ছাগল পালন একটি লাভজনক পেশা। আর তা যদি হয় উন্নত জাতের ছাগল তাহলে তো কথাই নেই। উন্নত জাতের ছাগল কোথায় পাওয়া যায় বা কিভাবে সংগ্রহ করব তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
উন্নত জাতের ছাগল কোথায় পাওয়া যায়
মূলত উন্নত জাতের ছাগল পালনে পুঁজি একটু বেশি লাগলেও লাভ ও হয় অনেক বেশি। বর্তমানে দেখা যায়, মানুষ এখন উন্নত জাতের ছাগল পালনে খুবই আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
উন্নত জাতের কয়েকটি ছাগল হল যথাক্রমেঃ
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, বারবারি ছাগল, বোয়ার জাতের ছাগল, সিরোহি ছাগল, যমুনাপারি বা রাম ছাগল ও বিটল ছাগল ইত্যাদি।
উন্নত জাতের ছাগল মূলত পাওয়া যায় রাজধানীসহ দেশের বড় বড় গবাদি পশুর হাটে ও দেশের প্রসিদ্ধ ছাগল খামার গুলোতে। এখন বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমেও উন্নত জাতের ছাগল সংগ্রহ করা যায়।
তাহলে চলুন জেনে নেয়া জাক উন্নত জাতের ছাগল গুলোর নাম সহ বিস্তারিত।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল হচ্ছে বিশ্বমানের একটি উন্নত জাতের ছাগল। যাদের মাংস খুবই সুস্বাদু এবং চামড়া আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানের দিক থেকে। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাচ্চা উৎপাদনের ক্ষমতা অধিক হয়ে থাকে, এরা দেশীয় জলবায়ুতে বিশেষভাবে বাঁচতে সক্ষম।
বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই দেখা যায় ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল। এরা কালো, সাদা ও বাদামি রঙের হয়ে থাকে। এরা মূলত ১৪ মাসেই বাচ্চা দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করে। এই জাতের ছাগল একসাথে তিনটি বাচ্চা ও তারও অধিক বাচ্চা জন্ম দিতে সক্ষম। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল গুলি ২ বছরে তিনবার বাচ্চা দিতে সক্ষম।
বারবারি ছাগল
বারবারি জাতের ছাগলগুলি দেখতে সাদা ও হরিণের মতো হয়ে থাকে। এ জাতের ছাগল গুলি ছোট প্রকৃতির হয়ে থাকে। এদের দেহের ওজন ৩০ থেকে ৩৫ কেজির মধ্যে হয়ে থাকে। বারবারি জাতের ছাগল গুলি ১২ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে ২ বার বাচ্চা দিতে পারে এবং একসাথে দুটি বাচ্চা দিতে সক্ষম। এ জাতের ছাগল সাধারণত দিনে ৮ কেজি থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে।
বোয়ার জাতের ছাগল
বোয়ার জাতের ছাগলগুলির একটি বিশেষ দিক আছে। আর সেটা হচ্ছে এদের প্রতিদিন ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়ে থাকে, এরা ৩০ থেকে ৩৬ কেজি ওজন পর্যন্ত হয়। এ জাতের ছাগলগুলি খুব দ্রুত বর্ধনশীল ও এরা এক সাথে ২ থেকে ৩ বাচ্চা দিতে পারে।
মূলত বোয়ার জাতের ছাগল গুলি খুবই ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। আর সহজে পাওয়া যায় না বলে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করা হয়। বোয়ার জাতের ছাগল গুলিকে মূলত মাংস উৎপাদনকারী ছাগল বলা হয়ে থাকে। এদের মাংস খুবই সুস্বাদু হয়ে থাকে, যা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত।
বোয়ার জাতের ছাগল আসলেই সহজলভ্য নয়, এজন্য যারা খামারে এ জাতের ছাগল পালন করতে চায় তারা বিদেশ থেকে আমদানি করে আনতে হয়। তাই এ ধরনের ছাগল লালন-পালন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে।
সিরোহি ছাগল
শিরোহি ছাগল মূলত একটি ভারতীয় জাতের ছাগল। এদেরকে মূলত লালন পালন করা হয় রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ ও গুজরাটের বিভিন্ন এলাকায়, আর এ জাতের ছাগলগুলোকে এসব অঞ্চলেই বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এ জাতের ছাগলের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে ও শরীরে হালকা বাদামী দাগ থাকে।
এদের সিং বাকা, কান চ্যাপ্টা ও ঝুলন্ত হয়ে থাকে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক শিরোহি পুরুষ ছাগলের ওজন ৫০ কেজি এবং প্রাপ্তবয়স্ক ছাগীর ওজন ৪০ পর্যন্ত হয়ে থাকে। ছাগল মোটাজাতকরণ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন!
যমুনাপারি বা রাম ছাগল
যমুনাপারি ছাগলগুলি যমুনা ও পদ্মা নদী নিকটবর্তী জেলাগুলোতে দেখতে পাওয়া যায়। এ ছাগল গুলির উচ্চতা অনেক বড় হয়ে থাকে। এদের কান লম্বা ও ঝুলন্ত থাকে। এ জাতের ছাগল গুলি মাংস ও দুধ উভয়ের জন্যই লালন-পালন করা হয়ে থাকে ।
এ জাতের একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ছাগলের ওজন ৫০ থেকে ৬০কেজি এবং স্ত্রি ছাগল ৪০থেকে ৫০ কেজি পর্যন্ত হয়। এরা প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত দুধ দেয়। এদের দুধে ৪ – ৫ ভাগ ফ্যাট থাকে। এরা বছরে ১ টি বাচ্চা দিয়ে থাকে।
বিটল ছাগল
বিটল জাতের ছাগল গুলি আকারে অনেক বড় হয়ে থাকে। এরা কালো-সাদা, লালচে-বাদামি ও এসবের সংমিশ্রণে হয়ে থাকে। বিটল জাতের একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ছাগলের ওজন ৫০ থেকে ৬০ কেজি এবং স্ত্রী ছাগলের ওজন ৪০ থেকে ৫০ কেজি হয়। এরা প্রতিদিন প্রায় ১.৫ থেকে ২ কেজি পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে। সাধারণত একসাথে ১ টি বাচ্চা জন্ম দিতে সক্ষম।
শেষ কথা
লাভজনকভাবে ছাগলের খামার করতে চাইলে উপরের যে কয়েকটি উন্নত জাতের ছাগলের জাতের বর্ণনা দেয়া হয়েছে এগুলো দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। এই উন্নত জাতের ছাগলের বংশবিস্তার এখন কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে।
যার ফলে এখন সর্বত্র ব্যাপি উন্নত-জাতের-ছাগল লালন-পালন করা যায়। উন্নত জাতের ছাগল কোথায় পাওয়া যায় এ বিষয়ে আমরা মোটামুটি একটি ধারণা লাভ করতে পেরেছি।