পেঁপে গাছের পরিচর্যা

সঠিক ভাবে পেঁপে গাছের পরিচর্যা করার পদ্ধতি জেনে নিন!

পেঁপে গাছের পরিচর্যা : বৈচিত্র্যময় এই পৃথিবীতে আমরা কত ধরনেরই না ফলমূল খেয়ে থাকি। এসব ফলমূল গুলোর মধ্যে অন্যতম সুস্বাদু একটি ফল পেঁপে। এই ফলটি বারমাসি যা সারা বছরই চাষ করা হয় এবং সারা বছরই পাওয়া যায়। 

আপনি কিভাবে পেঁপে গাছ বৃদ্ধি করবেন ও কিভাবে যত্ন নিবেন তা সম্পর্কে যদি সঠিক তথ্য জানতে চান, তাহলে পেঁপে গাছের পরিচর্যা নিয়ে নিবন্ধটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পেঁপে গাছের পরিচর্যা

পেঁপে গাছ 

মূলত পেঁপে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চল এর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত একটি ফসল। পেঁপে গাছ একক কান্ড বিশিষ্ট হয়ে থাকে। এটি হচ্ছে স্বল্পস্থায়ী বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ যা ৩০ফুট বা ৯ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। 

পেঁপে গাছ সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে, স্ত্রী উদ্ভিদ, পুরুষ উদ্ভিদ এবং উভকামী উদ্ভিদ। স্ত্রী ও উভকামী উদ্ভিদ শুধুমাত্র ফল দিয়ে থাকে। গাছের জাত বেদে ফলের আকার আকৃতি মাঝারি বা গোলাকার হয়ে থাকে। 

ফলের মাংস সাধারণত হলুদ, কিছু লাল এবং কমলা রঙের হয়ে থাকে। পেঁপে উচ্চ পুষ্টিগুণ, দুর্দান্ত স্বাদ এবং ঔষধি গুনের জন্য সর্বত্র ব্যাপি পরিচিত। বিশ্বে পেতে উৎপাদনকারী প্রধান দেশ গুলি হলো ভারত, ডোমিনিকান রিপাবলিক, ব্রাজিল এবং মেক্সিকো। 

পেঁপে গাছ বৃদ্ধি

পেঁপে গাছ মূলত বীজ থেকে করা হয় যা পাকা ফল থেকে বের করে নেওয়া হয়। পর্যাপ্ত পরিমান সূর্যালোকের ব্যবস্থা আছে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে পেঁপে গাছ রোপণের জন্য। পেঁপে গাছ লাগানোর জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা হয়েছে বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব দিকে যেখানে বাতাস ও ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকে কিছুটা সুরক্ষা পাবে গাছ। 

সম্পূর্ণ রোদেও পেঁপে গাছ ভাল জন্মে। পেঁপে গাছ  নিষ্কাশন করা মাটি পছন্দ করে। পেঁপে গাছের গোড়া যাতে কখনো সেতসেতে না থাকে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। 

সার ব্যবস্থাপনা 

পেঁপে গাছের সঠিক পরিমাণে সুষম সার ব্যবহার করতে হবে। তাহলে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যাবে। প্রতিটি পেঁপে গাছে ১৫ কেজি জৈব সার, ৫৫০ গ্রাম ইউরিয়া,  ৫৫০ গ্রাম টিএসপি, ৫৫০ গ্রাম এমওপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম, ২৫ গ্রাম বোরাক্স এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট একত্রে ভালোভাবে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। 

যদিও ইউরিয়া ও এমওপি সার চারা রোপণের আগে গর্তে প্রয়োগ করা সবচেয়ে উত্তম। গাছে যখন ফুল আসবে তখন সারের পরিমাণ একটু বাড়াতে হবে। গৃষ্মমৌসমে সার প্রয়োগের ২,১ দিন পর নিয়মিত গাছে পানি সেচ দিতে হবে। মৌসুম ভিত্তিক বারোমাসি সবজি তালিকা!

