স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি

বাংলাদেশে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি জেনে নিন!

বর্তমান বিশ্বে কৃষক দের মাঝে স্ট্রবেরি এক নতুন প্রজন্মের ফল। স্ট্রবেরি কে “ফলের রানী” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।এই ফলটি তার স্বাদ এবং অপরুপ সৌন্দর্যের জন্য কৃষিখাতে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি  সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং নির্দেশনার অভাবে কৃষকদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই এই ফলটি চাষের সঠিক পদ্ধতি জেনে নেওয়া দরকার। 

Table of Contents

স্ট্রবেরি চাষের উপকারিতা

 ১) পুষ্টি – স্ট্রবেরিতে প্রচুর পুরিমাণে ভিটামিন – সি এবং ম্যাংগানিজ পাওয়া যায়, তার সাথে সামান্য মাত্রায় ভিটামিন-বি এবং পটাসিয়াম রয়েছে।

২) স্বাস্থ্যসেবা – স্ট্রবেরিতে এন্টি-ওক্সিডেন্ট থাকে,যা শরীরে হৃদরোগ প্রতিরোধে এবং শরীরে ব্লাড-সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়া স্ট্রবেরি বিভিন্ন চর্মরোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। স্ট্রবেরি শরীরের রক্তচাপ কমাতে ভূমিকা পালন করে। 

৩) অর্থনৈতিক উন্নয়ন স্ট্রবেরি ফলনের মাধ্যমে ৪০,০০০ একর জমিতে ৩ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ লাভ করা সম্ভব যা একটি দেশের অর্থনৈতিক অবদানের কৃষিখাতে সিংহভাগ জায়গা দখল করে। 

 ৪) আইস্ক্রিম তৈরী – স্ট্রবেরির উজ্জ্বল লাল রঙ আইস্ক্রিম কে আকর্ষণীয় করে তুলে যার ফলে এটি আইস্ক্রিম তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।

 ৫) ওজন হ্রাস – স্ট্রবেরি এর মধ্যে –

              ৪৪ গ্রাম ক্যালরি ( ১০০ গ্রাম)

              ১০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট 

              ০.২ গ্রাম চর্বি রয়েছে।

তাই স্ট্রবেরি ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে। এ সকল তথ্যের ভিত্তিতে বর্তমান বিশ্বে স্ট্রবেরি চাষ কৃষিখাতে ব্যাপকভাবে ঠাঁই পেয়েছে।

স্ট্রবেরির বিভিন্ন প্রকারের জাত

বর্তমানে বিশ্বে ৬০০ প্রজাতির স্ট্রবেরি পাওয়া যায়। এরমধ্যে  কয়েকটি  উল্লেখযোগ্য প্রজাতির নাম হলো – অলস্টার, অলিন্তা, আল্পাইন স্ট্রবেরি, এমেলিয়া এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় “ক্যাম্ব্রিজ ফ্যাভারিট”।

বাংলাদেশে স্ট্রবেরি চাষ 

আমাদের দেশে স্ট্রবেরি চাষের উপযুক্ত সময় হচ্ছে নভেম্বর – ডিসেম্বর। উত্তরবঙ্গ স্ট্রবেরি চাষের জন্য সর্বোত্তম কারণ শীতকালে সেখানে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে তুলনামূলক ভাবে ঠান্ডা। বাংলাদেশে প্রতিটি গাছ থেকে ২০০-৩০০ গ্রাম স্ট্রবেরি জন্মায় এবং এক বিঘা জমি থেকে ৬০০০ গাছ লাগানো যায়। 

বাংলাদেশে কৃষক শ্রেনীর  মানুষজন প্রথম স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর মজনুর হোসেনের মাধ্যমে এবং  প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে স্ট্রবেরি চাষের উদ্যোগ নিয়েছে ২০১১ সালে খাগড়াছড়ির এক দম্পতি। 

>> মাল্টা চাষ পদ্ধতি জেনে শুরু করুন মাল্টা চাষ!

