ধান আমাদের প্রধান খাদ্যশষ্য এবং সারাদেশেই ব্যাপকভাবে এর চাষ হয়। ধান চাষে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো রয়েছে তার মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরেই রোগ বালাই একটি বড় সমস্যা। যে কারণে চাষীদেরকে বিভিন্ন প্রকার ধানের রোগ ও প্রতিকার বিষয়ে সচেতন থাকা দরকার।
একই জমিতে প্রতিবার একই ধরণের ধানের চাষ এই রোগের প্রবণতা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া এই বিষয়ে আমাদের সচেতনাতার অভাবও অনেকাংশে দায়ী। আজ আমরা এখানে ধানের কয়েকটি রোগ বিষয়ে আলোচনা করবো। আশা করি এটি আপনাদেরকে সহায়তা করবে।
ধানের রোগ ও প্রতিকার
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউট উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি ধানের রোগ ও প্রতিকার বিষয়ে নিয়মিত গবেষণা করে যাচ্ছে। যা কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। নীচে আমরা ধানের কিছু রোগ সম্পর্কে জানবো এবং এর প্রতিকার কেমন হতে পারে সেই সম্পর্কেও ধারণা নিবো।
ধানের উফরা রোগ
এটি ধানের এক ধরণের কৃমিজনিত রোগ যা মাটিতে, রোগাক্রান্ত নাড়া ও খড়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কৃমিগুলো ধান গাছের ডগার কচি অংশের রস শুষে খাওয়ার কারণে পাতা ও খোলের সংযোগস্থলে সাদা দাগ দেখা যায়। পরবর্তীতে দাগগুলো বাদামী হয়ে যায় এবং সম্পূর্ণ পাতা শুকিয়ে যায়। হাইব্রিড ধান চাষ পদ্ধতি জেনে নিন!
দমন ব্যবস্থাপনা: একই জমিতে বারবার ধান চাষ না করে ভিন্ন ফসলের চাষ করলে এই সমস্যা কম হয়। ফসল কাটার পরে জমিতে থাকা নাড়া পুড়িয়ে দিন এবং আক্রান্ত জমির পানি অন্য ক্ষেতে নিবেন না। জমি চাষ করার পরে ভালভাবে শুকিয়ে ফেলুন, মাটি শুকালে এই কৃমি মারা যায়। এর পাশাপাশি জমিতে দানাদার বালাইনাশক ব্যবহার করতে পারেন।
ধানের টুংরো রোগ
এটি একটি ভাইরাসজনিত ধানের রোগ। ধান গাছ চারা অবস্থায় থাকার সময় থেকেই এই রোগের আক্রমণ শুরু হয়ে যায়। পাতায় শিরা বরাবর লম্বালম্বী হালকা হলুদ রঙের দাগ দেখা যায়, ধীরে ধীরে তা সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পড়ে এবং সম্পূর্ণ পাতাটি হলুদ হয়ে যায়। আক্রান্ত ধানগাছগুলোর শিকড় দুর্বল হয়ে যায় এবং টান দিলে সহজেই উঠে আসতে পারে।
দমন ব্যবস্থাপনা: অধীক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাতের ধান চাষ করলে এই সমস্যা কম হয়। তাছাড়া আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তুলে পুতে ফেলুন এবং ক্ষেতের আগাছা ও তার আশেপাশের এলাকা পরিস্কার রাখুন। সবুজ পাতা ফড়িং এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে ফেলতে পারে, তাই এগুলো দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
ধানের ব্লাস্ট রোগ
ধানের রোগ ও প্রতিকার বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে ব্লাস্ট রোগটির কথা চলেই আসে। ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকা এই রোগে ধান গাছের পাতা, কান্ড ও শীষ- তিনটি অংশই আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত পাতায় ডিম্বাকৃতির দাগ সৃষ্টি হয় যা দুই প্রান্তে লম্বা হয়ে অনেকটা চোখেরে মতো দেখতে হয়।
এই দাগগুলোর প্রান্ত বাদামী বর্ণের এবাং মাঝখানের অংশ সাদা বা ছাই রঙের হতে পারে। কান্ড আক্রান্ত হলে সেখানে কালো দাগ পড়ে এবং কান্ড ভেঙ্গে যেতে পারে। ধানের শীষের গোড়ায় পচন দেখা দেয় এবং ধান চিটা হয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা: অধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ভাল বীজ ব্যবহার করুন। বীজতলা ও ধানক্ষেত সবসময় ভেজা রাখুন এবং ইউরিয়া সার কম ব্যহবার করে পটাশ সার বেশি ব্যবহার করুন। রোগ দেখা দিলে জমিতে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করুন।
এগুলো ছাড়াও ধানের অরে অনেক ধরণের রোগ হতে পারে, যেমন- ধানের পাতার লালচে রেখা রোগ, ধানের পাতা পোড়া বা ঝলসানো রোগ, ধানের কান্ড পচা রোগ ইত্যাদি। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর সকল তথ্য জানুন!
উপসংহার
ভাল ফলন পেতে ধানের রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। সঠিক সময়ে ধানের রোগ চিহ্নিত করে দ্রুত তা দমন ব্যবস্থা না করতে পারলে বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে। এই ব্যাপারে আপনি আরো বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথে কমেন্ট সেকশনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন। ধন্যবাদ।