ধানের ব্লাস্ট রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ধানের ব্লাস্ট রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জানুন!

ধানের ব্লাস্ট রোগ অন্যতম মারাত্মক রোগ। এই রোগের কারণে ধানের সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে! 

Table of Contents

ধানের ব্লাস্ট রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ধান গাছের সাধারণত ৩টি অংশে ব্লাস্ট রোগ হহয়ে থাকে। এ তিনটি নাম হলঃ

১. পাতা ব্লাস্ট

২. গিঁট ব্লাস্ট

৩. শীষ ব্লাস্ট

এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো Magnaporthe oryzae( ম্যাগনাপোর্থে ওরাইজা)। বীজ, বাতাস, কীটপতঙ্গ ও আবহাওয়ার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। ঘন ঘন এবং দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাত এবং দিনের বেলা ঠান্ডা পড়লে এ রোগের আক্রমণ সম্ভাবনা বেড়ে যায়৷ 

রোগ বিস্তারের আবহাওয়া

দিনের বেলা তাপমাত্রা ২৫-২৮° ও রাতের বেলা তাপমাত্রা ২০-২৫° সেলসিয়াস,  শিশির ভেজা বা মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া, ঝড়ো বাতাস, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি এ রোগের বিস্তারে সহায়ক হয়। ধানের রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন!

ব্লাস্ট রোগের লক্ষণসমূহ

পাতাব্লাস্ট

এই রোগ এর ক্ষেত্রে পাতায় প্রথমে ডিম্বাকৃতির ছোট ছোট ধূসর বা সাদা রঙ এর দাগ দেখা যায়। দাগগুলোর চারদিক গাঢ় বাদামি রঙ ধারণ করে থাকে এবং প্রায়ই মাঝে সাদা থেকে ধূসর বর্ণের  দাগ দেখা যায়। পরবর্তীতে এ দাগ ধীরে ধীরে বড় হয়ে চোখের মত উপবৃত্তাকার ধারণ করে।

অনেকগুলো দাগ একত্রে মিশে পুরো পাতাটাই মেরে ফেলতে পারে। এ রোগে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হলে দূর থেকে দেখে জমি মাঝে মাঝে পুড়ে যাওয়ার মতো মনে হয়। অনেকসময় খোল ও পাতার সংযোগস্থলে কালচে দাগের সৃষ্টি হয়। যা পরবর্তীতে পচেঁ যায় এবং পাতা ভেঙে পড়ে ফলন বিনষ্ট হয়।

গিঁট ব্লাস্ট বা নোড ব্লাস্ট

গাছের থোড় বের হওয়ার পর থেকে এ রোগ দেখা যেতে পারে। গিঁটে কালো রঙের দাগ সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে এ দাগ বেড়ে যায় ও  গিঁট পচে যায়, ফলে ধান গাছটি গিঁট বরাবর ভেঙে পড়ে।

 শীষ ব্লাস্ট

শিশির বা বৃষ্টির কারনে ডিগ পাতা ও শীষের গোড়ায় পানি জমার ফলে উক্ত স্থানে ব্লাস্ট রোগের স্পোর আক্রমন করে কালচে বাদামি দাগ তৈরিযায়। এ রোগকে নেক ব্লাস্টও বলা হয়ে থাকে। এ রোগ হলে ধানের শীষের গোড়া অথবা শীষের শাখা প্রশাখার গোড়ায় কাল দাগ হয়ে পচে যায়। ফলে খাবার শীর্ষ অবধি পৌঁছাতে পারে না। ফলে ধানে চিটার সংখ্যা বৃদ্ধি পাই। পরে শীষের শাখা প্রশাখা ভেঙে পড়ে। 

প্রতিরোধ ও প্রতিকার

ধানের ব্লাস্ট রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার রোগের জন্য সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হল রোগপ্রতিরোধী জাত চাষ করা। এছাড়া কয়েকটি পদক্ষেপ নিলে এই রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া সহজ হয়।

১. মাটিতে জৈব সার সহ সুষম মাত্রায় সব ধরনের সার ব্যবহার এই রোগ আক্রান্তের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমায়।

২. রোগের আক্রমণ হলে জমিতে ইউরিয়া সারের প্রয়োগবন্ধ রাখতে হবে।

৩. রোগের শুরুর দিকেই বিঘাপ্রতি ৫-৬ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ প্রয়োগ করতে হবে।

৪. ‘ট্রাইসাইক্লাজল’ প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

৫. এ রোগ প্রতিরোধে ক্যালসিয়াম সিলিকেট সার প্রয়োগ করা যায়। কারণ মাটিতে যথেষ্ট অনুপাতে সিলিকন থাকলে ব্লাস্টের আক্রমণ কম হয়।

৬. ব্লাস্ট রোগের প্রাথমিক অবস্থায় জমিতে ১-২ ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে পারলে ভালো হয়।

৭. আক্রান্ত জনির খড়কুটা পুড়িয়ে ফেলতে হবে ও জনিতে ছাই মিশিয়ে দিতে হবে।

৮. জমিতে সবসময় পানি রাখতে হবে।

উপোরক্ত প্রতিবেদনে ধানের ব্লাস্ট রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা গেলো। উপোরক্ত উপায়ে ব্যবস্থা নিলে আশা করা যায় ধান গাছের এ রোগ হতে কৃষকগণ সচেতন ও সঠিক ফলন পেতে পারেন ইনশআল্লাহ। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর সকল তথ্য জানুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top