ভাইরাস উদ্ভিদের কোন কোন রোগ সৃষ্টি করে

ভাইরাস উদ্ভিদের কোন কোন রোগ সৃষ্টি করে জেনে নিন!

বিভিন্ন গাছপালা, বা শাক সবজি পালন শুধুমাত্র পেশাগত ব্যাপার নয়, অনেকের প্রিয় শখও বটে। শখের বশে শাক সবজির চাষ করতে গিয়ে অনেক সময় হতাশ হতে হয়, কারণ বিভিন্ন রেগে আক্রান্ত হয়ে এগুলো নষ্ট হয়ে যায়।

ভাইরাস মানুষ বা পশুপাখির বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ি, এখন প্রশ্ন হলো, ভাইরাস উদ্ভিদের কোন কোন রোগ সৃষ্টি করে বা আদৌও কোন রোগ সৃষ্টি করে কি?

এর উত্তর হলো, ভাইরার উদ্ভিদের বিভিন্ন রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ি। ভাইরাসের কারণে বিভিন্ন গাছ বা ফসল চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বা মারা যেতে পারে। এই লেখায় আমরা জানবো ভাইরাস উদ্ভিদের কোন কোন রোগ সৃষ্টি করে এবং কিভাবে সেগুলো সমাধান করা যেতে পারে।

ভাইরাস উদ্ভিদের কোন কোন রোগ সৃষ্টি করে

রোগ সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন ভাইরাস দায়ি এবং আলাদা উদ্ভিদের জন্য আলাদা ভাইরাস রোগ সৃষ্টি করে। নীচে আমরা আলোচনা করবো কোন কোন ভইরাস উদ্ভিদের কোন কোন রোগ সৃষ্টি করে

আলুর মোজাইক রোগ

ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি হওয়া আলুর মোজাইক রোগের কারণে ফলন ব্যাপকভাবে কমে যেতে পারে, পাশাপাশি গাছ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই রোগে আক্রান্ত হলে গাছের পাতা বিকৃত হয়ে ছোট হয়ে যায় এবং পাতায় বিভিন্ন ধরেণের দাগ পড়ে। লতা দুর্বল হয়ে ঝুলে পড়ে, পরবর্তীতে গাছ মারা যায়। ভাইরাসে আক্রান্ত আলুর আকার ছোট হয়ে যায় যেটা ফলন কম হওয়ার অন্যতম কারণ।

আলুর জাতের ভিন্নতার কারণে লক্ষণও ভিন্ন হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হলো- পাতার আকার ছোট ও বিভিন্ন দাগ। পাতা কোকড়ানো, মোজাইক রঙের বা শুধুমাত্র হলুদ রঙের পাতা দেখা যায়। পাতা খসখসে হয়ে যায়।

টমেটোর পাতা কোড়ানো রোগ

টমেটোর পাতা কোকড়ানো রোগ সাধারণত ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। সাধারণত সাদা মাছি এই রোগের বাহক হিসাবে কাজ করে এবং আক্রান্ত পাতা থেকে সুস্থ গাছে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে।

এই রোগে আক্রান্ত হলে গাছের বৃদ্ধি থেমে গিয়ে গাছ খর্বাকৃতির হয়ে যায়। পাতার গায়ে ভাঁজ সৃষ্টি হয় যেগুলো অনেকটা ঢেউ এর মতো দেখতে, তাছাড়া পাতা ভীষণভাবে কুকড়িয়ে যায়। আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে পাতা মারা যেতে থাকে এবং গাছ সম্পূর্ণরুপে ফুল বা ফল ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

ধান গাছের টুংরো রোগ

টুংরো একটি ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ। ধান গাছের যে কোন বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে, তবে যত ছোট অবস্থায় এতে আক্রান্ত হয় তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

প্রথমদিকে শিরা বরারব লম্বালম্বি হালকা হলুদ রঙের দাগ দেখা যায় এবং আক্রান্ত গাছগুলো অন্য গাছের তুলনায় ছোট দেখায়। শুরুতে বিক্ষিপ্তভাবে দুই একটি গাছে এই লক্ষণ দেখা গেলেও খুব দ্রুত এটি সমস্ত ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে। 

তবে ধান গাছের পাতা হলুদ হওয়া মানেই সবসময় টুংরো রোগ নয়। অনেক সময় নাইট্রোজেন, সালফার বা গন্ধক সারের অভাব, জমিতে পচা পানি, পানির অভাব, শীতের প্রকোপ বা অন্যান্য কারণেও ধান গাছের পাতা হলুদ হতে পারে। কিন্তু পার্থক্য হলো এগুলোতে সমস্ত জমিতে একইভাবে পাতা হলুদ হয়। কিন্তু টুংরো রোগে বিক্ষিপ্ত বা এলোমেলোভাবে হলুদ হতে দেখা যায়।