অন্তর্বর্তীকালীন পেঁপে গাছের পরিচর্যা 

গাছে যখন ফুল আসবে তখন একটু বিশেষ পরিচর্যা করতে হবে। ফুল হতে ফল ধরা নিশ্চিত মনে হলে একটি বোটার একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিড়ে ফেলে দিতে হবে। গাছ জাতে পেঁপের ভারে ভেঙ্গে না পড়ে সেজন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে। 

স্ত্রী গাছগুলি যেহেতু ফল দেয়। তারা পরাগায়ন করে মূলত পোকামাকর এবং বায়ু দ্বারা অন্যান্যদের সাথে। বর্তমানে এমন কিছু পেঁপে  গাছ রয়েছে যা স্ব পরাগায়নকারী (দ্বি যৌন) হয়ে থাকে। যার কারণে এই জাতের পেঁপে গাছ গুলোতে ফলনও অত্যাধিক হয়ে থাকে। 

জৈব পদার্থ দিয়ে পেঁপে গাছের মালচিং করলে আদ্রতা সঠিকভাবে ধরে রাখা সক্ষম হয়। মালচিং গরম আবহার সময় অপরিহার্য হয়ে পড়ে। পেঁপে গাছে মালচিং করলে তীব্র গরম তীব্র ঠাণ্ডা থেকেও গাছকে রক্ষা করে। 

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা 

পেঁপে গাছের পরিচর্যা সঠিক ভাবে করতে হলে চারা রোপণ এবং সার প্রয়োগের পর্ব শেষ হলে প্রয়োজন মতো পরিমাণে পানি দিতে হবে। খরা মৌসুমে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর হালকাভাবে জমিতে সেচ দিতে হবে। 

রোগ ব্যবস্থাপনা 

যে কীটপতঙ্গ গুলি পেঁপে গাছকে আক্রমণ করতে পারে তা হলোঃ- কালো লতা পুঁচকে, মাইট, লিফফপার, ফলের মাছি এবং হোয়াইটফ্লাই। অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে এগুলো মাটির ছত্রাক ও পাউডারি মিলডিউ, পেঁপে রিংস্পট ভাইরাস, ফল পচা এবং নেমাটোডা আক্রান্ত হয়ে থাকে। 

পেঁপে গাছের পরিচর্যারোগ দমন

পেঁপের ডাম্পিং অফ রোগ দমন 

মূলত এই রোগটি মাটিতে ছত্রাক থাকার কারণে হয়ে থাকে। বীজ গজানোর সময় বা চারা অবস্থায় এই রোগটি আক্রমণ করে থাকে। বীজের অঙ্কুর গজানোর সময় রোগের জীবাণু বীজ বা অঙ্কুরে আক্রমণ করে থাকে। 

এই অবস্থায় বীজ পচে যায় এবং যারা মাটির উপরে বের হয়ে আসতে পারে না। এইভাবে অংকুর গজানোর আগেই পচন আরম্ভ করে। আবার চারা সুস্থ ভাবে বের হওয়ার পরেও এ রোগটি আক্রমন করতে পারে। 

এক পর্যায়ে দেখা যায় চারার গোড়া অথবা শিকড় পৌঁছে যায় এবং চারা মারা যায়। চারার বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ রোগের প্রকোপ আস্তে আস্তে কমে যায়। বর্ষা মৌসুমে ঢলে পড়া রোগের প্রকোপ একটু বেশি বৃদ্ধি পায়। 

সেচের পানিতে বা বৃষ্টির পানিতে এ রোগের জীবাণু ছড়িয়ে থাকে। গাছের গোড়ায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। রোগাক্রান্ত চারাগুলি উঠিয়ে আলাদা করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। 

এ রোগের কীটনাশকের নাম হল এমজেড-৭২।এই কীটনাশকটি স্প্রে করার নিয়ম হচ্ছে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে কীটনাশক মিশিয়ে ৭দিন পর পর গাছের চারিদিকের মাটিতে ভালোভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

আপনার নামের অর্থ জানতে ভিজিট করুন-

মোজাইক রোগ

জিংকের ঘাটতি দেখা দিলে মোজাইক রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এজন্য গাছপ্রতি ৫ থেকে ১০ গ্রাম জিংক গাছের গোড়ায়  প্রয়োগ করেন। তারপর ০.২% জিংক গাছের পাতায় স্প্রে করলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। 

ফসল তোলা 

সবজি হিসেবে খাওয়ার জন্য কচি ফল সংগ্রহ করা যায়। পাকানোর জন্য ফলের রং হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করে তারপর সংগ্রহ করতে হবে। পেঁপে পাতার উপকারিতা জানলে আপনি অবাক হবেন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top