টমেটো বর্তমান বিশ্বে এক বহুল প্রচলিত সবজি। এটি কৃষক দের কাছে আয়ের এক উৎকৃষ্ট উৎস। নিম্নে টমেটো চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং উপাত্ত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
টমেটো চাষের উপযুক্ত পরিস্থিতি
উচ্চ মাত্রার আর্দ্রতা টমেটো চাষের জন্য ক্ষতিকর। ফলের রঙ্গক, লালচে ভাব এবং ফলের অন্যান্য ক্ষেত্র রৌদ্রের তীব্রতার উপর অনেকটা নির্ভর করে। টমেটো গাছ প্রতিকুল আবহাওয়া দ্বারা ব্যাপক প্রভাবিত হয়। বীজ অঙ্কুর, ফলের গোছা, চারার বৃদ্ধি, এবং ফলের মান এর জন্য বিভিন্ন রকমের আবহাওয়া দরকার হয়। টমেটো চাষ পদ্ধতি এর যথাযথ পরিচালনার জন্য তাপমাত্রা ১০-৩৮° এর মধ্যে রাখতে হবে। এর চেয়ে বেশি – কম হলে টমেটো গাছের শারীরবৃত্তীয় কৃয়কলাপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিশেষ করে এর বৃদ্ধির হার হ্রাস পায়।
সর্বোত্তম ফলাফল পাওয়ার জন্য তাপমাত্রা ১৬-২৭° এর মধ্যে রাখা শ্রেয়। টমেটো গাছ সাধারণত হিম সহ্য করতে পারেনা, তাই হালকা কম এবং অতিরিক্ত বেশি এর মাঝামাঝি পরিমাণে বৃষ্টি টমেটো চাষের জন্য উপযুক্ত। প্রাত্যহিক গড় তাপমাত্রা ২১ – ২৩° থাকলে এই সবজি চাষে সাহায্য হয়। ফলের ফাটল রোধে উচ্চমাত্রার জলচাপ এবং খুব লম্বা সময়ের শুস্ক সময়কাল এড়িয়ে চলতে হবে। ফলের গোছা জন্মানোর সময় উজ্জ্বল রৌদ্রালোক টমেটোর লালচে ভাব আনতে সহায়তা করে।
উন্নতমানের টমেটোর জাত
টমেটো এর বিভিন্ন জাত আছে, তবে সব জাত চাষের জন্য উপযুক্ত নয়। উন্নতমানের কিছু জাত হলো আরকা সউরাভ, আরকা ভিকাস, আরকা আহুতি, আরকা আশিশ, আরকা আভা, আরকা আলোক, হিসার আরুন, হিসার লালিত, হিসার আন্মল, নরেন্দ্র টমেটো -১, নরেন্দ্র টমেটো -২, পুসা রেড প্লাম, পুসা রুবি, পুসা বাহার, আরকা মেঘালি, সোলান ঘোলা, পান্ত বাহার, শাক্তি এবং পাঞ্জাব চোহারা, রাস্মি, ভাইসালী, রুপালী।
>> তরমুজ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন!
বিভিন্ন ধাপের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা
সিরিয়াল নম্বর | ধাপের নাম | সর্বনিম্ন তাপমাত্রা | উপযুক্ত তাপমাত্রা | সর্বোচ্চ তাপমাত্রা |
১. | বীজ অঙ্কুর | ১১° | ১৬-২৯° | ৩৪° |
২. | চারাগাছ গোজানো | ১৮° | ২১-২৪° | ৩২° |
৩. | ফলের গোছা | ১০° ( দিন)১৮° ( রাত) | ১৫°-১৭° ( দিন)২০-২৪ ° ( রাত) | ৩০° ( দিন)৩০° ( রাত) |
৪. | লালচে ভাবের আবির্ভাবকাল | ১০° | ২০-২৪° | ৩০° |
উপরুক্ত বর্ণিত তাপমাত্রা এর বিচ্যুতি হলে টমেটো চাষ পদ্ধতি তে বিঘ্ন ঘটায়।
টমেটো চাষের জন্য ভূমির প্রয়োজনাবলী
চাষ এর জন্য খনিজ মাটি শ্রেয়, তবে বেলে দোঁআশ মাটি উৎকৃষ্ট। মাটির উপরের স্তরে ছিদ্র থাকলে চাষের জন্য ভালো, এবং মাটির নিচের স্তরে কাদামাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে। মাটির গভীরতা ১৫-২০ সে.মি চাষাবাদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট। কর্দমাক্ত মাটিতে গভীর চাষ করে শিকড় এর ভিতর পর্যাপ্ত ভেদ করলে এসব মাটির এলাকায় টমেটো চাষে সহায়তা করে। টমেটো চাষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি সরবরাহকৃত এসিড যুক্ত মাটি ও ভালো ফলাফল বয়ে আনতে পারে।
