লেবু গাছের পরিচর্যা

কিভাবে সঠিকভাবে লেবু গাছের পরিচর্যা করতে হয় জেনে নিন!

লেবু গাছের পরিচর্যা : বিশ্বে লেবু জাতীয় ফল বা সাইট্রাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম। উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে এই ফলের অবস্থান দ্বিতীয়। আবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ওই ফলের স্থান ১ম। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। 

লেবু গাছের পরিচর্যা

সাইট্রাস বা লেবু গাছ 

মুলত লেবু গাছের মৌলিক চাহিদাগুলো প্রধান করার মাধ্যমে লেবুগাছ বৃদ্ধি করা কঠিন কিছু নয়। একটি বাগানকে সুসজ্জিত ভাবে সাজাতে লেবু গাছের তুলনা অপরিসীম। এই গাছের সুগন্ধযুক্ত পাতা যা বাতাসে একটি উদ্দীপক সাইট্রাস গ্রন্ধ প্রকাশ করে থাকে। 

লেবু গাছ হলুদ চিরহরিৎ ফলগাছা ৩-৬ মিটার উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এই গাছটি শনাক্ত করা যায় সুগন্ধযুক্ত সাদা ফুল ও ঘন সবুজ ডিম্বাকৃতির পাতার মাধ্যমে। পর্যাপ্ত পরিমান সূর্যালোক ও যত্ন নেওয়া হলে এই গাছটি থেকে আপনি বছরের বেশিরভাগ সময় জুড়েই ফল পেতে থাকবেন। 

লেবু গাছের পরিচর্যায় মাটি তৈরি

দোআঁশ ও নিকাশ  সম্পূর্ণ মাধ্যম অম্লীয় মাটিতে লেবু চাষ করার সবচেয়ে উত্তম। দিনের বেশিরভাগ সময় পর্যাপ্ত পরিমান সূর্যের আলো থাকে এমন জায়গা নির্বাচন করা লেবু গাছের জন্য। এছাড়াও লেবু গাছে একটু বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। 

চারা রোপণ 

গুটি কলম বা কাটিং তৈরি করে লেবুর চারা রোপণ করা যায়। লেবুর চারা রোপনের সবচেয়ে উত্তম সময় হয়েছে বৈশাখ থেকে মধ্য আশ্বিন মাস। এই সময়ে চারা রোপণ করলে চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। চারা থেকে চারা দূরত্ব হবে ২.৫ মিটার।

আপনি বাগানের না রোপণ করে পাত্রে বা  টবেও লেবু গাছ রোপণ করতে পারেন। পাত্র বা টবটি ভালোভাবে নিষ্কাশন করা মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে। পূর্ণ সূর্য আছে এমন জায়গায় টব বা পাত্রটি স্থাপন করতে হবে। 

আর বাগানে রোপনের ক্ষেত্রে সূর্যালোক অবস্থান চয়ন করে আপনার গাছের জন্য একটি স্থান প্রস্তুত করুন। গুটি কলম বা কাটিং এ চারার পর্যাপ্ত পরিমান শিকড় আছে কিনা তা বিশেষভাবে খেয়াল করতে হবে। এরপর সাবধানে আপনার গাছটি গড়তে নামিয়ে দিন। 

অতপর মাটির উপরে ১০ সেন্টিমিটার এ কম্পোস্ট বা সার যোগ করুন।  রোপন ও মালচিং সম্পন্ন করা হলে, মাটির আর্দ্রতা রক্ষা করতে গাছকে ভালোভাবে পানি দিন। লেবু গাচ আর্দ্র ভালো নিষ্কাশিত মাটি বেশি পছন্দ করে। গৃষ্মকালে প্রতি ৭ -১০ দিন পরপর গাছে পানি দেওয়া আদর্শ। গাছকে নিয়মিত পানি দিন এবং প্রতিমাসে কমপক্ষে ১২ সেন্টিমিটার আদ্রতা ভিজিয়ে রাখতে পারলে ভালো। টমেটো দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় জেনে নিন!

লেবু গাছের পরিচর্যায় গাছের খাদ্য

সমৃদ্ধ উর্বর মাটি লেবু গাছের জন্য সবচেয়ে আদর্শ। বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষ করতে হলে নিয়ন্ত্রিত মুক্ত সাইট্রাস সার রয়েছে যা প্রয়োগ করলে ফলন অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। এই সারটি নিয়ন্ত্রিত গতিতে লেবু গাছে প্রয়োগ করার মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি করা হয়।

লেবু গাছে মূলত বছরের দুইটি সময়ে সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারীতে একবার এবং আগস্টে আরেকবার দেওয়া হয়ে থাকে। সার দেওয়ার আগে এবং পরে ভালোভাবে গাছে পানি দিতে হবে যাতে গাছ ভালোভাবে পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে। 

কফি গ্রাউন্ড মাটির অম্লতা বাড়ায়, নাইট্রোজেন ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের মতো পুষ্টির একটি ভালো উৎস যা লেবু গাছ গ্রহণ করে থাকে। চূর্ন ডিমের খোসায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা এই গাছের জন্য খুবই উপযোগী। এগুলো প্রয়োগ করলে এ গাছের ফলের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পায়। 

লেবু গাছ ছাঁটাই করা 

একটি লেবু গাছ ছাঁটাই একটি পছন্দনীয় আকৃতি করে ধারণ করতে সাহায্য করে। এটি নিয়মিত ছাঁটাই, মৃত,জটাযুক্ত বা দুর্বল শাখাগুলোকে সরিয়ে ফেললে গাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। লেবু গাছ কে শীতের শেষ থেকে বসন্তের শুরু পর্যন্ত ছেঁটে ফেলা উচিত। আবার ফসল করার পরবর্তী মৌসুমের জন্য এটিকে প্রস্তুত করতে হবে। 

যখন লেবুগাছ পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় তখন এটি সঠিকভাবে সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে। যা ফলের বিকাশমান ধারা বজায় রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ন্যূনতম ৮টি ভারা শাখায় গাছকে মজবুত রাখতে হবে। গাছকে সঠিকভাবে ছাঁটাই করলে ছত্রাকের সংক্রমণ প্রতিরোধ হয়। ছাঁটাই করার সঠিক নিয়ম হচ্ছে মাটি থেকে ১ মিটার দূরত্বের মধ্যে লক্ষ্য রাখুন। গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা জেনে নিন!

মালচিং- লেবু গাছের পরিচর্যা

মাটির আদ্রতা সঠিকভাবে বজায় রাখতে মাটিকে মালচিং করতে হবে। খড় মালচিং এর জন্য সবচেয়ে ভালো। এই ধরনের মালচিং করলে সহজেই করা যায়। যা মাটিকে অনেক এক প্রয়োজনীয় পুষ্টি দিয়ে সমৃদ্ধ করে থাকে। লেবু গাছের জন্য প্রচুর পরিমাণ আলোর প্রয়োজন হয়ে থাকে। 

আগাছা দমন

লেবু গাছের আশেপাশের অন্যান্য গাছগুলো গাছের উচিষ্ট পুষ্টি কেড়ে নিতে পারে। লেবু গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য গাছের গোড়ার ঘাস ও আগাছা সরিয়ে ফেলতে হবে। এই গাছের আশেপাশে আগাছা  থাকলে গাছের সঠিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। 

লেবু গাছের রোগবালাই ও চিকিৎসা 

ডাই-ব্যাক হলো লেবু জাতীয় ফসলের একটি মারাত্মক রোগ। এই রোগটি হলে লেবুর ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। যার কারণে প্রতিবছর কৃষকরা লোকসানে পড়ে। এ রোগটি হয় কলিট্রোটিক্যাম গোলিওসপোরডিস নামক ছত্রাকের ধারা সংক্রমিত হয়ে থাকে। 

লেবু পাতার কার্ল 

লেবু পাতা কুৃঁচকানো অনেক কারণে হতে পারে, যথা কীটপতঙ্গের উপদ্রব, তীব্র তাপ বা ঠান্ডা, পানিশূন্যতা ইত্যাদি। সাইট্রাস পাতার কোকড়ানো চিকিৎসা নির্ভর করে  মূলত কি কারনে কার্ল হয়েছে তার উপর। এই রোগটি প্রতিকারের জন্য লেবু গাছে ভালোভাবে পানি দেওয়া এবং পাতাগুলোকে নিমের তেল বা কীটনাশক নিয়মিত স্প্রে করতে হবে। 

রোগ এবং কীটনাশকের উপদ্রব 

লেবু গাছের কিটপতঙ্গ গাছের বৃদ্ধিতে নানাভাবে প্রভাবিত করে। এমন কিছু কীটপতঙ্গ আছে যারা গাছের রস চুষে লেবু  গাছের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে থাকে। এগুলি হল যথাক্রমেঃ-

  • স্কেল
  • এফিডস
  • স্যুটি ছাঁচ
  • সাইট্রাস পাতা খনি
  • ব্রোঞ্জ কমলা বা দুর্গন্ধযুক্ত বাগ
  • ফলের মাছি
  • সাইট্রাস প্রজাপ্রতি

বাগানে এই রোগটি দেখা দেওয়া মাত্রই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব  কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে সে অনুযায়ী সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

পরিশেষে বলা যায় যে লেবু গাছের একটু বাড়তি পরিচর্যা করলে চাহিদা অনুযায়ী কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যায়। তাই আসুন বেশি বেশি লেবু বাগান গড়ে তুলি এবং আমাদের অর্থনীতিকে সচল রাখি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top