হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি : আমরা জানি ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টা তে অনেক বেশি পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ভুট্টা আমাদের দেশের প্রায় সব জেলাতেই কম বেশি চাষ হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে ভুট্টার উন্নত জাত গুলোর মাধ্যমে আগের তুলনায় ফলন এখন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি
ভুট্টার জন্মস্থান
ভুট্টার বৈজ্ঞানিক নাম হল Zea mays. যার অর্থ দাঁড়ায় এক প্রকারের খাদ্যশস্য। ভুট্টার আদি জন্মস্থান হচ্ছে আমেরিকায়। যা পরবর্তীতে আস্তে আস্তে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল।
ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর ভুট্টা গাছ এবং পাতা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। হাঁস মুরগি সহ মাছের খাদ্য হিসেবেও ভুট্টার ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে।
বিশেষ করে পশু, মুরগির খামার ও মাছের জন্য বছরের প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার টন ভুট্টা দানার প্রয়োজন হয় আমাদের দেশে।
হাইব্রিড ভুট্টার জাত পরিচিতি
সঠিকভাবে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি অনুসরণের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে জাত নির্বাচন করা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক অনুমোদিত হাইব্রিড ভুট্টা জাতগুলো হলঃ-
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫, বারি হাইব্রিড ভুট্টাঃ-৭, বারি হাইব্রিড ভুট্টা- ৯, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১০, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১১, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১২, বারি মিষ্টি ভুট্টা-১, বাড়ি হাইব্রিড ভুট্টা-১৫, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৩ ইত্যাদি।
হাইব্রিড ভুট্টা বীজের দাম
২০২২ সালে নির্ধারিত ভুট্টা বীজের দাম হলো খৈ ভুট্টা (ভিত্তি) কেজি প্রতি ডিলার পর্যায়ে ৫০ টাকা এবং চাষিপর্যায়ে ৫৮ টাকা। আর বারি হাইব্রিড মেইজ-৯,১৬ (মানঘোষিত) কেজি পর্যায়ে ডিলার পর্যায়ে ১৪০ টাকা এবং চাষি পর্যায়ে ১৬০টাকা।
হাইব্রিড ভুট্টা চাষ
বাংলাদেশে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। বীজ বপনের জন্যও কিছু নির্দিষ্ট সময় আছে। রবি মৌসুমে বীজ বপন মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রায়ণ (অক্টোবর-নভেম্বর) পর্যন্ত।
খরিপ মৌসুমে ফাল্গুন থেকে মধ্য চৈত্র (মধ্য ফেব্রুয়ারি- মার্চ) পর্যন্ত সময় বীজবপনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
মাটি তৈরি
হাইব্রিড ভুট্টা বিভিন্ন ধরনের মাটিতে জন্মাতে পারে। তবে বিশেষ কিছু মাটি আছে যেগুলোতে ভুট্টার ফলন খুব ভালো হয়।
- সর্বোত্তম মাটি হচ্ছে গভীর গাঢ় পলি দোআঁশ মাটি।
- সাব আর্দ্র আবহাওয়ায় বালি দোআঁশ মাটি।
- আধা শুষ্ক জলবায়ুতে গভীর মাটি (ভারী জমি)
জমিতে দুই থেকে তিনটি অগভীর চাষ দিতে হবে। চাষ দেওয়া হয়ে গেলে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দক্ষ আদ্রতা সংরক্ষণের জন্য সহায়ক।
সার ব্যবস্থাপনা
হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি তে সার ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাইব্রিড ভুট্টা চাষ করতে যে যে সার প্রয়োজন হয় তা নিচে তুলে ধরা হলোঃ-
পরিমাণ/হেক্টর/কেজি সারের তালিকা
সারের নাম | কম্পোজিটরবি | কম্পোজিটখরিফ | হাইব্রিড রবি |
ইউরিয়া | ১৭২-৩১২ | ২১৬-২৬৪ | ৫০০-৫৫০ |
টিএসপি | ১৬৮-২১৬ | ১৩২-২১৬ | ২৪০-২৬০ |
এমপি | ৯৬-১৪৪ | ৭২-১২০ | ১৮০-২২০ |
জিপসাম | ১৪৪-১৬৮ | ৯৬-১৪৪ | ২৪০-২৬০ |
জিংকসালফেট | ১০-১৫ | ৭-১২ | ১০-১৫ |
বোরিকএসিড | ৫-৭ | ৫-৭ | ৫-৭ |
গোবর | ৪-৬টন | ৪-৬টন | ৪-৬টন |
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
উচ্চফলনশীল জাতের হাইব্রিড ভুট্টার আশানুরূপ ফলন পেতে হলে সঠিকভাবে সেচ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। আরে নিয়মিত খেত পরিদর্শনের পাশাপাশি আগাছা দমনের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রথম সেচঃ বীজ বপনের পরে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে দিতে হবে।
দ্বিতীয় সেচঃ বীজ বপনের পরে ৩৫ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে দিতে হবে।
তৃতীয় সেচঃ বীজ বপনের পরে ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে দিতে হবে।
চতুর্থ সেচঃ বীজ বপনের পরে ৮৫ থেকে ৯৫ দিনের মধ্যে দিতে হবে
রোগ ব্যবস্থাপনা
ভুট্টায় বিভিন্ন ধরনের রোগ আক্রমণ করে থাকে যেমনঃ- ভুট্টার বীজ পচা, ভুট্টা পাতা ঝলসানো রোগ, ভুট্টার মোচা রোগ, ভুট্টার কান্ড পচা রোগ ইত্যাদি। এসব সমস্যা থেকে বাঁচতে প্রাকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই সমস্ত রোগ থেকে ভুট্টা ফসলকে রক্ষা করতে হলে, বর্তমানে অনেক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে উচিত হবে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করে রোগবালাই দমন করা।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রায় ৯০% কৃষক হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে চাষাবাদ করে থাকে। উপরে উল্লেখিত হাইব্রিড জাতের ভুট্টা গুলো থেকে যে কোন একটি জাতকে বাছাই করে আপনি চাষাবাদ শুরু করে দিতে পারেন।
হাইব্রিড জাতের ভুট্টায় অধিক ফলন পাওয়া যায়। এতে তুলনামূলক খরচ বেশি পড়ে না। হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি তে রোগবালাই ও কম হয়। হাইব্রিড ভুট্টা চাষ করুন নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলুন।
ফসল সংগ্রহ
ভুট্টা গাছের মুসা ৭৫-৮০% পরিপক্ক হলেই ভুট্টা সংগ্রহ করা যেতে পারে। আর ভুট্টার বীজ সংগ্রহ করার জন্য আর একটু সময় নিয়ে বীজ হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আধুনিক উপায়ে বেগুন চাষ পদ্ধতি জেনে নিন!
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, আধুনিক পদ্ধতিতে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ মাধ্যমে আপনিও স্বাবলম্বী হতে পারেন। কারণ বর্তমানে ভুট্টার বাজার খুব চড়া। তাই আসুন বেশি বেশি ভুট্টা চাষ করি দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখি।