পৃথিবী সৃষ্টির আগে কি ছিল

পৃথিবী সৃষ্টির আগে কি ছিল জানেন কী?

পৃথিবী সৃষ্টির আগে কি ছিল – পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস মানবসমাজে অধ্যাবসায় এবং সাধনার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পৃথিবী সৃষ্টির আগে কি ছিল তা জানার আগ্রহ মানুষের প্রাচীনকাল থেকেই। সময়ের সাথে মানুষ সৌরজগতের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছে এবং পৃথিবী সৃষ্টির ব্যাপারে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হয়েছে। 

পৃথিবী সৃষ্টির আগে কি ছিল:

বিবর্তনবাদ এবং পৃথিবীর সৃষ্টি

সাধারণত বিবর্তন বলতে আমরা জগতের সৃষ্টিগুলোর উদ্ভব বুঝি। কিন্তু সৌরজগতের গ্রহ, উপগ্রহ সহ আরো সদস্যদের সৃষ্টির সূচনাকেও বিবর্তনবাদের অভ্যন্তরীণ হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে পৃথিবী সৃষ্টির প্রক্রিয়া ছিলো সময়সাপেক্ষ। অর্থাৎ, পৃথিবী সময়ের দীর্ঘ পরিক্রমায় সৃষ্টি হয়েছে। 

বিজ্ঞানী হাবেল এর মতামত

এমেরিকান বিজ্ঞানী এডওয়ীন একটি চমৎকার এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আবিষ্কার করেছেন। তিনি তার গবেষণায় দেখতে পেরেছেন, সৌরজগতের তারাগুলোর দূরত্ব পৃথিবী থেকে সময়ের সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং এই দূরত্ব বৃদ্ধির গতি সময়ের পরিক্রমায় বেড়ে চলছে। দূরত্ব বৃদ্ধির এই তত্ত্ব অনুসারে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছে মহাবিশ্বের আয়তন বাড়ছে,যার থেকে বুঝা যায় একসময় মহাবিশ্বের সবকিছু একগুচ্ছ বিশাল আকৃতির বস্তু হিসেবে ছিল।

এবং এই তত্ত্ব বিজ্ঞানী হাবেল এর মৃত্যুর পরেও বিভিন্ন গবেষণায় সত্য প্রমাণিত হয়েছে। পরে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন এই বিশাল আকৃতির বস্তুটি অসীম উষ্ণ ছিল এবং বহুল পরিমাণে শক্তি এক জায়গায় এ ঘনীভূত ছিল। 

বিগ ব্যাঙ্গ তত্ত্ব

বিশ্বের অন্যতম সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের এই হাইপোথিসিস টি হাবেলের তত্ত্বের চেয়ে খানিকটা উন্নত এবং বিখ্যাত। বিগ ব্যাঙ্গ তত্ত্ব থেকে বিজ্ঞানীরা অনেক তথ্যের আবিস্কার করেন যার মধ্যে একটি হলো মহাশূন্যের ঘন জায়গা গুলোতে তাপমাত্রা বরাবর ০° থেকে খানিকটা বেশি।

আর এই তথ্যের সত্যতা আধুনিক যুগের বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় প্রমাণ করেছে। এমনকি, ১৯৯১ সালে কস্মিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড এক্সপ্লোরার ( COBE)  উৎক্ষেপনের পর প্রমাণিত হয়েছে বিগ ব্যাঙ্গ তত্ত্বে যে স্পেক্ট্রামের কথা বলা হয়েছে সেই স্পেক্ট্রামটি ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন ফিল্ড এ উপস্থিত রয়েছে। 

বর্তমান বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযায়ী ধারণা করে হচ্ছে যে এই মহাবিশ্বে পদার্থগুলো একসময় মেঘ হিসেবে জমাকৃত হয়েছিল, যার থেকে পরে সৌরজগতের গ্যালাক্সিগুলোর অগ্রদূতগুলোর সৃষ্টি। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি সহ অন্যান্য গ্যালাক্সিগুলোতেও চাপের পরিবর্তন থেকে গ্যাস এবং ধুলাবালির কারণে মেঘ সৃষ্টি হয়েছে। এবং মেঘগুলোর কিছু কিছুর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভর এবং সঠিক বল এর মাধ্যমে মধ্যাকর্ষন শক্তি এর ফলে ভেঙে যায়। 

জীবনের উৎপত্তির সন্ধান

পৃথিবীতে জীবনের উৎপত্তির বয়স সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি সত্যটা জানা যায়নি। কিন্তু ব্যাকটেরিয়া নামক এই জীবটি পৃথিবীতে ৩.৫ বিলিয়ন আগেও ছিলো। এবং এটিও ধারণা করা হয় পৃথিবীতে কঠিন ভূত্ত্বক সৃষ্টির সূচনাকালীন সময়েও ব্যাকটেরিয়া এর অস্তিত্ব ছিল।