স্ট্রবেরি চাষ এর আগে সতর্কতা অবলম্বন 

  • নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া স্ট্রবেরি চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত। স্ট্রবেরি ছোট দিনের উদ্ভিদ, তাই দিনে ৮ ঘন্টা রৌদ্রময় জায়গায় রেখে ১০ দিন রাখতে হবে। শীতকালের শেষ সময়কালীন বসন্তের আভাস আসলে স্ট্রবেরি জন্মানো শুরু করে। তবে উপক্রান্ত এলাকায় শীতকালেই স্ট্রবেরির জন্মানো শুরু হয়।
  • সূর্যালোকের সময়কালের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে স্ট্রবেরি দুই ভাগে বিভক্ত – ১) যে সকল স্ট্রবেরি ছোট দিন এবং বড় দিন – উভয় ক্ষেত্রেই ফুলের কুঁড়ি জন্মাতে সক্ষম ২) যে সকল স্ট্রবেরির কুঁড়ি শুধু মাত্র ছোট দিনে জন্মায়।
  • স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি  যথাযথ সম্পন্ন করার জন্যে ভালো নিষ্কাশিত দোঁআশ মাটি প্রয়োজন। জমিতে ক্ষার থাকা চাষের জন্য ক্ষতিকর এবং সামান্য পরিমাণে এসিডিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। জমিতে পিএইচ এর পরিমাণ হবে ৫.৭-৬.৫। জমিতে ক্যালসিয়াম এর উপস্থিতি এর ফলে স্ট্রবেরি এর পাতার রঙ হলদে হয়ে যায়। স্ট্রবেরি চাষের জন্য একই জমি একাধিক বার কয়েক বছর ধরে  ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সবুজ সার ক্ষেত এবং নেমাটডা বিহীন জমী স্ট্রবেরি চাষের জন্য সর্বোচ্চ উপকারী।
  • শীতকালীন ফল হওয়া সত্ত্বেও গ্রীস্মকালে স্ট্রবেরি চাষাবাদের জন্য গ্রীনহাউজ পদ্ধতি এবং বর্ষাকালে চাষাবাদের জন্য পলিহাউজ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
  • জমিতে পেস্টিসাইড ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ১ হেক্টর জমিতে ১৮০০ লিটার এর বেশি পেস্টিসাইড ব্যবহার করা যাবেনা। পেস্টিসাইড প্রয়োগের সময় মাস্ক এবং গ্লাভস পরিধান করতে হবে। ঔষধ প্রয়োগের সময় সিরিঞ্জ ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে।
  • ব্যবহৃত মেশিনগুলোর গতি এবং বল রাষ্ট্রের নির্দেশ প্রণীত পরিমাণে রাখতে হবে।

ধাপে ধাপে চাষাবাদ পদ্ধতি 

১)  জমি চাষ – জমি চাষের সময় ট্রাক্টর ব্যবহার করা শ্রেয়। সনাতন পদ্ধতিতে লাঙ্গল ব্যবহার করলে জমি চাষে অধিক সময় ব্যয় হয়।

২) বীজস্থান তৈরী – একটি নির্দিষ্ট জায়গায় যথাযথ পরিচর্যা করে বীজস্থান তৈরী করতে হবে। 

৩) সেচ ব্যবস্থা – জমিতে যথেষ্ট পরিমাণ সেচের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে হবে। সেচের জন্য কয়েকটি চ্যানেল থাকবে যেখানে পাইপ থেকে পানি বের হয়ে থাকবে।

৪) চারা লাগানো  – জমিতে যথাযথভাবে সেচের পর যত্ন সহকারে চারা গুলো লাগাতে হবে।

৫) মালচিং – পুরনো কালে স্ট্রবেরি চাষে খড় ব্যবহৃত হতো। কিন্তু আধুনিক যুগের কৃষক রা মালচিং এর জন্য প্লাস্টিক ব্যবহার করে যেনো আর্দ্যতা বজায় থাকে। এরপর দু’মাস ধৈর্য্য সহকারে বীজস্থান পর্যবেক্ষণ করে ফসলের উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

৬) ফসল উৎপাদন – ফসল উৎপাদন এর সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শুধুমাত্র উজ্জ্বল লাল রঙের ব্যারি গুলো ই ফসলের জন্য বাছাই এর উপযুক্ত এবং প্রতি তিন দিন পরপরই ব্যারি গুলো তুলতে হবে। ব্যারি গুলো কে টাঁনা হিঁচড়ে করা যাবেনা, অন্যথায় চারাগাছের ব্যাপকভাবে ক্ষতি হবে যা ব্যবসায় লোকসানের অন্যতম কারণ। 

এভাবেই পরিস্থিতি বিবেচনা করে যথাযথ পরিচর্যা ও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে স্ট্রবেরি উৎপাদন সম্ভব। 

শেষ কথা

স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিশেষ তথ্য উপরুক্ত বক্তব্যে প্রদান করা হয়েছে। নিয়মমাফিক পদক্ষেপ নেওয়াই হচ্ছে এই প্রক্রিয়ার মূল বিষয়। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে কৃষিখাতে উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব বলে আশা করছি। 

>> তরমুজ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top