মাছের রোগ ও প্রতিকার

মাছের রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে অজানা তথ্য জেনে নিন!

মাছের রোগ ও প্রতিকার – মাছ প্রাণীজ আমিষের মধ্যে অন্যতম। মাছ চাষের ক্ষেত্রে মাছের রোগ একটি বড় সমস্যা। আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক মাছ খেতে পছন্দ করে। অনেক সময় নানান কারণে মাছ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। নানা কারণে উন্মুক্ত জলাশয়ের চেয়ে বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা মাছে রোগের প্রকোপ বেশি দেখা দেয়। তাই পুকুর ও দীঘির মাছ প্রায়ই নানা রোগের কবলে পড়তে দেখা যায়।  

আমরা আপনাদের জন্য মাছের রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি। 

মাছের রোগ ও প্রতিকার

আমাদের দেশের মাছগুলোর অন্যতম রোগ হলো ক্ষত রোগ। সাধারণত শোল, গজার, টাকি, পুঁটি, বাইন, কৈ, ম্রিগেল, কার্পিও এবং পুকুরের তলায় বসবাসকারী অন্যান্য প্রজাতির মাছ ক্ষত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। 

ক্ষত রোগ

ক্ষত রোগ একটি সাধারণ রোগ যা  অনেক মৎস্য চাষিরা জেনে থাকে। কোন মাছ এই রোগে আক্রান্ত কি না তা জানতে হলে আক্রান্ত মাছের গা ভালভাবে লক্ষ্য করতে হবে। যদি মাছের গায়ে কোন ক্ষত বা ঘাজনিত লাল দাগ দেখা যায় তবে এটি নিশ্চিত করে যে মাছটি এই রোগে আক্রান্ত। সাধারণত এই ঘা মাছের পিঠ, লেজের গোড়া, ও মুখের দিকেই বেশি হয়ে থাকে।  

>> কোন মাছে কত প্রোটিন | জেনে নিন প্রোটিন যুক্ত মাছের তালিকা!

প্রতিকার 

১. ক্ষত রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথেই আক্রান্ত মাছ পুকুর থেকে দ্রুত তুলে অন্ন স্থানে নিতে হবে। 

২. ১০০ গ্রাম লবণ ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। রোগাক্রান্ত মাছ ৫ থেকে ১০ মিনিট লবণমিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে পুনরায় পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে।

৩. প্রতি বছর আশ্বিন মাসের শেষ দিকে অথবা কার্তিক মাসের প্রথম দিকে ক্ষত রোগ প্রতিরোধে পুকুরে প্রতি ১ কেজি হারে পাথুরে চুন ও ১ কেজি হারে লবণ দিতে হবে।

পেট ফোলা রোগ

মাছের পেট ফোলা রোগে সাধারণত রুই জাতীয় মাছ, শিং-মাগুর ও পাঙ্গাশ মাছ বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। লক্ষণপেট ফোলা রোগাক্রান্ত মাছের দেহের রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়। অনেক সময় মাছের পেট ফুলে থাকে পানি জমে থাকার জন্য। পেট ফোলা রোগে আক্রান্ত মাছ অল্প সময়ে মারা যেতে পারে। 

প্রতিকার

প্রতিকার হিসেবে প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে মাছের খাদ্যের সঙ্গে ফিশমিল ব্যবহার করা জরুরি। এছাড়া পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনসহ মাছকে নিয়মিত সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে।

পুষ্টির অভাব

এখন প্রায়ই মাছের পুষ্টির অভাব জনিত রোগ দেখা দেয়। পুকুরে চাষযোগ্য যেকোনো মাছই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবে মাছ অন্ধত্ব রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়াও ভিটামিন এ, ডি এবং কে-এর ঘাটতি থাকলে মাছের হাড় বাঁকা রোগ দেখা দিতে পারে। মাছের খাবারে আমিষের ঘাটতি দেখা দিলেও মাছ নানা রোগের কবলে পড়ে। 

প্রতিকার  

এসব রোগে আক্রান্ত মাছকে খাবারের সাথে প্রয়োজনীয় মাত্রায় সুনির্দিষ্ট ভিটামিন ও খনিজ লবণ মিশিয়ে খাওয়ানো হলে যথাশিগগিরই মাছের শারীরিক অবস্থার উন্নতি সম্ভব। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাছের রোগ ও প্রতিকার করে মাছ চাষ করা অনেকাংশেই সম্ভব। 

>> বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ যেভাবে করবেন-বিস্তারিত জেনে নিন!

উপসংহার

মাছ চাষ পরিপূর্ণ ভাবে করার জন্য অবশ্যই সঠিক নিয়ম মেনে চলতে হবে। তাই মাছের রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে আগে থেকেই জানুন এবং যথাযথ ব্যবস্থা সময়মতো গ্রহণ করুন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top