমড়া ইত্যাদি। 
  4. কুমড়া জাতীয় ফসলের পোকামাকড় ও রোগ দমন ব্যবস্থা এবং পাশাপাশি সেচ প্রদান করতে হবে। 
  5. পরবর্তী মাসে উৎপাদিত ফসল গুলোর জন্য বীজ বপন করতে হবে। 
  6. খরিফ ২  মৌসুমে উৎপাদিত সবজি গুলোর চারা তৈরি করতে হবে। সজিনা, তরমুজ, ভাঙ্গি সংগ্রহ করতে হবে। 
  7. উন্নত জাতের ফলের চারা বা কলম সংগ্রহ করতে হবে। ফসল চাষের স্থান নির্বাচন করতে হবে। ফলন্ত অবস্থায় থাকা ফসলগুলোতে  সুষম সার ও সেচ ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। 

জ্যৈষ্ঠ মাসে কি ধরনের সবজি চাষ করা যায়?

জৈষ্ঠ (মধ্য মে থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত)

  1. আগের মাসে বীজতলায় বহনকৃত খরিফ ২ এর  সবজি চারা সংগ্রহ করে নতুন জমিতে রোপণ এবং সেচ ও  সার প্রয়োগ পরিচর্যা করতে হবে । 
  2. সজিনা সংগ্রহ করা যেতে পারে এবং গৃষ্ম কালীন টমেটোর চারা রোপন ও পরিচর্যা করতে হবে। 
  3. ধুন্দুল, চিচিঙ্গা, পটল, ঝিঙ্গা,  কাকরোল সংগ্রহ ও পোকামাকড় দমনের ব্যবস্থা করতে হবে। 
  4. নাভি কুমড়া জাতীয় ফসল গুলোর মাচা তৈরি, সেচ ও সার প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। 
  5. পরবর্তী ফসলের  চারা রোপণের জন্য গর্ত প্রস্তুত করতে হবে। বয়স্ক ফল গাছে সুষম সার ও ফলন্ত গাছের ফল সংগ্রহ করে বাজারজাতকরণ করতে হবে। 

আষাঢ় মাসে কি কি সবজি চাষ করা যায়? 

আষাঢ়  (মধ্য জুন থেকে মধ্য জুলাই পর্যন্ত)

  1. এসময়ে গৃষ্ম কালীন বেগুন টমেটো কাঁচা মরিচ ইত্যাদির পরিচর্যা করতে হবে। শিমের বীজ বপ,  কুমড়া জাতীয় সবজির পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থা করতে হবে।
  2. পূর্বে লাগানো বেগুন-টমেটো ও ঢেঁড়সের বাগান থেকে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। 
  3. খরিফ ২ মৌসুমে লাগানোর সবজির চারা রোপন, পরিচর্যা, সেচ সার প্রয়োগ করতে হবে। 

শ্রাবণ মাসে কি কি সবজি চাষ করা যায়? 

শ্রাবণ ( মধ্য জুলাই থেকে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত ) 

  1. এ সময় আগাম রবি সবজি যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, টমেটো, বেগুনের বীজ তলা তৈরি করা যেতে পারে। 
  2. সবজি সংগ্রহ ও পোকামাকড় দমন করতে হবে। 
  3. লালশা,  পালংশাক ও শিমের বীজ বপন করা যেতে পারে।
  4. রোপণকৃত ফসলের চারার পরিচর্যা ও ফলন্ত গাছের ফল সংগ্রহ করতে হবে। 

ভাদ্র মাসে কি কি সবজি চাষ করা যায়? 

ভাদ্র  (মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) 

  1. এ সময়ে আগাম রবি সবজি যেমন ফুলকপি বাঁধাকপি, ওলকপি, টমেট,  বেগু,  কুমড়,  লাউয়ের জমি তৈরি করে চারা রোপন ও সার  প্রয়োগ ইত্যাদি করতে হবে। 
  2. মধ্যম ও নাভি রবি সবজির বীজতলা তৈরি ও বীজ বপন করা যেতে পারে। 
  3. নাভি খরিফ ২ সবজি সংগ্রহ ও বীজ সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। 
  4. পূর্বে লাগানো ফসলের চারার পরিচর্যা করতে হবে। হেলে যাওয়া ফসলের মধ্যে খুটি ব্যবহার করতে হবে। যাতে ফসল নষ্ট না হয়।

আশ্বিন মাসে কি কি সবজি চাষ করা যায়?

আশ্বিন (মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধু অক্টোবর পর্যন্ত)

  1. আগাম সবজির চারা  রোপন চারার যত্ন, সার প্রয়োগ, বালাই দমন ব্যবস্থা করতে হবে। আগাম টমেটো, বাঁধাকপি,  ফুলকপি, ওলকপির, আগাছা দমন ও ভালোভাবে পরিচর্যা করতে হবে।
  2. বরবটি, সিম, লাউ  ফসলের মাচা তৈরি এবং পরিচর্যা করতে হবে।  
  3. পেঁয়াজ, রসুনের বীজতলা ও আলু  লাগাতে হবে। 
  4. ফসলের গোড়ায় ভালোভাবে মাটি দিতে হব।  আগাছা পরিষ্কার ও সার প্রয়োগ করতে হব।  

কার্তিক মাসে কি কি সবজি চাষ করা যায়? 

কার্তিক (মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত)

  1. আলু, বাঁধাকপি,ফুলকপি,ওলকপির গোয়া বাধা ও আগাছা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে। 
  2. মরিচের বীজ বপন এবং চারা রোপণ করা যেতে পারে। 

অগ্রহায়ণ মাসে কি কি সবজি চাষ করা যায? 

অগ্রায়ন (মধ্য নভেম্বরে থেকে মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত)

  1. মিষ্টি আলুর লতা রোপন, পেঁয়াজ,  রসুন ও মরিচের চারা রোপন। আলুর জমিতে সার প্রয়োগ ও সেচ ব্যবস্থা করা। 
  2. পূর্বে লাগানো ফসলগুলির ভালোমতো পরিচর্যা করতে হবে। 

পৌষ মাসে কি কি সবজি চাষ করা যায? 

পৌষ (মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত)

  • আগাম রোপণ করা রবি সবজিগুলোর পরিচর্যা, পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন   এবং সবজি সংগ্রহ করতে হবে। 

মাঘ মাসে কি কি সবজি চাষ করা যায়?

মাঘ (মধ্য জানুয়ারি থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত)  

  1. পেঁয়াজ, রসুন, আলুর গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে। টমেটো গাছের  ডাল ছাঁটাই করতে হবে। 
  2. আগাম খরিপ ১ সবজির বীজ তলা তৈরি করতে হবে। বীজতলায় চারা উৎপাদনের জন্য বেশি সচেতন থাকতে হবে। 

ফাল্গুন মাসে কি কি সবজি চাষ করা যায়? 

ফাগুন (মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত)

  1. আগাম খরিপ ১ সবজির চারা উৎপাদন ও মূল জমি তৈরি করতে হবে। মাদা তৈরি করে ঢেঁড়স, ডাটা লাল শাকের বীজ বপন করতে হবে।
  2. আল, মিষ্টি আলু সংগ্রহ করতে হবে। আলু সংরক্ষণের খুব বেশি যত্নবান হতে হবে। আলু রোপনের ১০০ দিন পর সংগ্রহ করতে হয়। এতে করে আলুর চামড়া শক্ত ও সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায। বাড়ির ছাদে সবজি চাষ পদ্ধতি জেনে নিন!

চৈত্র মাসে কি কি সবজি চাষ করা যায়? 

চৈত্র (মধ্য মার্চ থেকে মধ্যে একটির পর্যন্ত)

  1. এসময়প গৃষ্মকালীন বেগুন, টমেটো, মরিচের বীজ বপন করা যেতে পারে।
  2. পূর্বে লাগানো সবজি ক্ষেতের  আগাছা দমন সেচ ও সার ব্যবস্থা করতে হবে। 
  3. কুমড়া জাতীয় সবজির পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।  

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top