শীমের মোজাইক রোগ

শীম গাছের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর এই মোজাইক রোগের কারণ ভাইরাস। সাধারণত গাছ বড় হয়ে ওঠার সাথে সাথে এই রোগের বিস্তার শুরু হয়। গাছের পাতাগুলোতে হলুদ রঙের দাগ পড়ে, পাতা হলুদ হয়ে যায় বা মোজাইকের মতো দাগ দেখা যায়।

জাবপোকা সাধারণত এই রোগের বাহক হিসাবে কাজ করে। মোজাইক রোগ দেখা দিলে দ্রুত এটি দমনের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন, তা না হলে সমস্ত ক্ষেতে ছড়িয়ে সব গাছ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

পেঁপের ভাইরাসজনিত পাতা কুচকানো রোগ

পেঁপে গাছ কিছুটা বড় হওয়ার পরে সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। প্রথমে পাতাগুলো কুচকে যেতে থাকে। পরবর্তীতে পাতাগুলো ধীরে ধীরে কুকড়ে একেবারে ছোট হয়ে যায় এবং হলুদ হয়ে মারা যায়। গাছের বৃদ্দি থেমে যায় এবং অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই গাছ মারা যায়। 

এই রোগে আক্রান্ত হলে পেঁপে চাষে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সাধারণত সাদা মাছি এবং জাবপোকা এই রোগের বাহক। তাই এই ভাইরাসজনিত পাতা কুচকানো রোগ থেকে রক্ষা করতে সাদা মাছি এবং জাবপোকা নিধনে সক্রিয় থাকবেন।

ফুলকপির ইয়োলো ভাইরাস রোগ

একই জমিতে প্রতিবছর বা বারবার কপি জাতীয় ফসল চাষ করার কারনে এই রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়। ভাইরাসের আক্রমণে সৃষ্টি হওয়া এই রোগে গাছের পাতা প্রথামে হালকা হলুদ হয়। পরে পস্পূর্ণ পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। গাছে ফুল ধরে না এবং ধীরে ধীরে গাছ মারা যেতে পারে। করলা চাষ পদ্ধতি জেনে নিন!

মিষ্টি কুমড়ার মোজাইক রোগ

এই রোগের ক্ষেত্রেও সাদা মাছি ও জাব পোকা বাহকের ভূমিকা পালন করে। ভাইরাস দ্বারা সৃষ্টি হওয়া এই রোগে মিষ্টি কুমড়া গাছের পাতায় মোজাইকের মতো দেখতে দাগ দেখা দেয়। পাতা কুকড়ে যায় এবং ঢেউ এর মতো ভাজ হয়ে যায়। পাতার রং হলুদ হয়ে যায় এবং একটি পর্যায়ে গাছ মারা যায়। 

উরোরোক্ত রোগগুলো ছাড়াও ভাইরাসের কারণে আরো অনেক ধরণের রোগ সৃষ্টি হতে পারে। আপনি যদি ভাইরাস উদ্ভিদের কোন কোন রোগ সৃষ্টি করে এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত আকারে জানতে চান তাহলে কমেন্ট সেকশনের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আমরা আপনাকে সবরকমভাবে সহায়তা করবো।

উদ্ভিদের ভাইরাসজনিত রোদ দমনের পদ্ধতি

আমরা আলোচনা করেছি ভাইরাস উদ্ভিদের কোন কোন রেগ সৃষ্টি করে। কিন্তু এই রোগগুলো থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি- এটাই ভাবছেন? আচ্ছা, এই ব্যাপারে কিছুটা ধারণা দিচ্ছি।

 সরাসরি ভাইরাস দমন করে এমন ঔষধ পাওয়া যায় না, তাই আপনাকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন-

  1. বাগান বা ক্ষেত সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
  2. নিয়মিত বিভিন্ন ফলের গাছগুলোর ডালপালা ছেটে দিন।
  3. বাহক কীট-পতঙ্গের কারণে এই রোগগুলোর বিস্তার ঘটে। তাই বাহক পোকা দেখা দিলে দ্রুত সেগুলো নিধনের প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা বা কীটনাশক ব্যবহার করুন।
  4. আক্রান্ত গাছের পাতা বা প্রয়োজনে সম্পূর্ণ গাছটি তুলে মাটিতে পুতে ফেলুন। 
  5. ক্ষেতে পরপর একই ফসলের চাষ করবেন না।

শেষ কথা

ভাইরাসের কারণে ফসলের চাষে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই ভাইরাস উদ্ভিদের কোন কোন রোগ সৃষ্টি করে সেটি সঠিকভাবে জানা থাকা দরকার। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে এগুলো থেকে ফসলকে রক্ষা করা সম্ভব। গরুর কোন রোগের কি ঔষধ জেনে নিন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top