টমেটো গাছ মাটির pH level সর্বোচ্চ ৫.৫ পর্যন্ত সহ্য করার ক্ষমতা রাখে। লবণমুক্ত এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ধারণ ক্ষমতা রাখা মাটি টমেটো চাষের জন্য ভালোই খ্যাতি পেয়েছে। অতিরিক্ত জৈবপদার্থে ভরপুর মাটি তাদের পুষ্টিহীনতা এবং কম আর্দ্রতার জন্য টমেটো চাষের উপযুক্ত নয়। কিন্তু সামান্য পরিমাণে জৈবপদার্থ খনিজ মাটিতে টমেটো চাষের জন্য ভালো ফলাফল আনতে পারে।
টমেটো চাষের জন্য বীজ বাছাইকরণ
বীজ উৎপাদনের পর রোগাক্রান্ত এবং ভঙ্গুর বীজগুলো বরাদ্দকৃত বীজগুলো থেকে বাদ দিতে হবে, কারণ এগুলো ভালো ফসল আনতে পারেনা। বীজ রোপণ করার সময় বীজগুলো থেকে নিস্ক্রিয় পদার্থ পরিস্কার করতে হবে।
>> কুমড়া চাষ পদ্ধতি সমূহ জেনে নিন!
রোপণ করার জন্যে যেসব বীজগুলো আকার এবং আকৃতিতে মধ্যপন্থী, এবং তাড়াতাড়ি অঙ্কুর এর জন্য সক্ষম – সেই বীজগুলো বাছাই করা বাঞ্চনীয়। F1 জেনারেশন এর হাইব্রিড বীজগুলো টমেটো চাষের জন্য বিশেষ ভাবে উপকারী কারণ এগুলো প্রতিকূল পরিবেশে মোকাবেলা করতে সক্ষম এবং যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ফসল উৎপাদন এর ক্ষমতা রাখে।
আগাছা পরিষ্কার
১) মাঠে থাকাকালীন প্রথম ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়মিতভাবে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
২) মালচিং এর জন্য খড় ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া আর্দ্রতা রক্ষার জন্য কালো পলিথিন বা অঅন্যান্য দ্রব্যাদি ব্যবহার করা যাবে। এতে করে সম্পূর্ণভাবে আগাছা পরিষ্কার হবে যা টমেটো চাষ পদ্ধতি এর জন্য অপরিহার্য।
>> টমাটোর উপকারিতা ও ঔষুধি গুণাগুণ জেনে নিন!
সার ব্যবহার
পর্যাপ্ত পরিমাণে নাইট্রোজেন টমেটোর মান এবং স্বাদ বৃদ্ধি করে। এছাড়া অন্যান্য সারে পটাসিয়াম, এমোনিয়া ফোসফেট, ক্যালসিয়াম। সাধারণত টমেটো চাষের জন্য ১২০ কেজি নাইট্রোজেন, ৫০ কেজি ফোসফোরাস এবং ৫০ কেজি পটাশ এর দরকার হয়ে পড়ে।
নার্সারি তৈরী এবং পরিচর্যা
আদর্শ বীজতলার আকৃতি হবে ৬০ সে.মি প্রশস্ত, ৫-৬ সে.মি লম্বা এবং উচ্চতা হবে ২০ সে.মি। বীজ থেকে আগাছা পরিস্কার করতে হবে। ফাইটোলন/ ডিথেন এম-5 দিয়ে বীজতলা টি পরিস্কার করতে হবে। স্বল্প পরিমাণে থিমেট ব্যবহার করা পরবর্তীর জন্য লাভজনক।
>> পেঁপে চাষ পদ্ধতি – রোগবালাই ও কীটনাশক সহ বিস্তারিত!
চারাগুলোর উপরে ২-২.৫ মিলি/লিটার পানি হারে মেটাসিস্টোক্স এবং ২-২.৫ গ্রাম/ লিটার পানি হারে ডিথেন এম- 5 ব্যবহার করতে হবে। নাইট্রোজেন ব্যবহারে দুইবার ডোজ দিতে হবে। চারা প্রতিস্থাপনের সময় প্রথম অর্ধের ব্যবহার করতে হবে এবং প্রতিস্থাপনের ৩০-৬০ দিন পর দ্বিতীয় অর্ধেক ব্যবহার করতে হবে।
শেষ কথা
উপরুক্ত বর্ণনায় টমেটো চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো । কৃষক সমাজের মানুষজন এই পদ্ধতি অবলম্বন করে বিশেষ ভাবে লাভবান হবে বলে আশা করছি।