এসব প্রাচীন জীবগুলোর গঠন বর্তমান জীব এবং প্রাণীগুলো থেকে তুলনামূলকভাবে কম জটিল ছিল। এমনকি এসব প্রাচীন জীবগুলোর মধ্যে অনুমান করা হয় কিছু উপাদান ছিল, যা “জীবন্ত” হিসেবে আখ্যায়িত করা হবেনা, কিন্তু এখন প্রাণী জগতের সদস্য। 

প্রাচীন পাথর 

পৃথিবীতে সর্বোচ্চ বয়সের পাথর উত্তর কানাডায় পাওয়া গিয়েছে (৩.৯৬ বিলিয়ন বছর আগে)। সম্প্রতি বিশ্বের অন্যান্য জায়গায়ও এই পাথরের সমতূল্য অনেক পুরাতন পাথর এর সন্ধান মেলে। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়াতে প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর আগের যিরকন ক্রীস্টাল পাওয়া গেছে যার থেকে পৃথিবী সৃষ্টির আগে কি ছিল সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। 

>> সৌরজগতের গ্রহ কয়টি বিস্তারিত জেনে নিন!

পৃথিবীর সর্বোচ্চ বয়সের সীসা আকরিক এর মধ্যে সীসা এর আইসোটোপ জন্মানোর সময় নির্ণয় করে পৃথিবীর বয়স সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়,যেটি গবেষণা অনুযায়ী অনুমান করা হচ্ছে ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর।

রাসায়নিক বিবর্তন 

আমরা কি কখনো রাসায়নিক বিবর্তন সম্পর্কে জানতে পারবো যেটি জীবনের উদ্ভব ঘটিয়েছে? পৃথিবীর প্রথম জীবন উদ্ভাবনে কীভাবে তাদের ভিতরে মলিকিউলগুলোর (পরমাণু) পৃথকীকরণ হয়েছে – তা নিয়ে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সদ্য প্রকাশিত বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন প্রথম জীবনের উদ্ভব ঘটেছে মঙ্গল গ্রহে,যা পরবর্তীতে বিভিন্ন উল্কা এর মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছে। এছাড়া পৃথিবী সৃষ্টির আগে কি ছিল তা সম্পর্কে আরো নতুন তথ্য আবিষ্কার করতে বিজ্ঞানীরা তাদের নিজেদের মনোনিবেশ করেছে।

কৃত্রিম এবং অকৃত্রিম পদ্ধতিতে জীবন উদ্ভাবন 

বর্তমান যুগে আধুনিক বিশ্বে বিজ্ঞানের সফলতার আশীর্বাদে অকৃত্রিম পদ্ধতিতে জীবন উদ্ভাবন সম্ভব। কিন্তু প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্টির শুরু অবশ্যই বৈজ্ঞানিক উপায়ের মতো একই উপাদান দিয়ে হবেনা যেটি কিনা একশতাধিক বছর আগে ঘটেছে। কিন্তু প্রাকৃতিক ঘটনের জন্য বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা দেওয়া প্রকৃতি নিজেরই একটি সহজাত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত কোনো হাইপোথিসিস, ব্যাখ্যা অথবা গবেষণার ফলাফলকে সর্বোচ্চ পরিমাণের সত্য হিসেবে আখ্যায়িত করেননি। 

>> শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার উপায় জেনে নিন!

রাইবোজোম এবং RNA প্রভাবক 

আধুনিক গবেষণায় খোঁজ মেলে রাইবোজম নামের একটি কোষীয় পদার্থ যা RNA থেকে তৈরী,  তা বর্তমান আধুনিক কোষগুলো তে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এর থেকে বুঝা যায় প্রাচীন কোষগুলো তে RNA “স্ব-প্রভাবক” ছিল,অর্থাৎ RNA নিজ থেকে প্রতিলিপি করতো। এর থেকে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন এক সময়ে কোষগুলো ছিল RNA প্রধান।

পরিসমাপ্তি

পৃথিবী সৃষ্টির আগে কি ছিল এই প্রশ্ন জানতে মানুষের অনেক হিমশিম খেতে হয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাস সম্পর্কে জানতে মানবসমাজ একনিষ্ঠ, তাই পার্শ্বিক জ্ঞান থাকলেও পুরোপুরি সত্যটা জানতে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে বেশকিছু তথ্য আবিষ্কার করেছেন। এবং ভবিষ্যতেও এই গবেষণা অব্যাহত থাকবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top