রানীক্ষেত রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

রানীক্ষেত রোগের কারন ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা জানুন!

রানীক্ষেত হচ্ছে খুবই মারাত্মক একটি সংক্রমণ জাতীয় রোগ। উপমহাদেশে সর্বপ্রথম বর্তমান ভারতের একটি রাজ্যে এই রানীক্ষেত নামক রোগটি সনাক্ত করা হয়। এটি মূলত ভাইরাসজনিত কারনে সংক্রমিত হয়ে থাকে।

Table of Contents

রানীক্ষেত রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

বছরের যে কোন সময়ই এ রোগ দেখা দিতে পারে। তবে বিশেষ করে বসন্ত ও শীতকালে এ রোগের প্রকপ বৃদ্ধি পায়। রানীক্ষেত রোগে আক্রান্ত হলে প্রায় সব হাঁস মুরগিই মারা যায়। তবে বাচ্চা হাঁস মুরগি আক্রান্ত হলে ১০০ ভাগ মৃত্যে হয়ে থাকে।

রানীক্ষেত রোগ প্রাদুর্ভাব হওয়ার কারণ

মূলত রানীক্ষেত রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা জানার আগে আমাদের এই রোগ হবার কারন জানতে হবে। ভাইরাস জনিত হওয়ার কারণে এ রোগটি খাদ্য ও পানি পান করার ফলে সুস্থ হাঁস মুরগির মধ্যে সংক্রমিত হয়। আবার বাতাসের মাধ্যমেও এ রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে।

বাজার থেকে অসুস্থ  হাঁস মুরগি কিনে খামারে আনলেও সুস্থ হাঁস মুরগি সংক্রমিত হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় টিকাদানের মাধ্যমে এ রোগজীবাণু এক খামার থেকে অন্য খামারে সংক্রমিত হয়ে থাকে। ব্রয়লার মুরগির রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন!

রানীক্ষেত রোগের লক্ষণ

১  শ্বাসক্ষ্ট, হাঁচি, কাশি,গলায় ঘড়ঘড় আওয়াজ এ রোগের প্রধান লক্ষণ।

২  পায়খানা পাতলা ও সাদা চুনের মত হয়।

৩  পা, ডানা, ও ঘাড় অবশ হয়ে যায়।

৪  ডিম উঠপাদন কমে যায়

৫  খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়।

৬  স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হওয়ার পরে পক্ষাঘাত দেখা দেয়।

ময়নাতদন্ত রিপোর্ট

১  প্রোভেন্টিকুলাসে রক্তের ফোটা পাওয়া গিয়েছে।

২  প্লাগ গঠিত হয় অন্ত্রনালীতে।

৩  শ্বাসনালীতে রক্ত দেখা যায়।

৪  শ্বাসনালী ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

রানীক্ষেত রোগের চিকিৎসা 

রানীক্ষেত রোগের মূলত কোনো চিকিৎসা নেই। রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার সাথে সাথে হাঁস মুরগিগুলোকে ভ্যাক্সিনেশন এর আওতায় নিয়ে আসা উচিত। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয় অসুস্থ হাঁস-মুরগি গুলোকে সুস্থ হাঁস মুরগি গুলো থেকে আলাদা করে রাখতে হবে। 

ঘরটিতে প্রাকৃতিক ভাবে জীবানুনাশক দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে প্রথম অবস্থায়তেই লক্ষণ গুলো দেখার সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এতে করে সঠিকভাবে সঠিক সময়ে সুচিকিৎসা দিলে খামারিদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কমে যায়। 

নিয়মিত জীবানুনাশক দিয়ে খামার ও জিনিসপত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। খামার থেকে পোকামাকড় ভ্রমণের ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষের অনিয়ন্ত্রিত আনাগোনার প্রতি বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে। খামারে যাতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ  ছড়াতে না পারে সেদিকে প্রখর দৃষ্টি রাখতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রাকৃতিক উপায়ে এই এখন ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

খামার থেকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দূর করতে একটি বিশেষ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে। রানীক্ষেত রোগ নিরাময়ের জন্য  কিছু বিশেষ ঔষধ আবিষ্কার হয়েছে সেগুলো হলো কট্টা- ভেট পাউডার, এনফ্লক্স ভেট সলিউশন, মোক্সাসিল ডেট পাউডা, জেনাসিস ডেট ইনজেকশন, ইলেকট্রমিক পাউডা,  সিভিট জেট পাউডার ইত্যাদি। 

রানীক্ষেত রোগটি যদি খামারে মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে এর জন্য বিকল্প হিসেবে এন্টিবায়োটিক নিতেই হবে। আর হাঁস-মুরগি পাতলা পায়খানা প্রতিরোধে ইলেক্ট্রোলাইট দিতে হবে। যেহেতু রানীক্ষেত রোগ হলে হাঁস-মুরগি খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে, সেজন্য পানির সাথে ভিটামিন মিশিয়ে নিয়মিত খাওয়াতে হবে। 

একেবারে ছোটবেলা থেকেই যদি হাঁস মুরগী গুলোকে ভ্যাক্সিনেশন এর আওতায় নিয়ে আসা যায় তাহলে রানীক্ষেত রোগের আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। 

প্রথমত হাঁস  মুরগির বাচ্চার বয়স যখন ৩ থেকে ৪ দিন তখন ভ্যাকসিন দিতে হবে। তারপর ১৪ থেকে ১৭  দিন বয়সে আবার পরবর্তি ডোজ  দিতে হবে। এরপর ৬০ থেকে ৬৫  দিন বয়সে আবার দিতে হবে ভ্যাকসিন। মনে রাখতে হবে  রানীক্ষেত রোগের টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা ছয় মাস পর্যন্ত বজায় থাকে। 

উপরের  আলোচনা থেকে রানীক্ষেত রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আজকে জানতে পারলাম। মনে রাখতে হবে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার আগেই সংক্রমণ প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করাই সবচেয়ে উত্তম। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top