লাল শাক চাষ করার সঠিক পদ্ধতি জেনে নিন!

লাল শাকের চাষ পদ্ধতি : লাল শাক একটি অতি পরিচিত সবজি। লাল শাক সবার কাছেই প্রিয় ও পুষ্টিকরতো বটেই। এ শাকটি  দেখতে যে রকম সুন্দর এবং খেতেও সুস্বাদু। বর্তমানে এই শাকটি সারা বছরই পাওয়া যায়। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কমবেশি লাল শাক চাষ হয়ে থাকে। 

যদিও দেশের উত্তরাঞ্চলে এই শাকটি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়। বেকারত্ব দূর করতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লাল শাক চাষ করার কোনো বিকল্প নেই। 

লাল শাকের চাষ পদ্ধতি

মাটি নির্বাচন 

বেলে দোঁআশ থেকে এঁটেল দোআঁশ মাটি লাল শাক চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। তবে খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যাতে পানি জমে না থাকে। 

জাত সমূহ 

আমাদের দেশে লাল শাকের অনুমোদিত কিছু উন্নত  জাত রয়েছে সেগুলো হলো আলতা পেটি ২০, রক্ত লাল, বাড়ি লালশাক ১, ললিত,  রক্তরাঙ্গা, পিংকি, কুইন  রক্ত জবা ইত্যাদি । 

জমি তৈরি ও বীজ বপন 

  • লালশাকের জন্য নির্বাচিত জমি খুব ভালোভাবে ৪ – ৬  টি চাষ দিতে হবে। 
  • চাষ দেওয়ার পর জমিতে মই দিয়ে  ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে।
  • লাল শাকের বীজ ছিটিয়ে  এবং সারিতে বপন করা। তবে সারিতে বীজ বপন করা ভালো। 
  • সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০ সেন্টিমিটার রাখতে হবে।

জলবায়ু 

বর্তমানে সারা বছরই লাল শাক চাষ করা যায়। তবে শীতকালে শুরুতে লাল শাকের ফলন একটু বেশি হয়ে থাকে। লালশাক মূলত ভাদ্র-পৌষ মাস পর্যন্ত বেশি চাষ হয়।

সার  প্রয়োগ পদ্ধতি 

লাল শাকের চাষ পদ্ধতি তে সারের পরিমাণ

সার এক শতকে  হেক্টর প্রতি           
গোবর  ৪০ কেজি১০ টন   
ইউরিয়া৫০০ গ্রাম১২৫ কেজি 
টিএসপি৩০০ গ্রাম৭৫ কেজি
এমওপি৪০০ গ্রাম১০০ কেজি

গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে লালশাকের জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে বীজ বপনের কয়েকদিন আগেই সার ব্যবস্থাপনা করতে হবে। 

মাটিতে সার প্রয়োগের আগে অবশ্যই মাটি পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। তাহলে মাটির প্রয়োজন অনুযায়ী সে পরিমাণ সার প্রয়োগ করলেই হয়। লালশাকের জমিতে গবাদি পশুর গোবর ব্যবহার করা যেতে পারে। সঠিক বরবটি চাষ পদ্ধতি জেনে নিন! 

পরিচর্যা লাল শাকের চাষ পদ্ধতি 

  • বীজ গজানোর এক সপ্তাহ পর যে জায়গা দিয়ে অতিরিক্ত ঘন গাছ উঠেছে সেগুলো থেকে কিছু ছাটাই করে ফেলতে হবে।
  • নিড়ানি দিয়ে জমির আগাছা মুক্ত করতে হবে।
  • জমির মাটি শক্ত হয়ে গেলে নিড়ানি দিয়ে হালকা করে আলগা করে দিতে হবে।  
  • ৪-৫ দিন পর পর সেচ দিতে পারলে ভালো হয়।

ফলন

লালশাক প্রতি শতকে ৩০ – ৪০ কেজি ও প্রতি হেক্টরে  ৫-৬ টন পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে। 

বাজার সম্ভাবনা 

বর্তমান বাজারে লালশাকের  প্রচুর চাহিদা রয়েছে। মানুষের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে সেই পরিমাণ যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে বুঝা যায় উন্নত পদ্ধতিতে লাল শাক চাষ করে অধিক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এছাড়াও দেশের বাইরে লাল শাকের প্রচুর চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে লালশাক এর চাহিদা চোখে পড়ার মতো। দাম অনেক বেশি। 

তাই উৎপাদিত লালশাক রপ্তানির  মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। 

এর জন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে আধুনিক পদ্ধতিতে লাল শাক চাষ করলে প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রায় ৫০০ কেজি লাল শাক পাওয়া যায়। মৌসুম ভিত্তিক বারোমাসি সবজি তালিকা!

লাল শাকের পুষ্টিগুণ  

লাল শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ,বি,সি ও কেলসিয়াম।এছাড়াও রয়েছে ফুলেট, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, থায়ামিন, প্রোটিন,প্যানটোথেনিক অ্যাসিড ইত্যাদি। 

খনিজ উপাদান ফসফরাস, আয়রন, সেলেনিয়াম, কপার, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। 

লাল শাকের উপকারিতা 

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে 

লাল শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে বিদ্যমান ভিটামিন এ চোখের রেটিনার ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে ফলে চোখ ভালো থাকে ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

কিডনি সমস্যা দূর করে 

কিডনি ফাংশন ভালো রাখতে ও কিডনি পরিষ্কার রাখতে লালশাকের জুড়ি মেলা ভার। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত লাল শাক খেলে কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং রক্তে থাকা একাধিক ক্ষতিকর উপাদান শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

ক্যান্সার দূরে রাখে 

লাল শাকে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়াও লাল শাকে বিদ্যমান এমাইনো এসিড, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসপরাস, ভিটামিন ই, পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি যা শরীরে উপস্থিত একাধিক টক্সিন উপাদান দূর করে।  সেইসাথে ক্যান্সারের কোষ যাতে শরীরের জন্ম নিতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখে।

রক্তশূন্যতা দূর করে  

রক্তশূন্যতা রোধ করতে লালশাক অনেক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন।  লালশাক শরীরে লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অ্যানিমিয়া রোগীদের জন্য লালশাক খুবই উপকারী। 

হজম শক্তি বাড়ে 

লাল শাকে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও  লাল শাক খেলে বদহজমের আশঙ্কা কমে যায়। নিয়মিত লাল শাক খেলে বাওয়েল মুভমেন্ট ঠিক মত হয়।

ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস 

অন্যান্য শাকের তুলনায় লালশাকে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। আর ক্যালসিয়াম শরীরের হাড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে। তাই হাড় গঠন, দাঁতের সুস্থতা, গর্ভবতী এবং প্রসূতি মায়েদের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে বেশি বেশি লাল শাক খাওয়া প্রয়োজন। 

চুল পড়া কমায় 

চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে লালশাক খুবই উপকারী। এই শাকিটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের মিনারেল ও পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top